আমি?
অযথা ছল করবেন না। আসলে আপনি আমার সঙ্গে নিভৃতে কথা বলতে চান তাই তো?
আপনি সত্যিই বুদ্ধিমতী।
আসল ব্যাপার হলো আপনি বুঝেছেন যে এই খুনের ব্যাপারে আমি কিছু জানি এই তো?
তাহলে মাদমোয়াজেল খুলেই বলি, সিরিয়া থেকে আসবার পথে কোনিয়া স্টেশনে কর্নেল আর আপনি পায়ের খিল ছাড়াতে নামেন। সেই সময় দুটো কথা আমার কানে আসে সেটা হল, না না এখন নয়, সব মিটে গেলে…কথাগুলোর মানে সত্যি বলবেন মাদমোয়াজেল….?
আশ্চর্য রকমের শান্ত মেরীর গলা।
আপনার কি মনে হয় তার মানে খুন?
দুটো কথার মানে জানতে চাইছি মাদাম।
আমি আপনাকে বলতে পারছি না কারণ আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে রাশেটকে এর আগে কখনও দেখিনি তা আমি শপথ করে বলতে পারি।
তাহলে কেন আপনি প্রত্যাখান করছেন?
সেভাবে ধরলে তাই। একটা কর্তব্যের দায়িত্ব প্রসঙ্গেও কথা বলেছিলাম।
এখন কি সেই কাজ শেষ হয়েছে?
আপনি কি বলতে চান? আপনার হঠাৎ এ কথা মনে হল কেন?
ইস্তাম্বুলে আসার দিন ট্রেন দেরি করার ফলে আপনি অত্যন্ত উত্তেজিত ছিলেন যেটা আপনার স্বভাবে নেই।
পরের ট্রেনটা ধরা জরুরী ছিল।
এই ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস তো সপ্তাহে সাতদিন ট্রেনটা চলে। বড় জোর চব্বিশ ঘন্টা দেরি হত সেটা এমন কিছু জীবনমরণ সমস্যা নয়।
একটা ট্রেন যদি ঠিকমত না ধরা যায় তবে পরের কাজগুলোও ভেস্তে যায়। আমি ব্যস্ত হয়ে থাকলেও অবাক হবার কারণ নেই।
তা ঠিক। তবে আমার আশ্চর্য লাগছে অন্য কারণে। আমরা তো এখানে অনেকক্ষণ ধরে আটকে আছি তাতে কোনো বিকার লক্ষ্য করছি না আপনার। কি হলো উত্তর দিন মাদাম। মেরী ডেবেনহ্যাম মনে মনে রেগে গেলেন।
আপনি কি বেশি কষ্ট কল্পনা করছেন না মঁসিয়ে পোয়ারো?
হতে পারে। একটু বেশি সন্দেহপ্রবণ হয় গোয়েন্দারা নিশ্চয় জানেন। কর্নেল আবাথনটকে আপনি কতটা চেনেন? একটু আশ্বস্ত মেরী কথার পরিবর্তনে।
এইবারেই আলাপ।
রাশেট কে যে উনি চিনতেন এ বিষয়ে আপনার কি কোনো সন্দেহ হয়?
না আমি নিঃসন্দেহ এ ব্যাপারে।
কেমন করে বুঝলেন?
