-হ্যাঁ। শুনেছি।
–মিসেস ব্যান্ট্রিও এসেছেন আমার সঙ্গে।
–ওহো। ওর স্বামীও আছেন? আপনাকে তাহলে ইতিমধ্যেই ফিল্ডে নামিয়ে দিয়েছেন?
–একরকম তাই বলতে পারেন। বললেন মিস মারপল।
স্যার হেনরি এরপর সমস্ত ঘটনার বর্ণনা দিলেন। মিস মারপল মনোযোগ দিয়ে শুনে গেলেন। পরে আক্ষেপের সুরে বললেন, খুবই দুঃখজনক কাহিনী। কিন্তু ওই মেয়েটার ওপরে হঠাৎ তিনি এমন স্নেহপ্রবণ হয়ে উঠলেন কেন? কোন বিশেষ
–সম্ভবতঃ তেমন কিছু নয়। বললেন স্যার হেনরি। তিনি চাইছিলেন এমন একটি ছোট সুন্দর মেয়ে যে তারই মেয়ের স্থান নিতে পারে, আর মেয়েটি সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগিয়ে নিজেকে যোগ্য করার চেষ্টা করে চলেছিল।
–সবই বুঝতে পারছি। রুবি কীনের মাসতুতো বোনকে আজ সকালেই গ্যামিংটন হলে দেখেছি আমি। বেশ ভাল মেজাজের উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণী বলেই মনে হয়েছে তাকে। কিন্তু যাই হোক, আমার ধারণা জটিলতা গড়ে উঠেছিল মিঃ জেফারসনের নিজের ঘরেই।
-আপনি কি বোঝাতে চাইছেন বুঝতে পারছি না।
দেখুন, ওরা তিনজন শোকার্ত মানুষ একই বাড়িতে বাস করে চলেছেন। তাদের মধ্যে যোগসূত্রও একটি বিয়োগান্ত ঘটনা। তবু, দেখুন, সময় হল সবচেয়ে বড় আঘাত নিবারক। এই অবস্থায় মিঃ গ্যাসকেল এবং মিসেস জেফারসন হয়তো কিছু অস্থিরতায় ভুগতে শুরু করেছিলেন। তাদের দুজনেরই বয়স কম। আর এই ধরনের কিছু উপলব্ধি করে মিঃ জেফারসনও কিছু অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তার পক্ষে নিজেকে অবহেলিত ভাবা অবাস্তব মনে করি না। সেকারণেই আমার মনে হয়, এই ঘটনার মধ্যে এমন কোন এক সম্ভাবনা রয়েছে যে এই অপরাধের সমাধান হয়তো কোনদিনই সম্ভব হবে না।
তবু আমি চাই সত্য প্রকাশ হওয়া দরকার। মৃতদেহটা অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার কর্নেল ব্যান্ট্রির লাইব্রেরী ঘরে পাওয়া গিয়েছিল। তিনি অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ মানুষ। ইতিমধ্যেই চারপাশের গুজবের প্রভাব তার ওপর পড়তে শুরু করেছে। তাই অবিলম্বে সত্য প্রকাশ হওয়া দরকার। আর এই জন্যেই আমি ডলির সঙ্গে এখানে আসতে রাজি হয়েছি।
মৃতদেহটা ওদের বাড়িতে কেন পাওয়া গেল, এসম্পর্কে নিশ্চয়ই আপনার কোন ব্যাখ্যা আছে?
-আমার ধারণা একটা গভীর গোপন পরিকল্পনা গড়ে তোলা হয়েছিল। আর পরিকল্পনা মাঝ পথে ভেস্তে গিয়েছিল।
স্যার হেনরি অবাক হলেন। তিনি কয়েক মুহূর্ত মিস মারপলের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
–পরিকল্পনা ভেস্তে যায় কেন?
–অদ্ভুত শোনালেও এমন ঘটনা কখনও কখনও ঘটে–মানুষের ভুলপ্রবণতাই যার কারণ হয়। ওইতো মিসেস ব্যান্ট্রি এসে গেছেন।
২. মিসেস ব্যান্ট্রি অ্যাডিলেড
১১.
