কিছু জানেন হত্যাকারী সম্পর্কে?
একটা বর্ণনা উনি আমায় দিয়েছিলেন।
একজন ছোটোখাটো মানুষ গাঢ় বাদামী চেহারা, মেয়েলি কণ্ঠস্বর। এবং এও বলেছিলেন যে প্রথম রাতে হয়তো কিছু হবে না অতর্কিতে দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় রাতে।
তাহলে সবই জানতেন মিঃ রাশেট, বললেন মঁসিয়ে কুক।
হ্যাঁ, সবই চেপে রেখেছিলেন অন্ততঃ ম্যাককুইনের কাছে ওঁর মনিব।
আচ্ছা মিঃ হার্ডম্যান ওঁর জীবনহানির ভয় ছিল কেন জানেন?
না। উনি সেটা বলতে চাননি। আততায়ী ওঁর রক্তদর্শন করতে চায় এটাই বলেছিলেন।
আপনি কি ওঁর আসল পরিচয় জানেন?
কোনো লোকটির?
রাশেটের।
আপনি কি বলতে চাইছেন সেটা ঠিক বুঝতে পারছি না।
রাশেটের আসল নাম কাসেট্টি। আর্মষ্ট্রং হত্যা মামলার মূল গায়েন।
আচ্ছা তাই নাকি! না সত্যিই আমি চিনতে পারিনি। যখন ডেইজি মামলা চলছিল তখন আমি পশ্চিমে গেছিলাম। তবে ছবিটবি দেখেছিলাম তবু ফোটোগ্রাফারদের যা গুণ নিজের মা বাপকেই চিনতে অনেক সময় বেশ নষ্ট হয়। তাহলে রাশেটের তো অনেকজন শত্রু ছিল।
রাশেট বর্ণিত হত্যাকারীর সঙ্গে আর্মষ্ট্রং পরিবারের কারোর কি মিল আছে বলতে পারেন?
না। সবাই তো মারা গেছেন বলেই জানি।
একটা মেয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল জানালা দিয়ে মনে আছে।
হ্যাঁ হ্যাঁ। মেয়েটি বিদেশী ছিল। তাই তার আত্মীয়স্বজনের জানাটা বিচিত্র নয়। তবে আরও তো মামলা ঝুলছিল কাসেট্টির সেই সময় কাজেই সেটা ডেইজি হত্যা মামলা না হয়ে অন্য কোনোও হতে পারে।
ডেইজি হত্যার ঘটনা এই নৃশংস খুনের কারণ তার প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।
মিঃ পোয়ারো আমি ডেইজি হত্যা মামলা সম্পর্কে কিছুই জানি না।
কাল রাতে কি কি ঘটেছিল সেটা বলে যান।
আমার বক্তব্য খুবই কম। আমি দিনে ঘুমিয়ে রাতে জেগে নজর রাখতাম। প্রথম রাতে সন্দেহজনক কিছুই ঘটেনি। কাল রাতেও তাই দরজা ফাঁক করে উঁকিও দিয়েছিলাম কিন্তু কোনো আগন্তুকও চোখে পড়েনি।
আপনি নিশ্চিত?
নিশ্চয়ই। এ আমি হলফ করে বলতে পারি যে বাইরে থেকে কোনো লোক ট্রেনে ওঠেনি আর পেছনের কোচ থেকে কেউ এদিকে আসেনি।
আপনি দরজার ফাঁক দিয়ে কি কণ্ডাক্টরকে দেখতে পাচ্ছিলেন?
হ্যাঁ। ও তো বসে ছিল।
ভিনভোকি ছাড়বার পর একবারও নিজের জায়গা জেড়ে অন্যত্র গিয়েছিল কি?
– হ্যাঁ। দুবার। ট্রেন থেমে যাবার ঠিক পরেই ঘন্টার আওয়াজে সাড়া দিতে যায়। পেছনের কোচে যায় সে আমার সামেন দিয়েই, সেখানে মিনিট পনেরো ছিল। কেউ মনে হয় পাগলের মতো ডাক ঘন্টা বাজাচ্ছিল তাই শুনে দৌড়ে আসে। আমিও বাইরে বেরিয়ে যাই কি হয়েছে দেখতে। মনে হয় আমেরিকান প্রৌঢ়াটির কাণ্ড। তার অন্য কামরায় ডাক পড়তে সেখানে জলের বোতল নিয়ে যায়। শেষে বিছানা পাতার তলব আসে তারপর আর নড়েনি নিজের জায়গা ছেড়ে।
ঘুমোচ্ছিল কি?
