এক ঝুড়ি মিথ্যা কথা সকালে বললেন কেন?
আমি চাইনি মঁসিয়ে আমার বর্তমান ব্যবসার ক্ষতি হোক এবং কালকের ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমি যে নিজের কামরা থেকে বেরোইনি সেজন্য সাক্ষীর দরকার হলে আমার সহযাত্রী ইংরেজটাই সাক্ষী হবে। আমি ঐ রাশেট হারামজাদাকে খুন করিনি এবং কিছুই প্রমাণ করতে পারবেন না আপনারা।
আপনি এখন আসতে পারেন।
আপনারা আমার বিরুদ্ধে শুধু শুধু চক্রান্ত করছেন। বহুদিন আগেই ওকে মারার দরকার ছিল যদি আমি থাকতাম…।
আপনি এত ভাবছেন কেন? ডেইজিকে আপনি তো আর অপহরণ করেননি।
ডেইজি আহা। তাকে ভুলতে এখনো পারিনি। তার সেই মিষ্টি ডাক যে যেন সাদা গাড়িটায় এসে বসেছে। পুরোনো স্মৃতিতে দু চোখে জলে ভরে যায় ফলকারেল্লির এবং বিদায় নেন।
পোয়ারো সুইডিস মহিলাটিকে ডাকবার আদেশ দিলেন।
গ্রেটা অঁলস এলেন। তিনি আঁকুল হয়ে কাঁদছিলেন।
আপনাকে একটি মাত্র প্রশ্ন করব দয়া করে সত্যি কথাটা বলবেন। ডেইজির দেখাশোনার ভার তো আপনার হাতে ছিল তাই তো?
হা। সকালেই একথা বলতাম কিন্তু ভয়ে বলিনি। ডেইজি এবং ডেইজির মায়ের ব্যবহার সম্পর্কে সমস্ত কথাই বললেন শ্রীমতী অঁলস।
শ্রীমতী অঁলস যাবার পরই মাস্টারম্যান এসে ঘরে ঢুকল। এবং বললেন আর্মষ্ট্রং পরিবারের উনি আদালী ছিলেন এবং নিউইয়র্কের বাড়িতে পরিচারকের কাজ করতেন। আপনারা স্যার টোনিওকে অযথা সন্দেহ করবেন না। ও সারারাত নিজের কামরায় ছিল এবং ও ভীষণ নরম মনের মানুষ। সুতরাং ওর পক্ষে একাজ একেবারেই অসম্ভব।
আর কিছু বলবে?
না স্যার।
এইসব বলার পর মাস্টারম্যান চলে গেল।
বারো জন যাত্রীর মধ্যে নজনই যে আর্মষ্ট্রং পরিবারের সাথে যুক্ত। কুক বললেন, একি এ তো তাজ্জব কাণ্ড।
নতুন অতিথিটিকে এবার দেখুন। আমেরিকান সেই গোয়েন্দা শ্রীযুক্ত হার্ডম্যান।
হার্ডম্যান সতর্কভাবে সকলের দিকে তাকাতে তাকাতে এসে বসলেন।
কি হুলুস্থুল কাণ্ড চলছে মশাই, ট্রেন না তো যেন পাগলা গারদ।
পোয়ারো হেসে বললেন, আপনার উপর তো আর্মষ্ট্রং বাড়ির বাগানের পরিচর্যার ভার ছিল। তাই না?
ওদের বাগানই ছিল না।
তবে কি খানসামার দায়িত্বে ছিলেন।
মাথা আমার খারাপ হয়নি।
আর্মস্ট্রংদের সঙ্গে কি সম্পর্ক ছিল বলুন।
কিছু না।
পরোক্ষ ভাবেও না।
না, তবে ধন্যবাদ জানাতে এবং অভিনন্দন জানাতে এলাম কারণ আপনার প্রতিভা অসাধারণ। ধন্যবাদ।
আমাকে বাদ দিন আমার সঙ্গে ঐ পরিবারের কোনো যোগাযোগই ছিল না। কিন্তু আর দুজন শ্ৰীমতী হার্বাড আর শ্রীমতী স্মিট এদের সঙ্গে। এই রহস্যের সম্পূর্ণ সমাধান কি করতে পেরেছেন আপনি?
