পর পর কয়েকটা বল সে হিট করল। একটা বল রেলবাঁধের পাশে গিয়ে পড়ল। কয়েকটা পড়ল এপাশ ওপাশে ঘাসের মধ্যে।
বল খোঁজার অছিলায় বাঁধের অনেকটা অংশ অনুসন্ধান করার সুযোগ পেল লুসি। তবে সন্দেহজনক কিছু নজরে পড়ল না।
পরদিনও একই কৌশলে সে বাঁধের নিচে খোঁজাখুঁজি করল। কাঁটাঝোপের মাথায় ফারের একটা ছেঁড়া টুকরো তার নজরে পড়ল। রঙটা ফ্যাকাসে বাদামী। পকেটে ছোট্ট কাঁচি নিয়ে এসেছিল। ফারের টুকরোটার অর্ধেকটা কাঁচি দিয়ে কেটে পকেটে পুরে নিল।
বাঁধের ঢাল বেয়ে নামার সময় নিচে লম্বা ঘাসের মধ্য দিয়ে একটা অস্পষ্ট পথের রেখা নজরে পড়ল। কিছুদিন আগে কেউ ঘাসের ওপর দিয়ে যাওয়ায় এমনটা হতে পারে, সে ভাবল।
বাঁধের নিচে এসে আর একটা জিনিস আবিষ্কার করল সে। এনামেলে জড়ানো খানিকটা জমানো পাউডার। জিনিসটা রুমালে জড়িয়ে পকেটে ঢোকাল সে।
উৎসাহিত হয়ে আরো কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল লুসি। কিন্তু আর কিছু পাওয়া গেল না।
পরদিন বিকেলে মাসীমাকে দেখতে যাচ্ছে বলে গাড়ি নিয়ে বেরলো লুসি। মাসিডন রোডের পাশে চার নম্বর বাড়িটার সামনে এসে বেল বাজাল।
দীর্ঘাঙ্গী বিষণ্ণ চেহারা, মাথায় পাকা চুলের স্তূপ এক মহিলা দরজা খুলে তাকে মিস মারপলের ঘরে পৌঁছে দিল।
দরজা বন্ধ করে দিয়ে একটা চেয়ারে বসল লুসি। কিছু জিনিস পেয়েছি। মনে হচ্ছে আপনার অনুমান ঠিক।
বলতে বলতে লুসি পকেট থেকে আবিষ্কৃত জিনিসগুলো বার করল। কিভাবে এগুলো পাওয়া গেল সেই বিবরণ শোনাল।
ফারের টুকরোটা হাতে নিয়ে মিস মারপল বললেন, মেয়েটির গায়ে হালকা রঙের ফারকোট ছিল, বলেছিল এলসপেথ। সস্তা পাউডারের কৌটোটা সম্ভবত কোটের পকেটে ছিল। বাঁধের ঢালে দেহটা গড়িয়ে পড়ার সময় পকেট থেকে ছিটকে গিয়েছিল। সাধারণ জিনিস, তবে পরে কাজে লাগতে পারে। সবটুকু ফারই কি তুমি তুলে এনেছ?
–না, কাঁচি দিয়ে অর্ধেকটা কেটে এনেছি।
–বুদ্ধিমতী মেয়ে। প্রমাণ চাইলে পুলিসকে দেখানো যাবে।
–এই সূত্রগুলো নিয়ে পুলিসে যাবেন ভাবছেন?
–এখনই নয়। দেহটা খুঁজে বার করা দরকার।
-কিন্তু সেটা পাওয়া কি সম্ভব হবে? বোঝা যাচ্ছে দেহটা ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল আর লোকটা ব্র্যাকহ্যাম্পটনে নেমে পড়েছিল। পরে সেই রাত্রেই ঘটনাস্থলে ফিরে এসে মৃতদেহটা সে সরিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু সে তো দেহটা যে কোনো জায়গায় নিয়ে যেতে পারে?
-না, মিস আইলেসব্যারো, অন্য কোথাও নিয়ে যায়নি। সেরকম উদ্দেশ্য থাকলে খুনটা সে যে কোনো নির্জন জায়গায়ই করতে পারত।
-তাহলে বলছেন এটা পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?
