-বটে। খুব অহঙ্কার দেখছি। তবে সম্মা হিসেবে দেখলে অন্য কথা বলবেন।
–একথার অর্থ? কেড্রিকের দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল।
–অর্থ ভালোই বুঝতে পেরেছেন। লুসি তার শোবার ঘরে ঢুকে গেল।
.
১০.
প্যারিসের পুলিস হেড কোয়ার্টার্সের অফিসার আর্মড ডারমট ক্রাডকের মধ্যে যোগাযোগ হলে ডেসিল একটি গ্রুপ ফটো দেখালেন।
-বাঁদিক থেকে চতুর্থজন হল আন্না ট্রাভিনস্কি। সে কাজ করত ব্যালে ম্যারিটস্কি দলে। নিতান্ত অনামী গুরুত্বহীন দল। মাঝে মাঝে বাইরে সফরেও যায়। দলটি পরিচালনা করেন মাদাম জোলিয়ে। মেয়েটির বিশদ খোঁজখবর পাওয়া যাবে এর কাছে গেলেই।
.
–আপনার দলের আন্না ট্রাভিনস্কি নামের মেয়েটির সম্পর্কে কিছু খোঁজখবর দরকার আমাদের।
-বলুন কি জানতে চান?
–মেয়েটি রুশ দেশীয়?
–নাম শুনে ওরকমই মনে হয়। ওটা ছদ্মনাম। দলে মেয়েটির বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। ভালো নাচতে পারত না।
–মেয়েটি কি ফরাসি?
-তা হতে পারে। ফরাসি পাসপোর্ট ছিল তার। একবার বলেছিল তার স্বামী একজন ইংরাজ।
স্বামী ইংরাজ বলেছে? জীবিত না মৃত?
–সেটা ভালো জানা নেই। মৃত হতে পারে, আবার ছাড়াছাড়ি হয়ে থাকতে পারে।
–মেয়েটিকে শেষ কবে আপনি দেখেছিলেন?
–শেষ কবে…শুনুন বলছি। ছ সপ্তাহ আগে দল নিয়ে আমি লন্ডনে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকটি জায়গায় আমরা শো দেখাই। হ্যাঁমারস্মিথে শেষ শো করে আমরা ফ্রান্সে ফিরে আসি। শেষ শোর আগেই হঠাৎ করে মেয়েটি দল ছেড়ে দেয়। আমাদের সঙ্গে ফ্রান্সে ফেরেনি।
–দল ছাড়ার কারণ কিছু জানিয়েছিল?
-হ্যাঁ। খবর পাঠিয়ে জানিয়েছিল, সে তার স্বামীর পরিবারের সঙ্গে বাস করবে। সত্যি বলেছিল কি মিথ্যা, তা বলতে পারব না। এ লাইনের মেয়েরা কখন কোনো পুরুষকে পাকড়াও করে বোঝা যায় না।
-তারিখটা আপনার মনে আছে?
-তা বলতে পারব। ক্রিসমাসের আগের রবিবার আমরা ফ্রান্সে ফিরে আসি। তার দুতিন দিন আগে আন্না চলে যায়। হ্যাঁমারস্মিথে তাকে বাদ দিয়েই শো করতে হয়েছিল আমাদের।
একটানা প্রশ্নগুলো করে গেলেন ক্রাডক। তিনি যেন খানিকটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছিলেন।
–মেয়েটির এত খোঁজখবর করছেন কেন বলুন তো? কি করেছে সে?
জানতে চাইলেন মাদাম জোলিয়ে।
-না, করার ব্যাপার নয়, বললেন ক্রাডক, আমরা সন্দেহ করছি, মেয়েটি খুন হয়েছে। প্রতি রবিবার গির্জায় যেত।
–আচ্ছা, মাদাম, তার একটি ছেলে আছে এরকম কথা আপনাকে কখনো বলেছিল?
সন্তানের কথা বলছেন? এসব মেয়েরা ওরকম ঝামেলায় জড়াতে চায় না।
–এমন তো হতে পারে, আগে তার একটি বাচ্চা হয়েছিল, পরে সে রঙ্গমঞ্চের জীবন গ্রহণ করে।
-হ্যাঁ, এরকম হতে পারে। তবে আমি তার ব্যাপারে কিছু জানি না।
দলের মেয়েদের মধ্যে তার বন্ধু কে কে ছিল?
