শ্ৰীমতী হার্বাডের কাছ থেকে উনি কখন অ্যাসপিরিন চাইতে যান?
এই সাড়ে দশটা নাগাদ।
কতক্ষণের জন্য বাইরে ছিলেন?
তা মিনিট দশেক হবে।
আর সারারাত বাইরে যাননি?
না। পোয়ারো ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনার কি মনে হয় ঐ সময় রাশেটের খুন হয়েছে?
না মনে তো হয় না।
আপনার সহযাত্রিনীটিকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলবেন ওনার কোনো সমস্যাই হবে না।
ধন্যবাদ। বেচারী ভীষণ মুষড়ে পড়েছিলেন যে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
মেরী ডেবেনহ্যাম চলে গেলেন।
.
১১.
জার্মান পরিচারিকার সাক্ষ্য
আপনি ঠিক কি চাইছেন এখনও বোধগম্য হল না, বলে কুক তাকিয়ে রইলেন পোয়ারো দিকে।
কোথাও একটা ভুল হয়েছে সেটাই খুঁজতে হবে।
ভুল?
হ্যাঁ। আমার তদন্তের ধারা সম্বন্ধে আগের তরুণীটির ধারণা ছিল না।
সন্দেহ কি তাহলে ওঁকেই করছেন। ওঁকে দেখলে তো বোঝাই যাবে না যে উনি এই ব্যাপারে জড়িত আছেন।
আমার এবং কুকের সেই একই মত।
এই হত্যাকাণ্ডটা যে আকস্মিক এটা দুজনেই বেশ বলছেন বারবার।
সত্যি বলতে কি মিস্ ডেবেনহ্যামকে সন্দেহ করি দুটো কারণে।
এক ওর সংলাপগুলো হঠাৎ শুনে ফেলার দরুণ আমার ঠিক ভালো লাগেনি।
মেরী ডেবেনহ্যাম কর্নেল আবাথনটকে যে কথাগুলো বলতে শুনেছিলেন সেই গুলো পোয়ারো জানালেন।
তাহলে তো মিস ডেবেনহ্যাম এবং কর্নেল দুজনেই জড়িত। কুক বললেন, দুজনে দুজনের হয়ে সাফাই গাইলেন এটাই তো স্বাভাবিক ছিল।
কিন্তু তা হয়নি। পোয়ারো বললেন, মিস ডেবেনহ্যামের গতিবিধি সম্পূর্ণ অপরিচিত সুইডিস মহিলা এবং কর্নেলের মিঃ ম্যাককুইন সমর্থন করেছেন। না না, ব্যাপারটার সমাধান এত সোজা নয়।
দ্বিতীয় বক্তব্যটা কি।
ও, ওটা পুরোপুরি মনস্তাত্বিক। আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম এই অপরাধ করা কি সম্ভব মিস ডেবেনহ্যামের পক্ষে; কারণ এর পেছনে বিচক্ষণ ঠান্ডা মাথার ব্যক্তি আছেন উত্তর পেলাম হা মিস্ ডেবেনহ্যাম অপরাধী হলেও হতে পারেন।
না না, এই ইংরেজ তরুণীটির উপর মনে হয় অযথা অবিচার করছেন।
যাক গে এবার ইল্ডগ্রেদ স্মিটকে ডাকুন।
ভদ্র, মার্জিত জার্মান পরিচারিকাটি এসে দাঁড়ালেন পরে বসতে বললেন পোয়ারো।
সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণে কথাবার্তা বললেন পোয়ারো।
নাম, ঠিকানা লেখার পর কথাবার্তা চলছিল জার্মান ভাষায়।
আপনি কাল রাতে কি কি করেছিলেন যা হয়তো অনেক অপ্রাসঙ্গিক সেগুলোও তদন্তের স্বার্থে বলুন।
ঠিক বুঝলাম না মঁসিয়ে।
তাহলে প্রশ্ন করি কাল রাত্রে আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তো আপনার কর্ত্রী?
হ্যাঁ।
সময়টা মনে আছে?
না। আমাকে কণ্ডাক্টর যখন ডাকে আমি ঘুমিয়েছিলাম।
এমনটা কি প্রায়ই করেন আপনার কী?
