এরপরে ক্রাডক দেখা করলেন ক্রাকেনথর্প পরিবারের আইন উপদেষ্টা উইমবোর্ন হেন্ডারসন অ্যান্ড কার্সস্টেয়ার্স নামক সংস্থার মিঃ উইমবোর্নের সঙ্গে।
ক্রাডকের জিজ্ঞাসার উত্তরে মিঃ উইমবোর্ন জানালেন, ক্রাকেনথর্প পরিবারের বিষয়গুলো বাবাই দেখাশোনা করতেন। ছ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। একডমান্ডের বিবাহের কথা বাবা শুনে থাকলেও এর কোনো গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে হয় না। কাল সকালেই একটা চিঠিতে এমা আমাকে তার স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে যাওয়ার কথা এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য খবর জানিয়েছে। এডমান্ড বিবাহ করেছিল কখনো এমন কথা উঠেছিল বলে মনে হয় না। তাই এই মুহূর্তে এতবছর পরে কেউ এসে এডমান্ডের একটি পুত্রসন্তান আছে দাবি জানালে ব্যাপারটা গোলমেলে বলেই মনে হওয়া স্বাভাবিক। বৈধ কোনো প্রমাণ কি ছিল মেয়েটির?
ধরুন যদি মেয়েটি তার দাবি প্রমাণ করতে পারতো তাহলে তার ছেলের প্রাপ্য সম্পত্তি কতটা হত?
–দেখুন, যতক্ষণ না মেয়েটি প্রমাণ করতে পারছে তার ছেলে এডমান্ড ক্রাকেনথর্পের আইনসিদ্ধ বিবাহজাত পুত্র ততক্ষণ ওরা কোনো কিছুরই অধিকারী নয়। যদি তা প্রমাণ করতে পারে, তবে লুথার ক্রাকেনথর্পের মৃত্যুর পর এডমান্ডের ছেলে তার ঠাকুর্দার ট্রাস্ট সম্পত্তির ন্যায্য অংশের অধিকারী হবে। কেবল তাই নয় লুথার ক্রাকেনথর্পের জ্যেষ্ঠ পুত্রের ছেলে বলে রাদারফোর্ড হল ও সংলগ্ন জমিরও সে মালিক হত। বর্তমানে এটা খুবই উল্লেখযোগ্য উত্তরাধিকার।
-উইল অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে লুথার ক্রাকেনথর্পের মৃত্যুর পর রাদারফোর্ড হলের মালিক হবে কেড্রিক।
-হ্যাঁ, জীবিত সন্তানদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ বলে।
–একটা চিঠি পাবার পরে শুনেছি হারল্ড ও আলফ্রেড খুব বিচলিত হয়েছে।
–অসম্ভব। কেন?
–তাদের উত্তরাধিকারের পরিমাণ কমে যাবার আশঙ্কায়?
–নিশ্চয়ই। কেননা, এডমান্ড ক্রাকেনথর্পের ছেলে সম্পত্তির একপঞ্চমাংশের অধিকারী।
–আমার ধারণা ওরা দুভাই খুবই আর্থিক কষ্টে রয়েছে।
–আপনারা দেখছি খোঁজখবর নিচ্ছেন। আলফ্রেড প্রায় সব সময়েই বলতে গেলে যে টানাটানির মধ্যে থাকে। হারল্ড, যতদূর জানি, এখন তার অস্বচ্ছল অবস্থা। তার বাণিজ্যিক সংস্থা খুবই অভাবের মধ্য দিয়ে চলছে।
ইনসপেক্টর, আপনি বিষয়টাকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করছেন, বলব তা সঙ্গত হত যদি লুথার ক্রাকেনথর্পকে হত্যা করা হত। ভাইয়ের বিধবা স্ত্রীকে হত্যা করে আর্থিক সংকট কতটা সুরাহা হবে?
.