বহুক্ষণ আগেই। তাহলে বলছেন না কেন?
সত্যিই আপনারা সবাই অধৈৰ্য্য হয়ে উঠেছেন এইবার বলব। সকলের সামনে এই রহস্যের জট খুলে দেব। হার্ডম্যান আপনি বরং সকলকে এইখানে আসতে বলুন। দুটো সম্ভাব্য সমাধান আছে সেটাই সকলের সামনে পেশ করব।
সবাই খানাকামরায় এসেছেন এবং চুপচাপ ও শান্ত। কিন্তু গ্রেটা অঁলস কেঁদে চলেছেন এবং শ্রীমতী হার্বাড তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
পোয়ারো উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহিলাবৃন্দ আমরা সবাই এখানে সমবেত হয়েছি স্যামুয়েল এডওয়ার্ড রাশেট ওরফে কাসেট্টির মৃত্যু সম্পর্কে তদন্তের জন্য এবং আমি আমার বক্তব্য ইংরেজী ভাষাতেই নিবেদন করব যাতে সকলেই ইংরেজী মোটামুটি বুঝতে পারেন।
এই হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য দুটি সমাধান আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। কোনো সামাধানটি গ্রহণযোগ্য তার বিচারের ভার পুরোপুরি মঁসিয়ে কুক এবং ডাক্তার কনস্টানটাইনের উপর।
আপনারা জানেন রাশেটের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ব্যাপারে আজ সকালে তাকে ছুরিকাঘাতে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়। কাল সে শেষবারের মতো কণ্ডাক্টরের সাথে কথা বলেছিল রাত বারোটা সাইত্রিশ আন্দাজ। জানতে পারা যায় একটি ঘড়িও তার পায়জামার পকেটে পাওয়া যায় এবং তার থেকে আবিষ্কৃত হয় যে রাত একটা পনের মিনিটে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তার মৃতদেহ পরীক্ষা করে রায় দেন যে বারোটা থেকে দুটোর মধ্যে তার হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়। রাত বারোটা ত্রিশ মিনিট নাগাদ ট্রেন বরফ ঝড়ের কবলে পড়ে আপনারা জানেন। সুতরাং ঐ সময় ট্রেন ছেড়ে বাইরে যাওয়া কারোর পক্ষে সম্ভব নয়।
নিউইয়র্ক ডিটেকটিভ এজেন্সির মিঃ হার্ডম্যান তার জবান বন্দীতে বলেছেন যে কারোর পক্ষে কোচের শেষ প্রান্ত ১৬নং কামরার (মিঃ হার্ডম্যানের) সামনে দিয়ে চলে যাওয়া সম্ভব নয় কারণ তিনি সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন। সুতরাং এই সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছেছি যে হত্যাকারী এই ইস্তাম্বুল ক্যালে কোচের মধ্যেই রয়েছে। এবার বিকল্প সমাধানটি হল খুবই সহজ। মিঃ হার্ডম্যানকে রাশেট সম্ভাব্য শত্রুর বর্ণনা দিয়েছিল কারণ তার মনে মৃত্যুভয় ছিল। এবং এও বলেছিলেন যে তাকে হয়ত দ্বিতীয় রাত্রেই এই ট্রেনে হত্যার চেষ্টা করা হবে।
মিঃ হার্ডম্যানকে রাশেট যা বলেছিল তার অনেক বেশিই সে জানত। ওর শত্ৰুটি বেলগ্রেড অথবা ভিনভোকিতে ট্রেনে ওঠে। কর্নেল এবং ম্যাককুইন প্ল্যাটফর্মে নেমেছিলেন এবং ভুল করে কোচে ঢোকার দরজাটা খুলে রেখে আসেন। কণ্ডাক্টরের একটা উর্দি আর বিশেষ ধরণের চাবি লোকটা যোগাড় করে রেখেছিল। এবং এই চাবি সাধারণত রেলকর্মীদের কাছে থাকে। সুতরাং দরজা বন্ধ থাকলেও তা খোলা যায়। এই চাবি দিয়ে রাশেটের কামরায় আততায়ী যখন ঢোকে তখন সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আততায়ী রাশেটকে হত্যা করে মিসেস হার্বাডের কামরায় চলে যায় মাঝের দরজাটা দিয়ে।