ওঁর কথাবার্তায়।
আমরা একটা পাইপ ক্লিনার মিঃ রাশেটের কামরা থেকে পেয়েছি এবং একমাত্র কর্নেলই এই পাইপ খান।
তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিলেন পোয়ারো কিন্তু মেরীর মুখের রেখার কোনো পরিবর্তন দেখলেন না।
কর্নেলের রাশেট কেন কাউকেই খুন করবার মানসিকতা নেই। ওঁর স্বভাববিরুদ্ধ অত নাটকীয়তা।
মনে মনে সমর্থন হয়তো বা করলেন পোয়ারো।
এতটা নিশ্চিত হলেন কি করে? আপনি তো ভালো করে ওঁকে চেনেনই না।
মানুষের ধরনধারণ দেখলেই বোঝা যায়।
ঐ কথাটার মানেটা তাহলে আপনি বলবেন না।
না।
আমি ঠিক বের করে ফেলব দেখবেন।
মেরী আর কর্নেল দুজনকেই পরোক্ষভাবে কথাগুলো বলে কি ভালো হল, কুক বললেন।
দরকারে ফাদ একটু পাততেই হয়।
পরের কামরায় শ্রীমতী স্মিটের হাতব্যাগের জিনিষপত্র পরীক্ষা করার পর সুটকেশ খুললেন তাতে চাবি দেওয়া ছিল না।
একটা কণ্ডাক্টরের পোশাক ওপরে ভাঁজ করা ছিল। শ্রীমতী স্মিট চেঁচিয়ে উঠলেন। বললেন, আমি এসবের কিছু জানি না। ইস্তাম্বুল ছাড়ার পর একবারও বাক্সই খুলিইনি।
আপনাকে আমরা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি। আপনার ভেঙে পড়ার কিছুই নেই। আপনি সত্যিই ভালোমানুষ এবং আপনার রান্না প্রশংসার দাবী রাখে।
ইল্ডগ্রেদ ভয়ার্ত মুখে চুপ করে গেলেন।
এবার পোয়ারো আসল রহস্যটা বললেন এই যে শ্রীমতী স্মিটের সঙ্গে লোকটার ধাক্কা লাগার পর তাড়াতাড়ি পোশাকটা লুকিয়ে রাখতে চায় কিন্তু সমস্ত কামরায় তোক ভর্তি থাকার ফলে এই কামরা খালি পেয়ে সুটকেশ খুলে তাড়াতাড়ি রেখে দেয়।
দেখা যায় জামাটার বোম নেই এবং কণ্ডাক্টরের পকেটে চাবিটাও মজুত।
তাহলে ওসব দরজার হুড়কো ছিটকিনি কোনো কিছুই কাজে আসেনি। এই বাবাজীর কাছে সব খোল চাবিটিই। কুক বললেন।
তারপর মনে আছে শ্রীমতী হার্বাডের কামরার করিডোরের দিকের দরজাটাও বন্ধ ছিল ভেতর থেকে, মিশেল বলেছিল।
হ্যাঁ মঁসিয়ে, ভদ্রমহিলা যে স্বপ্ন দেখেছেন নিশ্চয় এটা সেইজন্যই বলেছিলাম।
এখন শুধু লাল কিমানোটা খুঁজতে বাকি, পোয়ারো বললেন।
হ্যাঁ শেষ কামরার দুটো দুজন পুরুষের।
ম্যাককুইন হেসে বলল, বুড়ো যদি একটা উইলটুইল করে থাকে তাহলে ফোকটে কিছু দাও মারা যাবে।
সন্দেহ ভরা চোখে কুক তাকাতে একটু অপ্রস্তুত হল ম্যাককুইন।
না না আমায় উনি টাকাপয়সা দিতে যাবেনই বা কেন। আমি ঠাট্টা করছি, আমি ওঁর চাকর ছাড়া আর কিছুই ছিলাম না।
মাস্টারম্যান আর ফলকারেল্লির কামরায় কিছুই পাওয়া গেল না।
সব কিছুর শেষে পোয়ারো বললেন, কিচেন কামরার দিকে যাওয়া যাক। তদন্ত শেষ, এবার বুদ্ধির খেলা।
সিগারেট ফুরিয়ে যাবার ফলে নিজের কামরায় যেতে পোয়ারো ভাবতে লাগেলেন যদি লাল কিমানোটা পাওয়া যেত তবে একটা সূত্র পাওয়া যেত। নিজের কামরায় এসে ছোট্ট বাক্সটা খুলে ভাবলেন যদি সিগারেট থাকে। তার চোখ বড় হয়ে উঠল।
সমস্ত জিনিষপত্রের উপর নিপুণভাবে ভাঁজ করে রাখা আছে একটা লাল সিল্কের কিমানো এবং তাতে ড্রাগন আঁকা আছে।
পোয়ারো মৃদুস্বরে বললেন, চ্যালেঞ্জ! বেশ আমি তা গ্রহণ করলাম।
৩. তৃতীয় পর্ব : পোয়ারোর ভাবনাচিন্তা
তৃতীয় পর্ব : পোয়ারোর ভাবনাচিন্তা
০১.
কোনো জন?
পোয়ারো কিচেন কামরায় এসে দেখলেন কুক এবং ডাক্তার কথাবার্তা বলছিলেন।