আমি সত্যিই লক্ষ্য করিনি।
আপনি তো সেনাবাহিনীর লোক আপনার নিশ্চয় পর্যবেক্ষণ শক্তি অন্য কারো তুলনায় বেশি।
না মনে করতে পারছি না। একবার বোধহয় কণ্ডাক্টর গিয়েছিল। তারপর… একজন মহিলা। মৃদু খন খন আওয়াজ পেয়েছিলাম জামাকাপড়ের আর এক ঝলক মিষ্টি গন্ধ….
দামী সেন্টের? ভদ্রমহিলা বয়স্কা না তরুণী? হয়তো।
তখন হতে পারে রাত তেমন গভীর নয়। আসলে সঠিক সময়টা বলতে পারব না। কিন্তু মনে হয় সেটা ভিনভোকি ছাড়ার পর।
এরকম মনে হল কেন?
অনেক রাতে আমরা রাশিয়া নিয়ে আলোচনা করছিলাম সেটা নিশ্চিত।
আপনি আমেরিকায় গেছেন কখনও?
না তেমন ইচ্ছাও নেই।
কর্নেল আর্মস্ট্রং নামে কাউকে চেনেন।
আর্মষ্ট্রং! আর্মস্ট্রং, দু তিনজনকে চিনি একজন টনি আর্মষ্ট্রং আর একজন সেলবি আর্মষ্ট্রং… কিন্তু উনি তো মারা গেছেন।
আমি যার কথা বলছি তিনি একজন আমেরিকান মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তার একমাত্র সন্তানকে অপহরণ করা হয়।
ও হা হা। কাগজে পড়েছিলাম তবে ওনার সঙ্গে আলাপ ছিল না। শুনেছি খুবই জনপ্রিয় এবং ভিক্টোরিয়া ক্রসও পেয়েছিলেন।
তিনিই হত্যাকারী ঐ শিশুটির যিনি এই ট্রেনে নিহত হয়েছেন।
কঠোর হয়ে উঠল কর্নেলের চোখ মুখ।
তবে তো ভালোই হয়েছে যদিও এইসব ক্ষেত্রে আইন আদালতের আশ্রয় নেওয়াই ভালো।
আপনি বোধ হয় ব্যক্তিগত প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করেন না?
না। অনর্থক রক্তপাত হৈ চৈ আমার রুচিবিরুদ্ধ।
আমার আর কোনো জিজ্ঞাসা নেই শুধু একটা কথা, কাল রাতে কোনো সন্দেহজনক কিছু দেখেছিলেন?
কর্নেল দু এক মুহূর্ত দ্বিধা করলেন।
না মানে। আমি কামরায় ফিরে যাবার সময় ষোলো নম্বরের ভদ্রলোক মাথা উঁচু করে উঁকি দিচ্ছিলেন। আমাকে দেখেই ভেতরে ঢুকে যান অবশ্য এ আর এমন কি?
ধন্যবাদ কর্নেল আমার আর কোনো প্রশ্ন নেই।
আমি শুধু বলতে চাই মিস ডেবেনহ্যামকে সন্দেহ করবেন না। উনি একজন সাচ্চা ইংরেজ।
মিঃ রাশেটের কামরা থেকে পাইপ ক্লিনার পাওয়া গেছে এবং কর্নেল পাইপ খান এবং মিঃ রাশেট শুধুই সিগার খেতেন। বললেন পোয়ারো।
আপনার ধারণা কি?
এক কর্নেল আবাথনটই স্বীকার করেছেন উনি পাইপ খান এবং আর্মষ্ট্রং-এর নাম শুনেছেন এবং যা বলেছেন তার থেকে বেশিও হতে পারে।
অর্থাৎ হতে পারে কর্নেলই….
না না। একজন সম্ভ্রান্ত ফৌজী অফিসার কখনই একাজ করতে পারেন না। এবং তা মনস্তাত্বিক দিক দিয়ে অসম্ভব।
.
০৮.
মিঃ হার্ডম্যানের সাক্ষ্য
প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের মধ্যে তিনিই সর্বশেষ ব্যক্তি। সুপ্রভাত, বলুন কি সাহায্য করতে পারি?
খুনের ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চয় শুনেছেন মিঃ হার্ডম্যান?
