- বইয়ের নামঃ ৪-৫০ ফ্রম প্যাডিংটন
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রহস্য, গোয়েন্দা কাহিনী
৪-৫০ ফ্রম প্যাডিংটন
১. মিলচেস্টারগামী ট্রেনটা
৪-৫০ ফ্রম প্যাডিংটন (১৯৫৭) / আগাথা ক্রিস্টি
অনুবাদ : নচিকেতা ঘোষ
০১.
ঘটনাটা ছিল এরকম–মিলচেস্টারগামী ট্রেনটা ব্র্যাকহ্যাম্পটন স্টেশনের আগে একটা বাঁক অতিক্রম করছে, গতি ধীর মন্থর, সেই মুহূর্তে আর একটা গাড়ি অন্য লাইন থেকে বেঁকে সমান দূরত্বে আগের গাড়ির সমান্তরাল হয়ে চলতে লাগল।
মিসেস এলসপেথ ম্যাকগিলিকার্ডি ক্রিসমাসের বাজারে সওদা শেষ করে বন্ধুর বাড়ি রওনা–হয়েছেন। তিনি নিজের কামরায় জানলার ধারে বসে পাশের গাড়ির সমান্তরাল বগিটির জানলা দেখতে লাগলেন।
বেশির ভাগ কামরারই জানলার শার্সি নামানো। কোনো কোনো কামরার যাত্রীদের দেখা যাচ্ছিল।
সমান বেগে চলেছে গাড়ি দুটো। মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডি দেখতে পেলেন, হঠাৎ একটা কামরার শার্সি উঠে গেল।
প্রথম শ্রেণীর কামরাটার আলোকিত অভ্যন্তরে যে দৃশ্য তাঁর চোখে পড়ল, উত্তেজনায় দমবন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হল।
.
জানলার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছিল একজন পুরুষ, তার মুখোমুখি দাঁড়ানো একটি মেয়ের গলা হিংস্রভাবে আঁকড়ে ধরেছে তার দুই হাত। মেয়েটির ঠিকরনো চোখজোড়া ঠেলে বেরিয়ে আসার অবস্থা। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই মেয়েটির নিপ্রাণ দেহ পুরুষটির দুই হাতের মধ্যে এলিয়ে পড়ল।
এই ভয়ঙ্কর দৃশ্যটি পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন। যখন হুঁশ ফিরে এল, তিনি বুঝতে পারলেন অপর পাশের গাড়িটির গতিবেগ বেড়ে গেল। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে গাড়ি দৃষ্টির বাইরে চলে গেল।
বিপদ জ্ঞাপক চেন টেনে কোনো লাভ নেই। ঘটনা তো ভিন্ন গাড়িতে। কিন্তু এই মুহূর্তে কিছু একটা করতে না পারলে তিনি স্বস্তি পাচ্ছিলেন না।
কি করা যায় ভাবছেন, এমন সময় একজন টিকিট কালেক্টর কামরার দরজায় এসে দাঁড়াল।
মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডি অসাধারণ সেই অপরাধমূলক কথা ভদ্রলোককে জানালেন।
টিকিট কালেক্টর জানাল, আর মিনিট সাত পরেই আমরা ব্র্যাকহ্যাম্পটন পৌঁছচ্ছি। আপনি যা বললেন আমি যথাস্থানে রিপোর্ট করব।
লোকটি তার নাম, স্কটল্যান্ডের বাড়ির ঠিকানা টুকে নিল যথারীতি।
এতেও নিশ্চিন্ত হতে পারেননি মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডি। তিনি একটা বাতিল বিলের উল্টোপিঠে দ্রুত হাতে একটা চিরকুট লিখে ফেললেন।
গাড়ি ব্র্যাকহ্যাম্পটন স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছলে একজন কুলিকে ডেকে তার হাতে চিরকুটের খাম সেই সঙ্গে একটা সিলিং গুঁজে দিয়ে বললেন, খামখানা এখুনি স্টেশন মাস্টারের অফিসে পৌঁছে দেবে।
এর পর পঁয়ষট্টি মিনিটের মাথায় গাড়ি এসে থামল মিলচেস্টার স্টেশনে।
ট্রেন থেকে নেমে সেন্টমেরী মিডে যাবার জন্য একটা ট্যাক্সি ধরলেন। নমাইল পথ যেতে হবে। কিন্তু তাঁর যেন সবুর সইছিল না।
সেই সাংঘাতিক দৃশ্যটা যেন তাকে তাড়িয়ে নিয়ে চলছিল। তখনো তিনি থেকে থেকে শিউরে উঠছিলেন।
.
