আমার ধারণা কিন্তু চারজনের মধ্যেই কেউ হবেন যদি না কোনো বাইরের লোক আসে, ডাক্তার বললেন।
একটা পনের মিনিট বেজে ঘড়ির কাঁটা বন্ধ, এর দুটো ব্যাখ্যা হতে পারে। হত্যাকারী অ্যালিবাই সৃষ্টি করার জন্য ঘড়ির কাটা ঘুরিয়ে রেখেছিল কারণ যখন সে দেখল তার কামরা থেকে বেরোতে দেরি হচ্ছে। আর যদি তা না হয় তবে দ্বিতীয় হত্যাকারী যে ন্যাটা এবং স্ত্রীলোক বলে অনুমান তারও একই উদ্দেশ্য ছিল।
চমৎকার, বললেন পোয়ারো। দ্বিতীয় হত্যাকারী কামরায় ঢুকে ছোরা চালালো। যদিও রাশেট আগেই নিহত।
যখন অন্ধাকরে টের পেল যে রাশেটের পায়জামার পকেটে ঘড়ি আছে অন্ধকারেই ঘড়ির কাটা সরালো এবং ঘড়িটাকে ভেঙ্গে অচল করল তারপর ঠিকঠাক করে পকেটে রেখে বেরিয়ে গেল।
হত্যা কি একটা পনের মিনিটে হয়েছে।
ডাক্তার এবং মঁসিয়ে কুক আপনারা একমত কি হত্যা হয়েছে ঐ সময়ের পরে?
আমার বিশ্বাস পোয়ারোর ধারণা কিন্তু উনি এখন মত প্রকাশে অনিচ্ছুক, ওঁর মত বোধহয় প্রথম হত্যাকারী সম্ভবতঃ ন্যাটা। যাত্রীদের কেউ ন্যাটা আছেন কিনা সেটা খোঁজ করা উচিত।
আমি অনুসন্ধান করে দেখছি পোয়ারো বললেন।
আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন প্রত্যেককেই নিজের নাম ঠিকানা লেখার জন্য বলেছিলাম একমাত্র রাজকুমারী সন্দেহের উর্দ্ধে কারণ ওর শরীর দুর্বল, ডাক্তার বললো। ডাক্তার একটা কথা জানেন কি এটা এমন একটা কাজ যা দৈহিক শক্তির চেয়ে মনের জোর বেশি দরকার।
রাজকুমারী একজন প্রখর ব্যক্তিত্বময়ী নারী। যাই হোক এই প্রসঙ্গ থাক দশ নম্বর প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করি, পোয়ারো বললেন।
রাশেটের হত্যাকারী দুজন এটা ক্ষতস্থান পরীক্ষা করে বলা যায়। প্রথম জন চলে যাবার পর অন্ততঃ আধ ঘণ্টা পরে দ্বিতীয় আততায়ী আসে। প্রথমজন বলশালী, দ্বিতীয়জন অপেক্ষাকৃত কমজোরী এবং ন্যাটা। এর দ্বিতীয় ব্যাখ্যা আর নেই কারণ সে ডান হাতে ছোরা চালাবে আর খানিক পরে এসে নিশ্চয় বাম হাতে ছোরা চালাবে এটা কি সম্ভব।
আততায়ী যে দুজন এটাও কি সম্ভব?
সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি ডাক্তার, পোয়ারো বললেন।
.
০৩.
কয়েকটি লক্ষ্যণীয় বিষয়
পোয়ারো অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বললেন, একটা সিদ্ধান্তে এসে পৌঁছেছি। এতক্ষণ এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কেই ভাবছিলাম কিন্তু এর জন্য একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন। এই ট্রেন যেন এক চলামান পান্থশালা মঁসিয়ে কুক কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন। বিভিন্ন দেশের অপরিচিত মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে চলছে….।
এই প্রসঙ্গে আমার মনে হয়েছিল যে ট্রেনটা একদম ফাঁকাই যায় বছরের এই সময়টাতে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে এথেন্স-প্যারিস কোচটা ভর্তি। শুধু একজন টিকিট কেটেও ঠিক সময়ে পৌঁছোননি; এটা লক্ষ্য করার বিষয়।
দরজার ছিটকানিকে আড়াল করা জন্য একটা ঝোলা রাখা ছিল। শ্রীমতী হার্বাড-এর কামরা দিয়ে পাশে রাশেটের কামরায় যাবার তাতে ভোলা বা বন্ধ কিছুই বোঝার উপায় ছিল না। ঝোলাটা ওখানে ছিল কেন? শ্রীযুক্ত আর্মষ্ট্রং-এর মায়ের নাম। শ্রীযুক্ত হার্ডম্যানের গোয়েন্দাগিরি, রাশেটের কামরায় আধপোড়া চিঠি, ম্যাককুইনের বক্তব্য, রাজকুমারীর নাম, কাউন্টেস আন্দ্রেনীর পাসপোর্টে দাগ এগুলো লক্ষ্যণীয় বিষয়। এগুলো থেকে কি মনে হয় আপনাদের?
