–কে খুন করেছে জানতে পেরেছ নাকি? মিসেস ব্যান্ট্রি আগ্রহের সঙ্গে তার দিকে ঝুঁকে বসলেন।
–একটা স্মৃতিচিহ্ন পেয়েছি।
বলতে বলতে পিটার পকেট থেকে একটা দেশলাইয়ের বাক্স বার করে সেটা খুলে দেখাল।
–দেখছেন একটা নখের টুকরো–সেই রুবি মেয়েটার নখ। একটা দারুণ স্মৃতিচিহ্ন, তাই?
–এটা কোথায় পেয়েছ? মিস মারপল বললেন।
রুবির নখ যোসির শালে আটকে গিয়েছিল। তাই ওটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। মা ওটা কেটে দিয়েছিলেন। আমাকে নখের টুকরোটা দিয়ে বাজে কাগজের ঝুড়িতে ফেলে দিতে বলেছিলেন। আর একটা জিনিসও পেয়েছি।
একটা খাম থেকে অনেকটা বাদামী রঙের ফিতের মত জিনিস বার করে দেখলে সে।
–এটা হল জর্জ বার্টলেট নামের লোকটার জুতোর ফিতে। দরজার সামনে পড়ে থাকতে দেখে তুলে নিয়েছি–তুচ্ছ জিনিসও পরে অনেক কথা বলতে পারে।
–কি কাজে লাগতে পারে মনে কর তুমি? জানতে চাইলেন মিস মারপল।
–ওই তো শেষ বার রুবীকে দেখেছিল। লোকটার চাল-চলনও কেমন সন্দেহজনক। আরে ওই তো হুগো কাকা-মা ঝামেলায় পড়লেই তাকে ডেকে পাঠান। আজও খবর দিয়েছিলেন। হাই যোসি”..
বারান্দা পার হয়ে আসছিল যোসেফাইন টার্নার। মিসেস ব্যান্ট্রি আর মিস মারপলকে দেখে কেমন চমকে গেল।
–কেমন আছেন মিস টার্নার? বললেন মিসেস ব্যান্ট্রি, আমরা একটু গোয়েন্দাগিরি করতে এলাম এখানে।
–আশা করি কিছু মনে করবেন না। আপনাকে খোলাখুলি একটা প্রশ্ন করতে চাই।
নিশ্চয়ই করবেন। কিছুটা অখুশি হয়েই বলল যোসি।
-ওই ব্যাপারটা নিয়ে আপনার সঙ্গে কি মিসেস জেফারসন ও মিঃ গ্যাসকেলের কোন তিক্ততা হয়েছিল? ওই খুনের ব্যাপারটা বলছি না আমি।
–ব্যাপারটার জন্য তারা আমাকেই দায়ী করছেন রুবিকে আমিই তো এনেছিলাম। কিন্তু এরকম কিছু যে হতে পারে আদৌ আমার মনে হয়নি।
–হ্যাঁ, ব্যাপারটা আপনার পক্ষে খুবই অস্বস্তিকর। বললেন মিস মারপল।
–এটা ভাগ্য ছাড়া আর কি বলা যায় বলুন। ভাগ্যের সহায়তা যে কেউই পেতে পারে।
কথা শেষ করে প্রত্যেকের মুখের দিকে সপ্রশ্ন দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে গটগট করে হোটেলে ঢুকে গেল মিস টার্নার।
-নাঃ, ও খুব করেছে বলে মনে হয় না। বলে উঠল পিটার।
–আমি ভাবছি নখটা নিয়ে, বললেন মিস মারপল।
–নখ? আশ্চর্য হলেন মিঃ হেনরি।
–ওর নখ খুব ছোট করে কাটা ছিল। জেনও তাই বলেছে। বললেন মিসেস ব্যান্ট্রি। তবে এ ধরনের মেয়েদের তো বড় নখই রাখতে দেখি।
–ওর ঘরে আরও কাটা নখের টুকরো পাওয়া গেলে বোঝা যাবে, একটা নখ ভেঙ্গে যাওয়ায় অন্যগুলোও সমান করে কেটে নিয়েছিল। বললেন মিস মারপল।
-সুপারিন্টেডেন্ট হার্পারকে প্রশ্ন করলে জানা যাবে। তিনি তো আবার একটা অ্যাকসিডেন্টের তদন্ত করতে চলে গেছেন। বললেন স্যার হেনরী।
–অ্যাকসিডেন্ট? চমকে উঠলেন মিস মারপল।
–হ্যাঁ, একটা খনির খাদে জ্বলন্ত একটা গাড়ি দেখা গেছে।
–গাড়িতে কেউ ছিল?
