মিস মারপল এরকম কাজ আগেও অনেকবার করেছেন। বললেন মেলচেট।
হুগো ম্যাকলিন আর অ্যাডিলেড জেফারসন সমুদ্রের দিকের পথ ধরে এগিয়ে গেছে।
হোটেলের বারান্দায় বসেছিলেন মিস মারপল আর মিসেস ব্যান্ট্রি।
–অ্যাডিলেড জেফারসন এতক্ষণ আমাকে বলছিল তার স্বামী সব টাকাপয়সা খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছিল। কিন্তু মিঃ জেফারসনকে তারা কিছুই বুঝতে দেয়নি। বললেন মিসেস ব্যান্ট্রি।
-আর কি বলছিল। জানতে চাইলেন মিস মারপল।
–বলছিলেন হুগো ম্যাকলিন তাকে বিয়ে করতে চায়।
–হ্যাঁ বুঝতে পারছি। ওর হাবভাব দেখেই মিঃ জেফারসেন বুঝতে পেরেছিলেন। ব্যাপারটা তার পছন্দ না। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগাতে চেয়েছিল রুবি কীন।
.
স্যার হেনরি ক্লিদারিং ঠিক সেই মুহূর্তেই ম্যাককে বলছিলেন, তুমি বরাবরই একজন জুয়াড়ি। এই করেই ডুবেছ।
-জুয়াড়ি হতে পারি তবে খুনী নই। আমি কাউকে গলা টিপে হত্যা করতে পারি না। তবু জানি পুলিসের চোখে আমিই এক নম্বর আসামী। তবে আঘাতটা মিঃ জেফারসনের ভালই লেগেছে। অন্ততঃ আসল কথাটা জানার চেয়ে ভাল।
চমকে উঠলেন স্যার হেনরি ক্লিদারিং। বললেন, আসল কথাটা জানা–একথার অর্থ কি?
-আমার দৃঢ় বিশ্বাস রুবি কীন গত রাতে অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। আমার শ্বশুর তার এই ছলনা জানতে পারলে সহ্য করতে পারতেন না। তিনি মেয়েটিকে নিষ্পাপ নিরীহ ভেবে নিয়েছেন। আমার আর অ্যাডির যে এই বন্দিজীবন, বইতে পারছিলাম না আমরা তা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বলেই রুবি কীনকে আঁকড়ে ধরতে চাইছিলেন।
.
১৩.
ডেনহ্যামের অতি পরিচিত ডাক্তার মিঃ মেটকাফ। তিনি কনওয়ে জেফারসনের চিকিৎসকও। সুপারিন্টেন্টে হার্পার তার সঙ্গে দেখা করলেন মিঃ জেফারসনের শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে জানবার জন্য।
ডাঃ মেটকাফ জানালেন; মিঃ জেফারসনের হৃদপিণ্ড, ফুসফুস্; রক্তচাপ–সবই অত্যন্ত চাপের মধ্যে রয়ে গেছে। মেরুদণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত। কোন রকম পরিশ্রম বা আঘাত বা আচমকা ভয়–এ ধরনের কিছু হলে তার মৃত্যু ঘটে যাওয়া সম্ভব।
ডাঃ মেটকাফ আরও জানালেন যে আগে মিঃ জেফারসন খুব শক্তিমান পুরুষ ছিলেন। এখনও তার দুই হাত ও কাঁধে যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে।
হার্পার বললেন, আপনার কথার সূত্র ধরে তাহলে ধরে নিতে পারি যে কেউ হয়তো ধরে নিয়ে থাকতে পারে যে মেয়েটির মৃত্যু সংবাদে মানসিক আঘাতজনিত কারণে তার মৃত্যু ঘটতে পারে।
–হ্যাঁ, সেটা সহজেই হতে পারে। বললেন ডাঃ মেটকাফ।
দেখা যাক
বলে বিদায় নিলেন হার্পার।
ইতিমধ্যে হাপার কয়েকজন গার্ল গাইডকে চিহ্নিত করেছিলেন। তারা পামেলা রীভসের ঘনিষ্ঠ ছিল। বন্ধুর ব্যাপারে কোন কথা তাদের জানা থাকতে পারে সন্দেহ করা হচ্ছিল।
পথ চলতে চলতে আলোচনা করছিলেন হার্পার আর মিঃ ক্লিদারিং।
–মিস মারপলকে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে অনুরোধ জানাব। তিনি মনে হয় এ ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করতে পারেন।
–মনে হয় আপনি ঠিকই ভেবেছেন। ওঁর নজর খুব তীক্ষ্ণ একথা ঠিক।
-আর একটা কথা স্যার। আমি চাইছিলাম আপনি যদি একবার মিঃ জেফারসনের ব্যক্তিগত পরিচারক এডওয়ার্ডকে একটু নাড়াচাড়া করে দেখেন।
তার কাছে কি পাওয়া যাবে বলে ভাবছেন?