হ্যাঁ।
আমাদের সব যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা কর্তব্য। স্বচ্ছন্দে। এটাই তো কাজ।
পাসপোর্ট দেখলেন পোয়ারো, আপনি সাইরাস রেথম্যান হার্ডম্যান। আমেরিকার নাগরিক, বয়স একচল্লিশ। টাইপরাইটিং কোম্পানির ভ্রাম্যমান এজেন্ট।
হ্যাঁ।
ইস্তাম্বুল থেকে প্যারিসে যাচ্ছেন?
হ্যাঁ।
কারণ?
ব্যবসা।
প্রথম শ্রেণীতেই যাতায়াত করেন সবসময়?
হ্যাঁ। কোম্পানির খরচাতেই।
কাল রাতের ব্যাপার কতটুকু বলতে পারেন?
কিছু না।
সে তো হয় না। কালরাতে খাবার পর আপনি কি করছিলেন?
একটু ভেবে বললেন, আমি জানতে চাই আপনারা এসব জিজ্ঞাসা করার কে?
ইনি মঁসিয়ে কুক রেল কোম্পানির ডিরেক্টর আর উনি ডাক্তার মৃতদেহ পরীক্ষা করেছিলেন।
আর আপনি?
আমি এরকুল পোয়ারো, এই হত্যার তদন্তের ভার আমাকে নিয়োগ করা হয়েছে কোম্পানির তরফ থেকে।
আপনার নাম আমি শুনেছি। আমার সত্যি পরিচয়টা জানিয়ে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আমারও তাই মত।
আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না তবুও নৈতিক দায়িত্ব কিছু থেকেই যায় তাই বলছি। বলে একটা কার্ড দিলেন তিনি পোয়ারোকে।
মিঃ সাইরাস বি হার্ডম্যান।
ম্যাকনীলস ডিটেকটিভ এজেন্সী।
নিউ ইয়র্ক।
পোয়ারো এর আগেই এই ফার্মের সাথে পরিচিত তবুও বললেন, এর অর্থ?
আমি ইস্তাম্বুলে এসেছিলাম। ওখানে কাজ হয়ে যাওয়ার পর ফিরে যাব তারপর এই চিঠিটা পাই।
চিঠিটা পড়লেন পোয়ারো ওপরে তোকাতলিয়ান হোটেলের ঠিকানা :
প্রিয় মহাশয়,
বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারলাম আপনি ম্যাকনীলস ডিটেকটিভ কোম্পানির কর্মী। যদি অনুগ্রহপূর্বক আজ বিকেল চারটায় এই হোটেলে সাক্ষাৎ করেন তবে বিশেষ বাধিত হব।
নমস্কারান্তে
ভবদীয়
এম. ই. রাশেট
বুঝলাম।
বললেন পোয়ারো।
আমি সময় মতোই রাশেটের সাথে দেখা করি উনি দুটো উড়ো চিঠি আমায় দেখিয়েছিলেন।
মিঃ রাশেট কি খুব ভয় পেয়েছিলেন?
ওনার মুখের ভাবে উনি প্রকাশ করেননি কিন্তু মনে মনে যথেষ্ট মুষড়ে পড়েছিলেন। একই ট্রেনের যাত্রী হওয়ার ফলে উনি চেয়েছিলেন যাতে ওঁর নিরাপত্তার সম্পূর্ণ ভার আমি নিই কিন্তু সব চেষ্টাই বৃথা হল।
উনি কি কোনো নির্দেশ দিয়েছিলেন নিরাপত্তার বিষয়ে?
হ্যাঁ। উনি বলেছিলেন ট্রেনে পাশের কামরাটাতেই আমি থাকব। কিন্তু ভাগ্যের বিপর্যয় আমার জুটল ষোল নম্বর কামরা। অবশ্য কাজ করার পক্ষে এটা সবচেয়ে সুবিধা ছিল। নজরও ভালো রাখা যেত। সামনে শুধু খানাকামরা আর প্ল্যাটফর্মে নামবার দরজাটা তাও সেটাতে হুড়কো লাগানো থাকে। একমাত্র বাইরে থেকে ঢুকবার রাস্তা পেছনের ছোট দরজাটা আর নয়তো ট্রেনের একদম পেছন থেকে করিডোর ধরে সোজা এগিয়ে আসা। আমার কামরাটা এমনই জায়গায় যে ফাঁকি দেওয়ার রাস্তাই নেই।