বন্ধু বলতে দু-তিন জনের সঙ্গে মিশত। তাদের নাম দিতে পারি।
পাউডারের কৌটোটা ক্রাডকের সঙ্গেই ছিল। সেটা দেখান হলে, মাদাম বললেন, এরকম একটা আন্নার ছিল। ফারকোটের কথা অবশ্য কিছু বলতে পারলেন না।
মাদামের সঙ্গে কথা শেষ করে যে কটি মেয়ের নাম তিনি দিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বললেন ক্রাডক এবং ডেসিল।
মেয়েদের কয়েকজন আন্নাকে ভালোই চিনত জানাল। কিন্তু তার সম্পর্কে সঠিকভাবে কোনো কথা বলতে পারল না। মেয়েটি নাকি তার নিজের কথা বিশেষ কিছুই বলত না। তবে যা বলত সবই তার বানানো আজগুবি কথাবার্তা। মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে ক্রাডক বিশ্বাস করতে পারলেন না যে আন্না নামের এই মেয়েটিরই দেহ রাদারফোর্ড হলের একটা পাথরের কফিনে পাওয়া গেছে।
ফটোর দেহটা দেখে মাদাম ও মেয়েরা জানাল চেহারার সঙ্গে আন্নার কিছুটা মিল রয়েছে। তবে ওরকম ফুলে ওঠা দেহ দেখে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা কি সম্ভব?
তবে তারিখের হিসেব থেকে প্রামাণ্য তথ্য একটাই পাওয়া গেল। আন্না ট্রাভিনস্কি ফ্রান্সে ফিরে যাবে না, এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ডিসেম্বরের উনিশ তারিখ। আর কুড়ি ডিসেম্বর তারিখে চারটে তিরিশের গাড়িতে ব্র্যাকহ্যাম্পটন যাওয়ার পথে যে মেয়েটিকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারা হয়েছিল, তার সঙ্গে আন্নার চেহারার মিল ছিল।
আর একটি সম্ভাবনার আভাস পাওয়া যায় আন্নার কথা থেকে। সে মাদামকে বলেছিল, তার এক ইংরাজ স্বামী ছিল। এডমান্ড ক্রাকেনথর্পের কথা সে বলে থাকতে পারে।
রাদারফোর্ড হলের মৃতদেহটি যদি আন্না ট্রাভিনস্কি না হয়, তাহলে আন্না ফ্রান্সে ফিরে না এসে কোথায় যেতে পারে? সে কি অন্য কোথাও কোনো পুরুষের সঙ্গে গৃহজীবন শুরু করেছে?
.
লন্ডনে রওনা হওয়ার আগে প্যারিসে ক্রাডক মার্টিন নামে স্ত্রীলোকটির বিষয়ে ডেসিলের সঙ্গে আলোচনা করলেন।
ডেসিল জানালেন, চতুর্থ সাউথশায়ার রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট এডমান্ড ক্রাকেনথর্পের সঙ্গে মার্টিন নামে কোনো ফরাসি মেয়ের বিয়ে হয়েছিল কিনা তার নথিভুক্ত প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করবেন।
নিজের অফিসে ফিরে এসেই ক্রাডক সার্জেন্ট ওয়েদারবলের রিপোর্ট পেলেন।
১২৬ এলভার্স ক্রেসেন্ট হল ছাত্রদের বোর্ডিং হাউস। চিঠিপত্রের জন্য অনেক লোকই জায়গাটাতে ব্যবহার করে। মার্টিন নামের কোনো মেয়ের কথা ওখানে কেউ মনে করতে পারেনি। ফটো দেখেও সনাক্ত করতে পারেনি।
ওয়েদারলি বলল, আমরা হোটেলগুলোতেও অনুসন্ধান করেছি স্যার। আন্না ট্রাভিনস্কির একটা সন্ধান পাওয়া গেছে রুক গ্রীনের পরে একটা সস্তা হোটেলে। সেখানে থিয়েটারের লোকেরাই বেশি থাকে। আন্না দলের অন্যান্যদের সঙ্গে সেখানে উঠেছিল। ১৯ ডিসেম্বরের রাত্রে শোয়ের শেষে সে সেখান থেকে চলে যায়।