আপনি যদি এই রহস্যের সমাধান করতে পারেন বুঝব অসম্ভবও সম্ভব হয়। কুক বললেন।
আপনাকে ব্যাপারটা খুব ভাবাচ্ছে তাই না?
হ্যাঁ বুঝতে পারা যাচ্ছে না।
সায় দিলেন ডাক্তারও।
এরপর আমাদের করণীয় কি আছে সেটাই মাথায় আসছে না, সমাজ, লোকালয় থেকে আমরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। কোনো সাহায্য বাইরে থেকে পাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। সুতরাং সবকিছুই মাথা খাঁটিয়ে করতে হবে।
তা ঠিক, এবার তাহলে কিভাবে এগোবেন?
কেন? যাত্রীদের তথ্য এবং আমাদের পর্যবেক্ষণ এসবই তথ্য মজুদ। যাত্রীদের সাক্ষ্য থেকে কিই বা জানা গেছে?
না জানতে পারলাম। তারা জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে অনেক কিছু তথ্যই সরবারহ করেছেন।
প্রথমে ম্যাককুইনের কথা ধরুন। উনি বলেছিলেন ভ্রমণ ছিল মিঃ রাশেটের নেশা। কিন্তু বিদেশী ভাষায় দখল না থাকার ফলে সেক্রেটারী এবং দোভাষী দুই-এর কাজের জন্য তাকে বহাল করা হয়েছিল। আরও একটা সূত্র হচ্ছে যদি আমেরিকান ইংরাজী ছাড়া আর কিছুই জানা না থাকে তবে চলাফেরাই মুশকিল ছিল।
তার মানে।
ফরাসী ভাষা রাশেট জানত না। যখন কণ্ডাক্টর দরজায় টোকা মারে ভেতর থেকে ফরাসী ভাষায়ই জবাব আসে স্য ন্য রিয়, মে সুই ঐ পে। কথাটা স্পষ্ট শুনেছিলাম। ফরাসী ভাষায় দখল না থাকলে এত সুন্দর ভাবে বাক্য গঠন করা সম্ভব নয়। সুতরাং রাশেটের কামরায় নিশ্চয় অন্য কেউ উপস্থিত ছিল।
চেঁচিয়ে উঠলেন ডাক্তার।
আপনি তাই ঘড়ির ব্যাপারটাকে অত গুরুত্ব দেননি। রাশেট মৃত তার মানে একটা বাজতে তেইশ মিনিটে। এবং কামরার ভেতর থেকে হত্যাকারী কথা বলেছিল, কুক বললেন।
না না, এত তাড়াতাড়ি এগোনোর কিছু নেই। এটুকু বলা যায় যে একটা বাজতে তেইশ মিনিটে রাশেটের কামরায় এমন একজন কেউ ছিল যে অনর্গল ফরাসী ভাষায় কথা বলতে পারে।
বড় বেশি আপনি সাবধানী মঁসিয়ে।
একধাপ করে এগোনোই শ্রেয় আর এখন কোনো নিশ্চিত প্রমাণ নেই যে রাশেট সেই সময়ই মৃত।
কেন? তার একটু আগেই তো আপনার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল আর্তনাদ শুনে।
তা অবশ্য ঠিক।
এতে কতটুকু লাভ হল অবশ্য জানি না, কুক বললেন। রাশেটের পাশে একটা লোক ছিল হয়তো সেই সময়। খুনটুন করে হাত ধুচ্ছে বা চিঠিটা পোড়াচ্ছিল, তারপর সুযোগ বুঝে শ্ৰীমতী হার্বাডের কামরার মধ্যে দিয়ে পালিয়েছে। হত্যাকারী অ্যালিবাই সৃষ্টি করার জন্য ঘড়ির কাটাও আধঘন্টা পিছিয়ে দিয়েছিল।
হ্যাঁ। ঘড়ির কাঁটা একটা বেজে পনের মিনিটে বন্ধ হয়ে গেছে। ওই সময় মঞ্চ থেকে হত্যাকারী বিদায় নিয়েছিল। একটা বেজে পনের মিনিট এই সময়টা নিয়ে আমাদের প্রধান কাজ হল ওই সময়কার অ্যালিবাই সবচেয়ে নিখুঁত ছিল তা হদিশ করা।