মিসেস ব্যান্ট্রি অ্যাডিলেড জেফারসনের সঙ্গে ছিলেন। তিনি এসে স্যার হেনরি ও মিস মারপলের সঙ্গে মিলিত হলেন।
মার্ক গ্যাসকেল বারান্দায় কোণের দিকে একাই বসেছিলেন। চারজনে বেরিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে যোগ দিলেন।
মিস মারপল ছাড়া অপরাপর সকলেই পুরনো বন্ধু। কাজেই মার্ক গ্যাসকেল আর এডিলেড জেফারসন মিস মারপলের পরিচয় বন্ধুদের কাছ থেকেই জানতে পারলেন।
ব্যান্ট্রি বললেন, মিস মারপল অপরাধের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। তিনি এব্যাপারে আমাদের সাহায্য করতে আগ্রহী।
আমার শ্বশুরমশায় পঞ্চাশ হাজার পাউণ্ড ওই হাবাগোবা মেয়েটাকে দিতে চেয়েছিলেন, ভাবতে পারেন? মার্ক গ্যাসকেল বললেন। অ্যাডি আর আমি দুজনেই মেয়েটার মৃত্যু কামনা করেছিলাম।
স্যার হেনরি বললেন, ব্যাপারটা জানতে পেরে আপনারা কনওয়েকে কিছু জানাননি?
–আমাদের আপত্তি জানাবার অধিকার কোথায়? টাকাটা ওর। তবে ওই রুবিকে আমরা ভাল চোখে দেখতাম না।
–সবকিছুর জন্য যোসিই দায়ী। বললেন মার্ক, ওই রুবিকে এখানে নিয়ে এসেছিল। অবশ্য এটাও ঠিক, আমার স্ত্রী রোজামণ্ডের সঙ্গে ওর যেন কি রকম মিল ছিল। আর এজন্যই ওর প্রতি বুড়োর টান জন্মেছিল।
কথা বলতে বলতে মার্ক লাউঞ্জের সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, দেখ অ্যাডি কে এসেছে।
মিসেস জেফারসন ঘুরে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। পরে এগিয়ে গেলেন দীর্ঘকায় মাঝবয়সী এক ভদ্রলোকের দিকে।
–হুগো ম্যাকলীন মনে হচ্ছে না? মিসেস ব্যান্ট্রি বললেন।
–অবশ্যই হুগো ম্যাকলীন ওরফে উইলিয়ম ডবিন। তার আশা অ্যাডি একদিন ওকে বিয়ে করবে। অ্যাডি আজই বলেছিল তাকে টেলিফোন করবে।
এই সময় এডওয়ার্ড এগিয়ে এসে মার্কের পাশে দাঁড়িয়ে জানাল, মিঃ জেফারসন আপনাকে এখুনি একবার ডেকেছেন।
মার্ক উঠে দাঁড়াল সঙ্গে সঙ্গে। তারপর সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
–খুবই হীনমনা মানুষ, বললেন মিস মারপল, পুরুষ মানুষ হিসেবে আকর্ষণীয় সন্দেহ নেই কিন্তু মগজে বুদ্ধির বড় অভাব রয়েছে।
এই সময় দেখা গেল সাদা ফ্ল্যানেলের পোশাকপরা এক সুপুরুষ তরুণ বারান্দায় উঠে এল। অ্যাডিলেড আর হুগো ম্যাকলীনের দিকে তাকাল।
স্যার হেনরী বললেন, ইনি হলেন রেমণ্ডস্টার, রুবী কীনের নাচের জুড়ি। যোগসূত্র এর সঙ্গেও কিছুটা রয়েছে। ভাল টেনিস খেলোয়াড়।
মিস মারপল সাগ্রহে তার দিকে তাকালেন।
এই সময় বাচ্চা কারমেলি বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে করতে তাদের দিকে এগিয়ে এল। স্যার হেনরির দিকে তাকিয়ে সে বলল, আপনি নিশ্চয়ই একজন গোয়েন্দা। ওই সুপারিন্টেন্ডেন্টের সঙ্গে আপনাকে কথা বলতে দেখেছিলাম। জানেন, আমি খুঁজছি, খুনের যদি কোন সূত্র পাওয়া যায়।