- বইয়ের নামঃ ডীপ ফ্রিজ
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ গোয়েন্দা কাহিনী
ডীপ ফ্রিজ
০১.
ভয়ানক ঠাণ্ডা! কিশোর বলল।
ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল প্যাসেঞ্জার। সীটে বসা রবিন, আর বেশি নেই। এসে গেছি।
এত ঠাণ্ডা নিশ্চয় সাইবেরিয়াতেও নেই! গাড়ি চালাতে চালাতে মুসা বলল। শার্লিরা থাকে। কি করে।
শুধু শার্লিরা না, হেসে বলল রবিন। আরও বহু লোক বাস করে এ অঞ্চলে। তারা থাকে কি করে?
থাকতে থাকতে অভ্যাস হয়ে গেছে আরকি, মন্তব্য করল পেছনের সীটে বসা কিশোর। আমরা গরম অঞ্চল থেকে এসেছি বলে ঠাণ্ডাটা অনেক বেশি লাগছে।
নিউ ইয়র্কে বেড়াতে এসেছে ওরা। নিউ ইয়র্কের নিউ পোর্টে। রবিনের খালার বাড়িতে। এসে দেখে তিনি নেই। জরুরী কাজে চলে গেছেন। ঘরে একটা নোট রেখে গেছেন। তাতে লেখা: জরুরী কাজে বেরোতেই হলো। দিন সাতেকের মধ্যেই ফিরছি। ঘরে খাবারটাবার সব আছে। আশা করি তোমাদের কোন অসুবিধে হবে না।-আন মারগারেট।
সেটা গত কালকের কথা। আজ চলেছে ওরা পাইনভিউ লেকে। আরেক আন্টির বাড়িতে। বেলী আন্টি। তার মেয়ে শার্লি। আজকে ওর জন্মদিন। নিউ পোর্ট থেকে ফোন করেছিল রবিন। ওদের আসার খবর পেয়ে একটা সেকেন্ডও আর দেরি করেনি শার্লি। নিউ পোর্টে চলে গিয়েছিল রবিনদের সঙ্গে দেখা করতে। দাওয়াতটা তখনই দিয়ে এসেছে।
লোকের দিকে মুখ করা একটা বড়, চমৎকার বাড়িতে থাকে শার্লিরা। আগেও এখানে এসেছে রবিন। তবে কিশোর আর মুসা এই প্রথম।
পাইন বনের ভেতর দিয়ে গেছে রাস্তা। লেক ঘিরে আংটির মত একটা পাক খেয়ে এগিয়ে গেছে। বছরের এ সময়টায় বাইরের কেউই রাস্তাটা ব্যবহার করে না তেমন, কেবল স্থানীয় অধিবাসী আর আইস ফিশারম্যানরা ছাড়া।
জানুয়ারির শেষ দিকেই জমাট বরফ হয়ে যায় লেকের ওপরের পানি। আর এখন মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে সেটা এতই পুরু, ট্রাক নিয়ে উঠে পড়ে আইস ফিশারম্যানরা। গাড়ি চালিয়ে চলে যায় নিজেদের ফিশিং শ্যান্টির কাছে। এই জমাট বরফে স্কেইটিংও খুব ভাল জমে।
তুষারে ঢাকা পিচ্ছিল রাস্তায় শেষ মোড়টা নিতেই সামনের বরফে ঢাকা লেকটা চোখে পড়ল ওদের।
উফ, কি দারুণ সুন্দর। চেঁচিয়ে উঠল কিশোর। মুগ্ধ দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে। একেবারে ছবির মত! ডীপ ফ্রিজ
লেকের একধারে অনেকগুলো ফিশিং শ্যান্টি। এক জায়গায় এ রকম শ্যান্টির জটলাকে স্থানীয় মাছ শিকারীরা বলে শ্যান্টি টাউন। আরেক ধারে আইস-হকি খেলতে নেমেছে ছেলের দল।
দেব নাকি বরফের ওপর দিয়েই চালিয়ে? জ্বলজ্বলে চোখে কিশোরের দিকে তাকাল মুসা।
দাও, লেকের ওপর দিয়ে যাওয়ার আনন্দটা কিশোরও মিস করতে রাজি নয়।
.