গোপন সূত্রের খবর থেকে যা জানা গেল তাতে ইনসপেক্টর ডারমট ক্রাডকের অনুমান হল বাইরে ব্যবসার ঠাটবাট যতই থাক হারল্ড যে কোনো মুহূর্তে নিরুদ্দেশ হতে পারে। তাই তিনি তড়িঘড়ি তার অফিসেই হারল্ডের সঙ্গে একটা সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করলেন।
নির্দিষ্ট সময়ে সার্জেন্ট ওয়েদারবলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি শহরের অফিসপাড়ায় বিরাট এক বাড়ির পাঁচতলায় উপস্থিত হলেন।
একটি সুবেশা সুশ্রী তরুণী সসম্ভ্রমে তাকে অভ্যর্থনা করে হারল্ড ক্রাকেনথর্পের নিজস্ব অফিস ঘরে পৌঁছে দিল।
সাজানো গোছানো ঘর। সর্বত্র সমৃদ্ধির ছাপ। চামড়ায় মোড়া মস্ত একটা টেবিলের পেছনে নিখুঁত পোশাকে পরিপাটি হারল্ড বসেছিলেন।
প্রাসঙ্গিক সৌজন্য বিনিময়ের পর ক্রাডক কোনোরকম ভূমিকার মধ্যে না গিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করলেন, একটা ব্যাপার আমি জানতে এসেছি মিঃ ক্রাকেনথর্প, ডিসেম্বরের ২০ তারিখ, শুক্রবার বেলা তিনটে থেকে মাঝরাত পর্যন্ত আপনি কোথায় ছিলেন? অবশ্য প্রশ্নের উত্তর দেওয়া না দেওয়া আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
–আপনাদের সাহায্য করার জন্য আমি সর্বদাই প্রস্তুত।
-এরপর তিনি টেলিফোন তুলে তার সেক্রেটারী মিস এলিসের কাছে অফিসের কর্মতালিকা চেয়ে পাঠালেন। কর্মলিকার বিবরণ থেকে জানা গেল ২০ ডিসেম্বর বেলা ৩টার পরে তিনি সোথেবির বিক্রয় কেন্দ্রে যান। সেখানে কিছু দুর্লভ পাণ্ডুলিপি বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত হচ্ছিল।
–মনে পড়েছে বলছি শুনুন, বলল হারল্ড, এরপর জারমাইন স্ট্রিটের একটা ছোট রেস্টুরেন্ট বাসেলস–সেখানে চা খাই। পরে ঘণ্টা খানেক একটা থিয়েটারে কাটিয়ে আমি ৪৩, কার্ডিগান গার্ডেনসের বাড়িতে ফিরি। সাড়ে সাতটায় কেটারার্স হলে ডিনার সারি এবং বাড়ি ফিরি।
–আপনি ডিনারে বেরন কটায়?
–সম্ভবতঃ ছটায়।
–ডিনারের পরে বাড়ি ফেরেন কটায়?
রাত সাড়ে এগারোটায়।
–দরজা খুলে দিয়েছিলেন আপনার স্ত্রী না গৃহভৃত্য?
-আমার স্ত্রী এলিস ডিসেম্বরের গোড়া থেকেই রয়েছেন দক্ষিণ ফ্রান্সে। বাইরে থেকে দরজা খোলবার চাবি আমার কাছেই ছিল।
–আপনার বাড়ি ফেরার সময়টা সমর্থন করার মতো দ্বিতীয় কাউকে পাওয়া সম্ভব নয় বলছেন?
-ভৃত্যরা আমার ঢোকার শব্দ পেয়ে থাকতে পারে।
–আর একটা প্রশ্ন, আপনার কি নিজস্ব গাড়ি আছে?
–হ্যাঁ। নিজেই ড্রাইভ করি। বড় একটা ব্যবহার করি না।
–গাড়িটা কোথায় রাখেন?
কার্ডিগান গার্ডেনসের পেছনে একটা গ্যারেজ ভাড়া করা আছে। আপনার আর কিছু জানার আছে?
–আপাততঃ এই পর্যন্তই। ধন্যবাদ।
বাইরে বেরিয়ে এসে ক্রাডক বললেন, তুমি কয়েকটা জায়গায় খোঁজ নেবে। সোথথবির বিক্রয়কেন্দ্রে আর সেই চায়ের দোকানে। যা বলল, তাতে ওই সামান্য সময়ের মধ্যে চারটে তেত্রিশের গাড়ি ধরে গিয়ে ট্রেন ধরা, ট্রেনের কামরায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে ট্রেনে ফিরে এসে আবার ডিনারে যোগ দেওয়া সম্ভবপর বলে মনে হয় না। আর শোন গাড়ি রাখার গ্যারেজেও খোঁজ নেবে।