ট্যাক্সি ড্রাইভার মালপত্রগুলো ঘরের ভেতরে পৌঁছে দিয়ে গেল। মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডি হলঘর পার হয়ে সোজা বসার ঘরে প্রবেশ করলেন। মিস মারপল উষ্ণ চুম্বনে বন্ধুকে অভ্যর্থনা জানালেন।
মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডি কোনো রকমে আসন নিয়ে বলে উঠলেন, জেন, সাংঘাতিক কাণ্ড। এই মাত্র একটা হত্যাকাণ্ড দেখে এলাম।
সমস্ত ঘটনা শোনার পর বৃদ্ধা মিস মারপল, বললেন, এলসপেথ, যা দেখেছ বলছ, হঠাৎ শুনলে বিশ্বাস্য বলে মনে হয় না। তবে ঘটনাটা অসাধারণ হলেও অসম্ভব নয়। এটা যে সত্যি আমার তাতে সন্দেহ নেই।
-সেই লোকটার মুখ নিশ্চয়ই তুমি দেখতে পাওনি?
–সম্ভব ছিল না, লোকটার পিঠ ছিল আমার দিকে।
–স্ত্রীলোকটিকে কতটা দেখেছ? যুবতী না বয়স্কা?
–মাত্র কয়েক ফুট দূরত্ব থেকে দেখা, তাতে মনে হল মেয়েটির বয়স ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে।
-সুন্দরী?
–বোঝার উপায় ছিল না। সাঁড়াশীর মতো আঙুলের চাপে তার মুখখানা সম্পূর্ণ বিকৃত দেখাচ্ছিল।
-তাই স্বাভাবিক, বললেন মিস মারপল, পোশাক কি ছিল?
ফ্যাকাসে রঙের ফারকোট, মাথায় টুপি ছিল না। একমাথা সোনালী চুল
–লোকটার চেহারা সম্বন্ধে কোনো ধারণা করতে পার–
একমুহূর্ত চিন্তা করলেন মিসেস ম্যাকগিলিকার্ডি। পরে বললেন, বেশ লম্বা শরীর লোকটার, কালো। গায়ে ছিল ভারি কোট। এই সামান্য বিবরণ দিয়ে তাকে চেনা যাবে বলে মনে হয় না।
-না-কিছু থেকে এটুকুও ভালো। কাল সকালে এবিষয়ে আরো কিছু জানা যাবে আশা করছি।
–এরকম একটা ঘটনা খবরের কাগজে বেরুবে নিশ্চয়ই। আচ্ছা ভালো কথা, কামরাটা কি করিডরযুক্ত ছিল?
-না।
–তাহলে গাড়িটা দূরগামী নয়। সম্ভবতঃ ব্র্যাকহ্যাম্পটনেই যাত্রা শেষ হয়েছে।
সকালের খবরের কাগজ দেখে দুই বন্ধুই হতাশ হলেন। খবরটা প্রকাশিত হয়নি। চিন্তামগ্ন অবস্থায় দুজনেই প্রাতঃরাশ সারলেন।
কিছুক্ষণ পরে মিস মারপল বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় থানার সার্জেন্ট ফ্রাঙ্ক কার্নিশের সঙ্গে দেখা করলেন।
ঘটনার বিবরণ শুনে সার্জেন্ট কার্নিশ অন্তরঙ্গতা ও সম্ভ্রমের সঙ্গে জানালেন, আমি সমস্তই নথিবদ্ধ করে নিলাম। আমি যথাযোগ্য তদন্তের ব্যবস্থা করব। রেলওয়ে অফিসারও যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেবেন বলেই আমি আশা করি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, নতুন কোনো খবর পেলেই আপনাকে জানাব। ঘটনাটা অনাবিষ্কৃত থাকতে পারে না, আগামীকাল খবরের কাগজেই হয়তো খবরটা পাওয়া যাবে।