হতে পারে খুঁটিয়ে দেখিনি।
এই কাগজটাতে সই করে দিন।
আপনাকে যদি দরকার পড়ে কেউ কি এমন আছে যে আপনার প্রকৃত পরিচয় জানে।
এই ট্রেনে? না বোধহয়। তবে ম্যাককুইনের বাবার দপ্তরে কয়েকবার গেছি। কিন্তু অত ভীড়ে আময় চিনে রাখাটা মোটেই সম্ভব নয়। তবে নিউইয়র্কে আপনি বরং জেনে নিতে পারেন এবং আমি সত্যি কথাই বলছি এবং আপনার সাথে আলাপ করে আমি খুবই খুশী হয়েছি।
মিঃ হার্ডম্যানের দিকে সিগারেটকেসটা এগিয়ে দিলেন পোয়ারো।
আপনি কি পাইপ পছন্দ করেন?
না। হার্ডম্যান সিগারেট তুলে নিয়ে হালকা পায়ে বেরিয়ে গেলেন।
কি মনে হয় আপনাদের লোকটার পরিচয় কি সত্যি?
ডাক্তার কনস্টানটাইন বললেন।
হ্যাঁ। মনে হয় না সাহস পাবে মিথ্যে কথা বলবার।
উনি কিন্তু একটা দরকারী তথ্য দিলেন যা হলো হত্যাকারীর বর্ণনাটা, বললেন কুক।
হ্যাঁ।
পোয়ারো বললেন, বর্ণনাটি এমনই যে কোনো মিল নেই এই ট্রেনের যাত্রীদের সঙ্গে।
.
০৯.
ইতালিয়ান যাত্রীর সাক্ষ্য
আন্তেলিও ফলকারেল্লি হাজির হলেন সাক্ষ্য দেবার জন্য। ইতালিয়ান মার্কা চেহারা সুন্দর স্বাস্থ্য লালচে রঙ, মুখে শিশুর সারল্য। একটু ইতালিয় ঘেঁষা চমৎকার ফরাসী ভাষায় কথা বলেন।
আপনার নাম আস্তেলিও ফলকারেল্লি।
হ্যাঁ।
বর্তমানে আমেরিকার নাগরিক?
হ্যাঁ, ব্যবসার সূত্রে।
আপনি ফোর্ড মেরি কোম্পানির এজেন্ট?
হ্যাঁ।
একবার কথা শুরু করলে থামতেই চান না। বললেন ব্যবসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য।
আপনি তাহলে আমেরিকায় বছর দশেক আছেন?
হ্যাঁ। তারপর স্মৃতিচারণ করলেন মা এবং বোনের।
যিনি খুন হয়েছেন আপনার সঙ্গে কি তার আলাপ পরিচয় ছিল?
না, ওরা ওপর তলার আর আমরা তার সঙ্গে মেশার সুযোগ পাব কি করে বলুন তবে বোঝা যায় উনি খুব সুবিধের ছিলেন না।
ঠিকই ধরেছেন ও কুখ্যাত খুনে আর ছেলে ধরা।
দেখলেন তো এই শর্মা মানুষ চিনতে ভুল করে না।
আর্মস্ট্রং মামলার কথা মনে আছে?
মনে নেই তবে চেনা চেনা লাগছে একটা ছোট্ট মেয়েকে চুরি করা হয়েছিল…
হ্যাঁ খুবই দুঃখের।
ঠিক কিন্তু খুবই আজব দেশ আমেরিকা।
আপনি আর্মষ্ট্রং পরিবারের কাউকে চিনতেন?
না। তবে বলা শক্ত যখন ওখানে গেলাম….।
হাতে সময় কম। পোয়ারো বললেন, কাজের কথায় আসি।
কাল রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর কি করছিলেন?
রাতে খাওয়ার পর খাবার টেবিলে ঐ আমেরিকান ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছিলাম। ঐ যে যিনি টাইপের রিবন বেচেন। তারপর নিজের কামরাতেই চলে আসি। আমার সহযাত্রীটি মশাই এক গোমড়া মুখো ইংরেজ, যিনি মারা গেছেন তার পরিচারক। আমি কামরায় গিয়ে ওকে দেখতে পাইনি বোধহয় প্রভুর খিদমদগারী করতে গিয়েছিল। ফিরলেন যখন গোমড়া মুখ করে। কথাবার্তা তো বললেনই না একখানা কেতাব খুলে বসলেন, তারপর কণ্ডাক্টর বিছানা ঠিক করে দিতে এল। চার আর পাঁচ নম্বর বার্থ তো?