–নিশ্চয়ই। হঠাৎ করে উত্তেজনার বশে খুনের ঘটনাটা ঘটে গিয়ে থাকলে দেহটা এমন কোনো জায়গায় ধাক্কা দিয়ে ফেলা হত না, যেখান থেকে সেটা পরে সরিয়ে ফেল যায়। খুব সুকৌশল পরিকল্পনা বর্তমান অপরাধের পেছনে কাজ করেছে।
রাদারফোর্ড হলের সমস্ত খুঁটিনাটি বিষয়, রেলের ধারে তার অবস্থান, সবকিছু লোকটির জানা ছিল। বাড়িটার অবস্থানই এমন যে বাইরের লোকজনের আনাগোনা থেকেও একরকম বিচ্ছিন্ন।
–ঠিকই বলেছেন, বলল লুসি, সকালের দিকে ব্যবসায়ীরা মালপত্র পৌঁছে দিয়ে যায়। ওইটুকুই যা শহরের সঙ্গে এবাড়ির সম্পর্ক। খুনী স্বচ্ছন্দেই রাদারফোর্ড হলে ফিরে এসে থাকতে পারে। মৃতদেহটা পরদিন সকালের আগে কারো নজরে পড়ার সম্ভাবনা ছিল না। সেটা সরিয়ে ফেলার জন্য যথেষ্ট সময় পায়।
-হ্যাঁ। কোনো এক পথে খুনী রাদারফোর্ড হলেই ফিরে এসেছিল। তারপর দেহটা উদ্ধার করে একটা পূর্ব নির্দিষ্ট জায়গায় নিয়ে গিয়েছিল। আমার ধারণা রাদারফোর্ড হলের খুব কাছাকাছি কোথাও নিয়ে গিয়ে কবরস্থ করা হয়েছে। মনে রেখো, পার্কের মধ্যে কাজটা করার ঝুঁকি ছিল। সহজেই কারো চোখে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। কবরটা সে আগেই খুঁড়ে রেখে থাকবে–আচ্ছা বাড়িতে কি কুকুর আছে?
–না।
-তাহলে তোমার কি মনে হয় কোনো আস্তাবলে কিংবা অব্যবহৃত কোনো ঘরে কবর দিতে পারে? দ্রুত কাজ শেষ করার পক্ষে জায়গাগুলো নিরাপদ। অনেক পুরনো বাড়ি, অব্যবহৃত অনেক ঘর পড়ে আছে, শুয়োরের আস্তানা, কারখানা ঘর–এসব জায়গায় সচরাচর কেউ যায় না। এছাড়া কোনো রডোডেনড্রনের ঝোপ কিংবা অন্য কোনো ঝোপের মধ্যেও ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে।
.
পরদিন বিকেলে লুসি খুব সতর্কতার সঙ্গে তার অনুসন্ধান কাজ শুরু করল। কিন্তু বিশেষ কিছু সংগ্রহ করতে পারেনি পরিবারের কিছু পুরনো সংবাদ ছাড়া।
বাগানের বৃদ্ধশালী হিলম্যানের সঙ্গে বাগানে দেখা হয়েছিল লুসির। বয়স হয়েছে বলে অনর্গল বকবক করে। কথা বলতে পেলে খুব খুশি হয়। লুসি এটা, ওটা প্রসঙ্গ তুলে তাকে বকবক করার সুযোগ দেয়।
হিলম্যান একসময় অনুযোগের সুরে বলতে থাকে, কর্তা তো টাকার পাহাড়ের ওপরে বসে আছেন। কিন্তু এক কানা কড়িও তার নিজের রোজগার না। সম্পত্তি করেছিলেন মিঃ ক্রাকেনথর্পের বাবা। নিজের ভাগ্য নিজেই গড়েছিলেন তিনি। এই বাড়িও তিনিই করেন। খরচের হাতও ছিল দরার। দুই ছেলের কোনোটিই তার মত করিৎকর্মা ছিল না। কিন্তু অক্সফোর্ডে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করেছিলেন তাদের। কিন্তু তারা কেউ বাপের ব্যবসার ধার দিয়েও গেল না। ছোটছেলে এক সুন্দরী অভিনেত্রীকে বিয়ে করেছিল। সারাক্ষণ মদে চুর হয়ে থাকত। পরে একদিন ওই অবস্থাতেই গাড়ির তলায় চাপা পড়ে কেঁসে গেল।