পার হয়ে এল নিরাপদেই।
শার্লিদের ড্রাইভওয়েতে ঢুকল গাড়ি।
ওই দেখো! কি বানিয়েছে। বলে উঠল কিশোর।
একটা স্লেম্যানের গায়ে ফিনিশিং টাচ দিচ্ছে শার্লি আর তার বাবা-মা। কাউচে বসা লাইফ-সাইজ ভাস্কর্য। টেলিভিশন দেখছে সোম্যান। সব কিছুই বরফ দিয়ে। বানানো হয়েছে।
খাইছে। দারুণ তো। মুসা বলল।
মরগান আঙ্কেল খুব ভাল ভাস্কর, রবিন জানাল।
হুঁ, মাথা ঝাঁকাল মুসা। ভাল যে সেটা তো সৃষ্টি দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অদ্ভুত সুন্দর।
ড্রাইভওয়ের শেষ মাথায় গাড়ি রাখল মুসা। দরজা খুলে নামল।
দৌড়ে এল শার্লি। এলে। আমি তো তোমাদের দেরি দেখে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। কাল রাতে যা তুষার পড়েছে! ভাবছিলাম, রাস্তার এত তুষার মাড়িয়ে হয়তো আর আসতেই পারলে না।
শার্লির গায়ে লাল পার্কা। কান ঢাকা সাদা মাফলারে। শীতের এই সাদা ওয়ান্ডারল্যান্ডে অপূর্ব সুন্দর লাগছে ওকে।
একে একে নামল কিশোর আর রবিন। শার্লিকে হ্যাপি বার্থডে উইশ করল ওরা। হাত-পা ছড়িয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে লাগল। গা গরম করার জন্যে কয়েক রাউন্ড স্নো-বল ছোঁড়াছুড়ি খেলল। তারপর দল বেধে এগিয়ে গেল শালির বাবা-মার সঙ্গে দেখা করার জন্যে।
এসো, মিসেস মরগান বললেন। শার্লি তো তোমাদের জন্যে অস্থির হয়ে গিয়েছিল।
কি করব। যা বরফ, জবাব দিল কিশোর।
হ্যাঁ, আসতে যে পারলে সেটাই বেশি।
পুরো সকালটাই নিশ্চয় এর পেছনে কাটিয়েছেন, স্লেম্যানের ভাস্কর্যটা দেখিয়ে বলল কিশোর।
হ্যাঁ, জবাব দিলেন বেলী আন্টি।
কাল রাত থেকে বানানো শুরু করেছি, যোগ করলেন মরগান আঙ্কেল।
কিশোর, আমার মা আর বাবা, শার্লি বলল।
হাসল কিশোর। সে তো বুঝেইছি।
মিস্টার জিম মরগান বেশ ভারিক্কি চেহারার মানুষ। ধূসর হয়ে এসেছে খাটো করে ছাঁটা চুলের রঙ। মিসেস বেলীল মরগান হাসিখুশি, আন্তরিক। হাসি লেগেই আছে মুখে।
কিশোরের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলেন মরগান আঙ্কেল। আমিও তোমাদের অপেক্ষাই করছি। জরুরী কথা আছে।
বাবা, প্লীজ, শার্লি বলল। মাত্র তো এল ওরা। আগে কিছু মুখে দিক। লাঞ্চটা শেষ হোক।
লাঞ্চ তো আর চলে যাচ্ছে না।
আসামাত্র বেচারা ছেলেগুলোকে নিয়ে পড়লে কেন? বাধা দিতে এগিয়ে এলেন বেলী আন্টি। ওরা এখানে আনন্দ করতে এসেছে। তোমার জরুরী কথা শুনতে নয়।
আমি শুধু জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম, এখানকার চুরি-ডাকাতিগুলোর খবর ওদের কানে গেছে কিনা, মরগান আঙ্কেল বললেন।
সজাগ হয়ে উঠল কিশোর। তাড়াতাড়ি বলল, না না, আন্টি, আমরা বিরক্ত হচ্ছি না। শোনার বরং আগ্রহই হচ্ছে।