–আমি একটা ঢিল ছুঁড়েছি। ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার দিন কে কি করছিল, হারল্ড আর আলফ্রেডকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আচ্ছা, মিস আইলেসব্যারো, বাড়িতে এখন কে কে আছে?
–কেড্রিক এখনো আছে। উইক এন্ডের ছুটি কাটাতে ব্রায়ান এসেছে। আজ সকালেই ফোন করে জানিয়েছে, হারল্ড আর আলফ্রেড কাল আসবে। ইনসপেক্টর ক্রাডক এবার তাহলে তো বেশ একটা আলোড়ন উঠবে বুঝতে পারছি।
ক্রাডক হাসলেন। বললেন, কেড্রিকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। একটু পরেই রাদারফোর্ড হলে যাচ্ছি আমি।
–তারা তোমাকে জবাব দিতে পেরেছে? জানতে চাইলেন মিস মারপল।
-হ্যারল্ড দিয়েছে। তবে আলফ্রেড ধরা দিতে চায়নি। অ্যালিবি তদন্ত করে দেখতে হবে। ভালো কথা, কোনো সময় গেলে ডাঃ কুইম্পারকে ধরা যাবে?
–ডাঃ তার রোগী দেখতে আসেন ছটায়। সাড়ে ছটা অবধি থাকেন। ওহ্, আমাকে এখনি উঠতে হবে। ডিনারের ব্যবস্থা করতে হবে। ব্যস্ত হল লুসি।
মিস আইলেসব্যারো, একটা ব্যাপার আপনার কাছ থেকে জানতে চাই। ওই মার্টিন নামের মেয়েটির সম্পর্কে ওদের মনোভাব কি রকম?
–বেচারী এমা তো আপনার কাছে গিয়েছিল বলে সবারই মুখে শুনেছি। ডাক্তার এমাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন বলে তার ওপরেও সবাই খাপ্পা। মার্টিনের ব্যাপারটাকে ওরা তিন ভাইই ধাপ্পা আর দুরভিসন্ধিমূলক বলেই মনে করে। এব্যাপারে ব্রায়ানই ব্যতিক্রম। মানুষটিও সাদামাটা, মনে প্যাঁচগোজ নেই। তার বিশ্বাস, মেয়েটি সত্যিই এডমান্ডের বিধবা স্ত্রী। বিশেষ কোনো কারণে ফ্রান্সে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে, তবে তার খবর আবার পাওয়া যাবে।
এমার মনে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।
–তোমার সম্পর্কে সকলেরই বেশ আগ্রহ লক্ষ্য করলাম। বললেন মিস মারপল।
এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লুসি হাসতে হাসতে বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্পের বিবাহপ্রস্তাব সহ তার দুই ছেলের বিশেষ দুই প্রস্তাবের কথা বিস্তারিত ভাবে বলল।
সবশেষে বলল, আসলে, আমি বুঝতে পারি, ওদের আগ্রহের কারণটা হল, সকলেই ভাবছে আমি অনেক কিছু জানি।
-বুঝতে পারছি, খুব বিপজ্জনক পরিস্থিতি। সতর্ক থাকবেন। লোভনীয় প্রস্তাবই শেষ কথা নয়, খুনও হয়ে যেতে পারেন।
লুসি শিউরে উঠল। বলল, কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে ভালো করেছেন।
-বাচ্চা দুটি এখনো আছে? জিজ্ঞেস করলেন মিস মারপল।
–কাল ওরা জেমস স্টডার্ডের বাড়ি যাচ্ছে। ছুটির শেষ কটা দিন ওখানেই ওরা কাটাবে।
-ভালো খবর। ওদের উপস্থিতিতে গুরুতর কিছু না ঘটলেই মঙ্গল। তাছাড়া ওদের ওপরও আক্রমণ হতে পারে।
–কি বলছেন, ছেলেদের ওপর? অবাক হল লুসি।
–হ্যাঁ, আলেকজান্ডারের ওপর।
-ওই বয়সী ছেলেরা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হয়ে থাকে। একটা খুনের রহস্যের সন্ধান করে বেড়ানো খুবই রোমাঞ্চকর। কিন্তু কাজটা বিপদ ডেকে আনতে পারে।
–মিস মারপল, ক্রাডক বললেন, বর্তমান ঘটনাটাকে রাদারফোর্ড হলের পারিবারিক ব্যাপার বলেই মনে করছেন?