ডাক্তার হ্যাঁ হ্যাঁ তা ঠিক।
কুকও উৎসাহিত হলেন।
মনে রাখতে হবে খুনী কখন কামরায় ঢুকেছিল। সম্ভাব্য সময় হল ভিনভোকিতে ট্রেনটা যখন থেমে ছিল।
তারপর তো করিডোরের সামনে কণ্ডাক্টর বসে ছিল।
তাহলে অন্য কাউকে কণ্ডাক্টরের পোশাকে দেখলে সন্দেহ জাগা স্বাভাবিক। সুতরাং মিশেল যখন ভিনভোকি প্ল্যাটফর্মে নামে ওই লোকটা গাড়িতে ওঠে।
এই ব্যক্তিটি মনে হয় মহামান্য যাত্রীদেরই একজন।
পোয়ারো হাসলেন।
আমি একটা তালিকা তৈরি করেছি আপনার এটা কাজে লাগে কিনা দেখুন তো।
হেক্টর ম্যাককুইন– আমেরিকান নাগরিক। ৬ নম্বর বার্থ।
দ্বিতীয় শ্রেণী কিন্তু তিক্ততা থাকা অসম্ভব নয় মৃত ব্যক্তির উদ্ভট সম্পর্কের ফলে।
অ্যালিবাই –রাত্রি বারোটা থেকে দুটো (রাত্রি বারোটা থেকে একটা ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত কর্নেল আবাথনট কর্তৃক এবং একটা পনের মিনিট থেকে দুটো পর্যন্ত কণ্ডাক্টর কর্তৃক সমর্থিত)।
বিরুদ্ধ সাক্ষ্য– কিছু নেই।
সন্দেহজনক গতিবিধি কিছু নেই।
কণ্ডাক্টর পিয়ের মিশেল– ফরাসী।
অভিপ্রায় –কিছু নেই।
অ্যালিবাই –রাত্রি বারোটা থেকে দুটো (বারোটা সাইত্রিশ মিনিটে রাশেটের কামরা থেকে যখন কথা শোনা গিয়েছিল সেই সময় পোয়ারো তাকে করিডোরে দেখেছিলেন। রাত্রি একটা থেকে একটা মোল মিনিট পর্যন্ত তার গতিবিধি কন্ডাক্টর কর্তৃক সমর্থিত)।
বিরুদ্ধ সাক্ষ্য — নেই।
সন্দেহজনক গতিবিধি –মিশেলের সুবিধে হয়েছে একটি ইউনিফর্ম পাওয়াতে নইলে সন্দেহটা তার দিকে পড়ত।
এডওয়ার্ড মাস্টারম্যান –ইংরেজ, ৪ নম্বর বার্থ, দ্বিতীয় শ্রেণী।
অভিপ্রায় –মৃত ব্যক্তির পরিচারক। ক্ষোভ থাকা অস্বাভাবিক নয়।
অ্যালিবাই– রাত্রি বারোটা থেকে দুটো (আস্তেলিও ফলকারেল্লি কর্তৃক সমর্থিত)।
বিরুদ্ধ সাক্ষ্য — নেই।
সন্দেহজনক গতিবিধি– নেই। তবে কণ্ডাক্টর পোশাকটি মাপসই হতে পারে তবে ফরাসী ভাষায় জ্ঞান না থাকা সম্ভব।
শ্ৰীমতী হাবার্ড –আমেরিকান। ৩ নম্বর বার্থ, প্রথম শ্রেণী।
অভিপ্রায় –কিছু নেই।
অ্যালিবাই –বারোটা থেকে দুটো। কিছু নেই।
বিরুদ্ধ সাক্ষ্য — কিছু নেই।
সন্দেহজনক গতিবিধি –একটি লোকের উপস্থিতি সম্পর্কে যা বলেছেন তা মিঃ হার্ডম্যান ও শ্রীমতী স্মিটের সাক্ষ্যে পরোক্ষভাবে সমর্থিত।
গ্রেটা অঁলস –সুইডিস।
অভিপ্রায় –কিছু নেই।
অ্যালিবাই –রাত্রি বারোটা থেকে দুটো ( মিস ডেবেনহ্যাম কর্তৃক সমর্থিত)।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ –শেষবারের মতো ইনিই জীবিত দেখেন রাশেটকে।
রাজকুমারী দ্রাগোমিরফ– জন্মসূত্রে রাশিয়ান। বর্তমানে ফরাসী নাগরিক। ১৪ নং বার্থ, প্রথম শ্রেণী।