সবই ভাঁওতা ছিল উড়ো চিঠিগুলো কারণ রাশেট জানত তার শত্রু কে বা কারা। তবে যেটা আধপোড়া অবস্থায় পেয়েছি সেটা দেখে সে সত্যিই ভয় পেয়েছিল। এবং সেই কারণেই পোড়ানো হয়েছিল। এবার রুমাল আর পাইপক্লিনার। রুমালটা ভুল করে সত্যিই ফেলে যাওয়া হয়েছিল। এমন কোনো মহিলার যদি রুমালটা হয় যিনি আর্মষ্ট্রং পরিবারের সাথে যুক্ত তিনি নিমোতে তার পরিচয় গোপন করবেন এবং এই ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। কাউন্টেস আন্দ্রেনী নাম বদল করেছেন ওঁর প্রকৃত নাম এলেনা নয়, হেলেনা।
উনি আমেরিকায় কখনও যাননি তিনি তা বলেছেন। তাহলে আর্মষ্ট্রং পরিবারের সাথে ওঁর কি সম্পর্ক থাকতে পারে?
হা সাক্ষ্যে তাই বলেছেন। কারণ ওঁর চেহারা ইংরেজ বা আমেরিকানদের মত নয়। অনেকটা ইউরোপ অধিবাসীদের ধাঁচের এবং ইংরাজী উচ্চারণেও জড়তা আছে। আমি বুঝতে পেরেছি উনি কে?
ডেইজি আর্মষ্ট্রং-এর মাসী হেলেনা। শ্রীযুক্তা আর্মষ্ট্রং-এর আপন ছোট বোন। অভিনেত্রী লিণ্ডা আর্ডেন-এর কনিষ্ঠ কন্যা।
লিণ্ডা আর্ডেন ছিলেন পেশাদার মঞ্চাভিনেত্রী। আমরা সবাই জানি তাঁর অতুলনীয় পারদর্শিতার কথা, পেশাদার নাম নিয়েই এক্ষেত্রে সবাই থাকে। লিণ্ডা আর্ডেন শেক্সপীয়ারের অ্যাজ ইউ লাইক ইট নাটকে আর্ডেন অরণ্য আর রোজা লিণ্ডা দুইয়ে মিলে লিণ্ডা আর্ডেন হওয়া বিচিত্র নয়। লিণ্ডার পূর্ব পুরুষরা হয়ত মধ্য ইউরোপের লোক ছিলেন। তার প্রকৃত পদবী হয়ত গোল্ডেনবার্গ। লিণ্ডা আর্ডেনের ছোট মেয়ে হেলেনা গোল্ডেনবার্গ বর্তমানে কাউন্টেস আন্দ্রেনী। ওয়াশিংটনে কাউন্ট যখন ছিলেন তখনই বিয়ে হয় ওদের।
রাজকুমারী তো বলেছেন যে লিণ্ডা আর্ডেনের ছোট মেয়ে এক ইংরেজকে বিয়ে করেছে। এবং সেটা রাজকুমারীর মনে নেই। রাজকুমারী ওদের পরিবারের বন্ধু অথচ এই তথ্যটুকু জানবেন না। কিন্তু ট্রেনে যে হেলেনা আছেন এবং রাজকুমারীও তাকে দেখেছেন কিন্তু আমরা যাতে হেলেনাকে সন্দেহ না করি তাই তিনি মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলেন।
খানাকামরায় নৈশভোজের জন্য যাত্রীদের আহ্বান করা হল।
.
০৪.
পাসপোর্টে নাম বদল
খাবার পরিবেশন করার আগে প্রধান পরিচারককে ডেকে কিছু একটা নির্দেশ দিলেন পোয়ারো। কাউন্ট আর কাউন্টেসকে সবার শেষে পরিবেশন করা হচ্ছে দেখলেন ডাক্তার এবং মঁসিয়ে কুক। বিলের ক্ষেত্রেও একটু দেরি হল তাদের। সবাই যখন বেরিয়ে গেলেন ওঁরা তখনও টেবিলে বসে। দাম মিটিয়ে যাবার পথে আটকালেন পোয়ারো হাতে সেই দামী রুমালটা। এই রুমালটা মাদাম আপনি ফেলে যাচ্ছেন।
কাউন্টেস রুমালটি হাতে নিয়ে দেখলেন এবং বললেন আপনার ভুল হয়েছে মঁসিয়ে, রুমালটা আমার নয়।
আপনার নয়?