–দ্বিতীয় ঘটনা হল একজন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি কর্তৃক অপরিচিত স্ত্রীলোক হত্যা-এই দুয়ের মধ্যে নিশ্চিত সম্পর্ক রয়েছে।
খুনী বলে একজন লম্বা কালো লোকের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আমি ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখেছি ওরকম লম্বা কালো লোক রাদারফোর্ড হলে তিনজন আছে। তবে তিন ভাইই লম্বা আর কালো হলেও তিনজনের চেহারাই স্বতন্ত্র। আসল লোককে খুঁজে বার করা এ কারণেই কঠিন হয়ে উঠেছে।
–আমার কিন্তু ধারণা কাজটা অতটা জটিল আর কষ্টসাধ্য নয়।
–মার্টিনের কাহিনী আপনি সত্যি বলে মনে করেন? বললেন ক্রাডক।
–এডমান্ড ক্রাকেনথর্প যে মার্টিন নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিল কিংবা বিয়ে করতে চেয়েছিল–এমার কাছে লেখা এডমান্ডের চিঠিতে তা পরিষ্কার। চিঠিটা নিশ্চয় তুমি দেখে থাকবে। কোনো মিথ্যা কাহিনী শুনিয়ে এমার কি লাভ?
–মার্টিন, এডমান্ডের পুত্রসন্তান, পরিবারের সম্পত্তির উত্তরাধিকার-খুন, এদিকে সবকটি ভাইয়ের আর্থিক অবস্থার সঙ্কট, একেবারে জটপাকানো অবস্থা। খুনটাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারের সঙ্গে জড়িয়ে দেখতে গেলে একমাত্র লুথার ক্রাকেনথর্পের মৃত্যুতেই সকলের লাভবান হবার সম্ভাবনা।
মার্টিনের হত্যা, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের পরিমাণে খুব সামান্যই হেরফের ঘটাবে।
–তাহলে খুনটাকে তুমি নিরর্থক বলতে চাইছ? বললেন মিস মারপল।
–কিন্তু বৃদ্ধ ক্রাকেনথর্প এখনো অনেক বছর বাঁচবেন। বলল লুসি।
–ডাক্তারেরও তাই অভিমত। বললেন ক্রাডক।
–অবশ্য ক্রিসমাসের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তখন ডাক্তার এমন ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছিলেন যেন বৃদ্ধকে কেউ বিষ প্রয়োগ করেছে। বলল লুসি।
-আমি ঠিক এই ব্যাপারটা নিয়েই ডাঃ কুইম্পারের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
–এই সর্বনাশ, অনেক দেরি হয়ে গেছে
লুসি তাড়াহুড়ো করে উঠে পড়ল।
মিস মারপলের কোলের ওপরে টাইমস পত্রিকাখানা ধরা ছিল। তিনি শব্দ-সমাধান মেলাতে বসেছিলেন। এখন পত্রিকার দিকে চোখ ফেলে বলে উঠলেন, টিনটিন আর টোকে–কোনোটি যে হাঙ্গেরীয় মদের নাম খেয়াল রাখতে পারি না।
–টোকে হল হাঙ্গেরীয় মদের নাম, বলল লুসি, সাত অক্ষর আর পাঁচ অক্ষরের শব্দ, সংকেত কি আছে?
-ক্ৰশওয়ার্ড পাজল নয় মেয়ে, মনে হল হঠাৎ কথাটা
ইনসপেক্টর মুখের দিকে তাকিয়ে মিস মারপলের মনের ভাব বুঝবার চেষ্টা করলেন।