–সে এই ঘটনা নিয়ে কি ভাবছে, পরিবারের সকলের পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক কেমন, রুবি কীন সম্পর্কে তার ধারণা কি রকম–এসব ভেতরের কথা যেমন খুশি প্রশ্ন করে আপনি জেনে নিতে পারেন। আপনি জেফারসনের বন্ধু, আপনাকে সে মন খুলে জানাতে ভরসা পাবে।
দুজনে কথা বলতে বলতে মিস মারপলের টেবিলে গিয়ে বসলেন। তিনি খুশি হয়ে স্বাগত জানালেন। হার্পার প্রস্তাব দিতেই তিনি মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে সম্মত হলেন।
স্যার হেনরি বললেন, ওহো, আপনাকে বলা হয়নি মিস মারপল-হার্পার জানিয়েছেন রুবি কীনের বাজে কাগজের ঝুড়িতে কাটা নখের কিছু টুকরো পাওয়া গেছে।
খুশি হয়ে মিস মারপল বললেন, তাহলে যা ভেবেছি তাই
-কি ভেবেছিলেন আপনি মিস মারপল? সুপারিন্টেন্টে হার্পার নিতে চাইলেন।
–সাধারণতঃ যেসব মেয়ে কড়া রকমের মেকআপ করে তাদের নখ বড় থাকে। রুবি কীনেরও বড় নখ ছিল। একটা ভেঙ্গে গিয়েছিল। সেই কারণেই সে সব নখ সমান করে নেবার জন্য বাকিগুলোও কেটে ফেলে। এটাই স্যার হেনরিকে দেখতে বলেছিলাম।
–তাহলে এবিষয়ে আপনার ব্যাখ্যা কি। জানতে চাইলেন হাপার।
–আপাতত কোন ব্যাখ্যাই নেই। তবে এটা যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝতে পারছি। বললেন মিস মারপল।
.
১৪.
রেমণ্ডস্টারের টেনিস প্রশিক্ষণ পর্ব চলছিল তারের জালে ঘেরা জায়গাটায়।
শক্তসমর্থ মাঝবয়সী এক মহিলা রেমণ্ডের কাছে তালিম নিচ্ছিলেন। এবারে হোটেলের দিকে চলে গেলেন। বেঞ্চে তিনজন দর্শক বসেছিল।
কাজটা বেশ একঘেয়ে। বললেন মিস মারপল।
স্যার হেনরি রেমণ্ডকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। কোন জবাব দিলেন না। সুপারিন্টেন্টে হার্পার উঠে পড়লেন। বললেন, মিস মারপল, আমি এখন উঠি, আপনাকে একঘণ্টা পরে ডেকে নেব।
–বেশ, আমি তৈরি থাকব।
হার্পার বিদায় নিলে রেমণ্ড সামনে এসে বেঞ্চিতে বসল।
রেমণ্ড একজন নৃত্যশিল্পী আর পেশাদার টেনিস কোচ। তাকে লক্ষ্য করে স্যার হেনরি খুশি হতে পারলেন না।
র্যামন…রেমণ্ড…আপনার আসল নামটা কি? আচমকা প্রশ্ন করে বসলেন স্যার হেনরি।