–আশঙ্কা হচ্ছে ছিল।
–আমার ধারণা দেহটা সেই গার্ল গাইডের–ওর নাম পামেলা রীভস।
–আশ্চর্য কাণ্ড। আপনি একথা বলছেন কি করে?
রেডিওতে শুনেছিলাম, গতরাত থেকে মেয়েটা নিরুদ্দেশ। ওর বাড়ি কাছেই ডেনলে ভেলে। তাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল ডেনবারি ডাউনে–গার্ল গাইড র্যালিতে। ডেনমাউথ হয়েই তার বাড়ি ফেরার কথা। আমার ধারণা মেয়েটা এমন কিছু দেখে বা শুনে থাকবে যা খুনীর কাছে বিপজ্জনক ছিল। সেকারণেই তাকে সরানো দরকার হয়ে পড়েছিল। যোগসূত্রটা খুবই পরিষ্কার।
স্যার হেনরি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তার মানে বলছেন, এটা দু-নম্বর খুন?
–হ্যাঁ। তৃতীয় খুনের ঘটনা ঘটলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
–তৃতীয় একটা খুনও হতে পারে বলছেন?
–আমার মনে হয় খুবই সম্ভব।
–কে খুন হতে পারে, তাও কি আপনি জানেন মনে করেন?
–জানি বইকি। বললেন মিস মারপল।
.
১২.
সুপারিন্টেন্ডেন্ট হার্পার মাচ বেনহ্যামে কর্নেল মেলচেটের সঙ্গে পরামর্শ করতে এসেছেন।
-রুবি কীন আর পামেলা রীভস এই দুটো মৃত্যু আমাদের এখন মোকাবেলা করতে হবে। বললেন মেলচেট। একটা জুতো পোড়েনি, সেটা দেখেই ওকে সনাক্ত করা সম্ভব হল। নৃশংস, ভয়ঙ্কর কাজ।
একটু থেমে আবার বললেন মেলচেট, ডাঃ হেডক জানিয়েছেন গাড়িতে আগুন লাগার আগেই মারা গিয়েছিল মেয়েটা। তার মাথায় আঘাত করা হয়েছিল সম্ভবত।
শ্বাসরোধ করেও মারা যেতে পারে।
-এখন আমাদের দেখতে হবে দুটো খুনের মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কিনা। বললেন মেলচেট।
মেয়েটা ডেনবারি ডাউনসে গার্ল গাইড র্যালিতে যোগ দিয়েছিল। তার সঙ্গীরা মেডচেষ্টারের বাসে উঠে গিয়েছিল। একজন সঙ্গী জানিয়েছে পামেলা রীভস ডলওয়ার্থে যাওয়ার জন্য ডেনমাউথে যাবে। সর্টকাট করবার জন্যই সে দুটো মাঠের মধ্য দিয়ে গলি আর ফুটপাথ ধরে এগিয়েছিল। ওই গলিটা ডেনমাউথে ম্যাজেস্টিক হোটেলের পশ্চিম দিক ঘেঁষে চলে গেছে। সম্ভবত ওই পথেই সে কিছু দেখে থাকবে যা রুবি কীনের সঙ্গে জড়িত। ফলে নিরপরাধ স্কুলের মেয়েটাকে খুন হতে হয়েছে।
-রুবি কীনের সম্পর্কিত যদি কিছু ঘটে থাকে তা ঘটেছিল রাত প্রায় এগারোটার কাছাকাছি। এতরাতে স্কুলের মেয়েটার ম্যাজেস্টিক হোটেলের কাছে যাবার কি কারণ থাকতে পারে?
–মিস মারপল কিন্তু ঘটনা শুনেই দুটো ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। তিনি প্রশ্ন করেছিলেন গাড়িতে গার্ল গাইড মেয়েটিরই দেহ পাওয়া গেছে কিনা। অসম্ভব বুদ্ধিমতী মহিলা। বললেন হাপার।