হ্যাঁ। রাতে ভালো ওঁর ঘুমই হয় না অবশ্য শরীর তো খারাপ হতেই পারে।
আপনি তাড়াতাড়ি নিশ্চয় বেরিয়ে পড়েন ড্রেসিং গাউনটা চাপিয়ে?
না তাহলে তো উনি রাগ করতেন।
লাল রং-এর তো একটা ড্রেসিং গাউন আছে আপনার তাই তো?
না তো ওটা গাঢ়নীল ফানেলের।
ও! আপনি তো গেলেন তারপর?
একটু গা হাত পা টিপে দিই এবং বই পড়ে শোনাই। অবশ্য চেঁচিয়ে পড়া আমার পোষায় না। তার পর ওঁর ঘুম এসে যাবার ফলে নিজের কামরায় চলে আসি।
তখন কটা বেজেছে?
জানি না।
কতক্ষণ ছিলেন রাজকুমারীর কামরায়?
আধঘন্টা মতো হবে।
তারপর?
উনি ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছিলেন বলে একটা বাড়তি কম্বল এবং খাবার জল দিই তারপর উনি চলে যেতে বলায় আমি আলো নিভিয়ে চলে আসি।
তারপর?
নিজের কামরায় এসে শুয়ে পড়ি।
করিডোরে ফেরার পথে কারোর সাথে দেখা হয়েছিল?
না তো।
পিঠে ড্রাগন আঁকা লাল কিমাননা পরা কোনো মহিলা?
শুধু কণ্ডক্টর ছাড়া আর সবাই ঘুমোচ্ছিল।
কণ্ডাক্টরকে দেখেছিলেন?
হ্যাঁ।
সে কি করছিল?
একটা কামরা থেকে বেরিয়ে আসছিল।
কোন কামরা?
ও নিয়ে অত ভাববার কিছুই নেই রাতবিরেতে দরকার পড়লে আমরা ডেকেই থাকি তবু যদি বলেন কোনো কামরা?
রাজকুমারীর কামরার দু তিনটে দরজা পরে কোচের মাঝামাঝি জায়গায়।
তারপর কি হলো?
আমি কম্বল নিয়ে ঠাকুরণের ঘরের দিকে যেতে ওর সঙ্গে প্রায় ধাক্কা লেগেছিল। ও তখন মাপ চেয়ে খানাকামরায় চলে যায়। অবশ্য এর মধ্যে অন্য একটা কামরা থেকে ঘন্টার আওয়াজ হয় সে কানও দেয়নি। আচ্ছা এসব জিজ্ঞাসা করার অর্থ কি?
না এমনিই। কণ্ডাক্টরদের অবস্থা দেখুন এদের অন্যের খিদমতগারী করতে করতেই কেটে যায়।
এই কণ্ডাক্টর আর যে ডেকেছিল আমাকে, তারা কিন্তু এক লোক নয়। এই কণ্ডাক্টর মানে যার সাথে ধাক্কা লাগে আমার।
সেকি? অন্য কেউ? একবারও তাকে দেখেছিলেন?
না।
যদি আবার দেখেন চিনতে পারবেন?
আশা করি পারব।
কুকের কানে কানে নির্দেশ দেবার পর উনি বেরিয়ে গেলেন।
আপনি আমেরিকা গেছেন কখনও?
না তবে যা শুনেছি চমৎকার জায়গা।
তা আপনি নিশ্চয় শুনেছেন নিহত ব্যক্তি একটি ফুটফুটে মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল?
শুনেছি, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে মানুষ এত নৃশংস হয়।
আচ্ছা এই রুমালটা কি আপনার?
রুমালটা নিয়ে দেখে বলল যে এটা তার নয়।
এইচ লেখা আছে। আপনার নামের প্রথম অক্ষরও এইচ সেইজন্যই ভেবেছিলাম রুমালটা আপনার।
না না, এত দামী রুমাল ব্যবহার করি না। সূতোর নকশা দেখে মনে হয় এটা প্যারিসের।
এটা আপনার বা আপনি জানেন না এটা কার?
না না আমি কেমন করে জানব!
শ্ৰীমতী স্মিটের গলায় মুহূর্তের দ্বিধা ছিল তা পোয়ারোর কাছে ধরা পড়ল।