দুজনেই বুঝিয়ে দিলেন যে তারা কিছুই বুঝতে পারছেন না। কাউন্টেসের পাসপোর্টটা মেলে ধরে কুক বললেন, এই দাগটার কথা বলছেন?
হা দেখুন কোথায় লেগেছে?
আন্দ্রেনীর নামের গোড়ায় কিন্তু তাতে কি হল?
রুমালের ব্যাপারে মিস ডেবেনহ্যাম, মিস হার্বাড আর পরিচারিকা স্মিট এই তিনজন সন্দেহের তালিকায় ছিলেন কিন্তু এটা ভুললে চলবে না যে, এটা প্যারিসের এবং খুব দামী রুমাল। কিন্তু এই তিনজন সাধারণ জামাকাপড়, রুমাল ব্যবহার করেন এবং রুমালটার দাম কমসে কম দুশো ফ্র। এই রুমালটির সম্ভাব্য দাবীদার : রাজকুমারী দ্রাগোমিরফ আর…।
অবাক হলেন কুক।
ওর নাম তো নাতালিয়া।
হ্যাঁ। কথাটা মনে রাখবেন আর অন্যজন কাউন্টেস আন্দ্রেনী আর তখনই মনে হল…।
এবার আপনার। আমরা এতে নেই মশাই।
বেশ, কাউন্টেসের পাসপোর্টের দাগটা সন্দেহজনক হয়ত নিছক দুর্ঘটনা। কিন্তু ওঁর আসল নাম কি! এলেনা?
এমন তো হতে পারে ওর নামটা আসলে হেলেনা।
এটা অবশ্য অনুমানভিত্তিক।
হা কাউন্টেসের ব্যাগের লেবেলটা সেদিন ভিজে ভিজে লেগেছিল কেন? হয়ত সেদিন সেটা বদলানো হয়ে থাকে, এই হত্যাকাণ্ড কিন্তু আকস্মিক নয় পূর্ব পরিকল্পিত। আকস্মিক ব্যাপার দুটো। এক বরফ ঝড় দুই এই ট্রেনে এরকুল পোয়ারোর উপস্থিতি।
এই অবস্থার জন্য হত্যাকারী বা হত্যাকারীরা প্রস্তুত ছিল না। যদি বরফ ঝড় না হত তবে নির্দিষ্ট সময় ট্রেনটা ইতালি-সীমান্তে গিয়ে পৌঁছাত। সেই সময় হত্যাকাণ্ডের সংবাদ জানা যেত। এবং এই রকম সাক্ষ্য ইতালিয় পুলিসের কাছে দেওয়া হত। ম্যাককুইন দেখাতেন উড়োচিঠির নমুনা ব্যার্থ গোয়েন্দাগিরি শোনাতেন হার্ডম্যান। শ্রীমতী হার্বাড রহস্যময় লোকের বিবরণ শোনাতেন। বোতামটি এবং কণ্ডাক্টরের উর্দিটি বাথরুমে পাওয়া যেত। হত্যাকারীরা যে বাইরের লোক এটাই প্রমাণ করা হচ্ছে হত্যাকারী বা হত্যাকারীদের মূল উদ্দেশ্য।
কিন্তু মাঝখানে বরফ ঝড়ই সব ওলোটপালোট করে দেয়। রাশেটের কামরায় হত্যাকারী অপেক্ষা করেছিল কারণ সে হয়ত ভেবেছিল ট্রেন চলবে। কিন্তু ট্রেন না চলায় পরিকল্পনা বদল হল যে হত্যাকারী ট্রেনের মধ্যে আছে।