না।
কিন্তু এইচ অক্ষরটা সেলাই করা আছে যে।
কাউন্টেস অবিচলিত মুখে বললেন আমার নামের প্রথম অক্ষর এইচ নয় ই।
না মাদাম। আপনার নাম এলেনা নয় হেলেনা, হেলেনা গোল্ডেনবার্গ। অভিনেত্রী লিণ্ডা আর্ডেনের কনিষ্ঠ কন্যা শ্রীমতী আর্মষ্ট্রং-এর ছোট বোন।
কাউন্ট আর কাউন্টসের মুখে মৃত্যুর বিবর্ণতা। দুপক্ষই চুপ থাকলেন দুই মিনিট।
নরম গলায় পোয়ারো বললেন, আমি যা বললাম তা সত্যি কিনা অস্বীকার করবেন না মাদাম।
কাউন্ট গলা চড়িয়ে বললেন, আপনি কোনো অধিকার…. তা আমি জানতে চাই।
লক্ষ্মীটি মাথা গরম করো না। আমায় বলতে দাও এবং এঁর কাছে অস্বীকারের উপায় নেই।
হা মঁসিয়ে আমি হেলেনা গোল্ডেনবার্গ। শ্রীমতী আর্মস্ট্রং আমার দিদি।
সেটা আগে বলেননি কেন উল্টে আপনার স্বামী-সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলে গেছেন।
গর্জে উঠলেন কাউন্ট। কাউন্টেস তাকে চুপ করিয়ে বললেন। উনি যা বলছেন তা তিক্ত এবং সত্য।
আচ্ছা মাদাম পাসপোর্টে নাম বদল করলেন কেন?
ওকে কিছু বলবেন না ওটা আমিই করেছি, বললেন কাউন্ট।
হেলেনা শুরু করলো। ট্রেনে যে লোকটা খুন হয়েছে সে একসময় আমার দিদির ছোট্ট মেয়েকে চুরি করে হত্যা করেছিল এবং সে আমার দিদি-ভগ্নিপতির মৃত্যুর জন্যও দায়ী। একটা সুন্দর সংসার নষ্ট করে দিয়েছিল মঁসিয়ে পোয়ারো।
এই ট্রেনে রাশেটকে হত্যা করবার স্বপক্ষে সবচেয়ে জোরালো যুক্তি ছিল।
আপনি তো তাকে খুন করেননি?
না। এটা শপথ করে বলছি এক আধবার হয়তো ভেবেছি এই পর্যন্তই।
আমি ভগবানের নামে শপথ করে বলছি যে আমার স্ত্রী রাতে একবারের জন্যও কামরা ছেড়ে বেরোয়নি ঘুমের ওষুধ খেয়েছিল। কাউন্ট বললেন।
তাহলে নাম বদল করতে গেলেন কেন পাসপোর্টে? আমি চাইনি কোনো পুলিশি জেরার মুখোমুখি হোক আমার নিরাপরাধ স্ত্রী, ও খুব নরম মনের মেয়ে।
আপনাকে অবিশ্বাস করছি না এবং এও জানি আপনি অভিজাত বংশের। আপনার নিশ্চয় এটা কাম্য ছিল না যে আপনার স্ত্রী একটা বিশ্রী মামলায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু রুমালটার ব্যাপারে কি বলবেন?
রুমালটা আমার নয় মঁসিয়ে কারণ এই রুমাল আমি ব্যবহার করি না। এটা আপনি বিশ্বাস করুন, কাউন্টেস বললেন।
আপনাকে সন্দেহের তালিকায় ফেলার জন্যই কি এই রুমালটা ফেলে আসা হয়েছিল?
তা জানিনা তবে সত্যিই রুমালটা আমার নয়।
পাসপোর্টে নাম বদল করতে গেলেন কেন?
কাউন্ট বললো, যে লোকটিকে খুন করা হয়েছে তার কামরা থেকে এইচ অক্ষরের একটা রুমাল পাওয়া গেছে তাই অযথা হেলেনাকে সন্দেহ না হয় এবং জেরার ভয়ে।