আপনার ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই।
রাজহংসীর মতো কাউন্টেস আন্দ্রেনী ঘরে ঢুকলেন।
আপনারা আমায় ডেকেছেন?
হা মাদাম কর্তব্যের খাতিরেই।
আমি জানতে চাই কাল রাতে আপনি….
আমি ঘুমিয়েছিলাম।
ঐ আমেরিকান ভদ্রমহিলা অত হৈ চৈ করলেন পাশের কামরায়….।
একটা ওষুধ খাওয়ার ফলে ঘুম ভাঙেনি।
আপনার পাসপোর্টে নাম ধাম যা আছে সব সত্যি তো?
নিশ্চয়ই।
তাহলে একটা সই করে দিন।
সই করে দিলেন কাউন্টেস এলেনা আন্দ্রেনী।
মাদাম আপনি কি স্বামীর সঙ্গে আমেরিকায় ছিলেন?
মেয়েটির মুখ ঈষৎ লাল হলো।
না। আমাদের মোটে এক বছর হলো বিয়ে হয়েছে।
ধন্যবাদ। আচ্ছা আপনার স্বামী কি ধূমপান করেন?
হা।
পাইপ?
না। সিগারেট আর সিগার।
কাউন্টেস আন্দ্রেনী উঠে দাঁড়ালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
এমনটাই জানেন তো গোয়েন্দারা এরকম উদ্ভট প্রশ্ন করেই থাকে। আপনার ড্রেসিং গাউনটা কি রং-এর?
কাউন্টেস হেসে উঠলেন।
গমের দানার রং-এর সিফন। সত্যিই অদ্ভুত প্রশ্ন কিন্তু এটা জানা কি দরকার ছিল?
নিশ্চয়ই।
সত্যিই আপনি গোয়েন্দা! যুগোশ্লাভিয়ার কোনো গোয়েন্দা এই ট্রেনে থাকতে পারেন ভাবতেই পারিনি।
আমি কোনো একটা দেশের গোয়েন্দা নই আমার বিচরণ সর্বত্রই। বেশির ভাগ সময়ই লণ্ডনে থাকি। ইংরেজী বলতে পারেন আপনি?
ঠিক আছে আর আটকাব না।
মাথাটা নুইয়ে খানাকামরা ছেড়ে গেলেন এলেনা।
কুক রূপের প্রশংসা করে জিজ্ঞাসা করলেন তার কাজ এখনো কতদূর?
কোথায় আর এই দম্পতি তো ঘুমিয়েই কাটিয়েছেন।
এবার ইতালিয়ানটাকে ডাকা যাক।
পোয়ারো কোনো জবাব না দিয়ে ব্যস্ত ছিলেন পাসপোর্টের দাগ লাগা জায়গাটা নিয়ে।
.
০৭.
কর্নেল আর্বাথনটের সাক্ষ্য
কর্নেল আবাথনটের ফরাসী ভাষা জ্ঞান কম থাকার ফলে ইংরেজীতেই সমস্ত কিছু অর্থাৎ নাম, ধাম বয়স, পেশা জিজ্ঞাসা করার পর বললেন ভারতবর্ষ থেকে ছুটিতে কি দেশে যাচ্ছেন?
হ্যাঁ।
কিন্তু জাহাজে গেলেন না কেন?
এটা একান্তই ব্যক্তিগত।
ভারতবর্ষ থেকে সোজা আসছেন?
একটু কাজ ছিল বাগদাদে।
কর্নেলকে এই সব প্রশ্ন করায় একটু অসন্তুষ্ট হলেন।
বাগদাদে তিনদিন ছিলেন। বাগদাদ থেকে তো ইংরেজ তরুণীটিও আসছেন, ওঁর সঙ্গে কি বাগদাদেই আলাপ?
না। ট্রেনেই কারকুক থেকে নিসিবিন যাওয়ার পথে।
কিছু মনে করবেন না কর্নেল একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি বলে। মিস্ ডেবেনহ্যাম সম্পর্কে আপনার ধারণা কি?
আপনার এই প্রশ্নের তাৎপর্য না জানা পর্যন্ত উত্তর দিতে আমি অপারগ।
আমাদের অনুমান এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে কোনো মহিলা আছেন এই কারণে এবং কমপক্ষে বারোবার আঘাত করা হয়েছে। আমার কাজ হলো উপস্থিত সমস্ত মহিলাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া। অন্য সমস্ত মহিলাদের থেকে ডেবেনহ্যাম সম্পূর্ণ আলাদা তাই যদি-এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেন সেই হেতু জিজ্ঞাসা করা।
সত্যিকারের ভদ্রমহিলা যাকে বলে তিনি তাই।
তাহলে আপনার মতে হত্যা করাটা ওঁর পক্ষে সত্যিই অসম্ভব?
হা। মিস ডেবেনহ্যামের সম্পূর্ণ অপরিচিত ওই নিহত ব্যক্তি, আর তাছাড়া লাভটাই বা কি?
আপনাকে বুঝি সেইরকমই বলেছেন?
হা। প্রথম দর্শনেই ওঁকে ওঁর খারাপ লেগেছে। যদি কোনো মহিলা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকেন তবে ডেবেনহ্যাম সম্পর্কে আমার কথায় ভরসা করতে পারেন। আর যেই করুন না কেন ডেবেহ্যাম সম্পূর্ণ ভাবে এ ব্যাপারে নির্দোষ।
কি আশ্চর্য। উত্তেজিত হচ্ছেন কেন?
জবাবে কর্নেল পোয়ারোর দিকে বিরক্তভাবে তাকালেন এবং কাগজ পত্রের দিকে চোখ নামালেন।
একটা কথা কর্নেল, আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাত সওয়া একটা নাগাদ খুন হয়েছে এবং এও জানতে হচ্ছে সেই সময় প্রত্যেক যাত্রী বা যাত্রীনিরা কি করছিলেন?
আমি ওই সময়ে নিহত ভদ্রলোকের সেক্রেটারীর সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
উনি আপনার কামরায় এসেছিলেন নাকি আপনি গিয়েছিলেন?
আমি ওঁর কামরায় গিয়েছিলাম।
মিঃ ম্যাককুইন তো?
হ্যাঁ।
উনি কি পূর্ব পরিচিত আপনার?
না। ট্রেনেই ওঁনার সঙ্গে গল্প করছিলাম, ভারতবর্ষ সম্পর্কে ভুল ধারণা থাকার ফলে ওই নিয়ে আলোচনা করছিলাম। অবশ্য আমেরিকানদের বিশেষ পছন্দ করি না তবে উনি বেশ ফুর্তিবাজ। রাজনীতি নিয়েও চলছিল হঠাৎ রাত পৌনে দুটো ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখেছিলাম।
আড্ডা থামিয়ে কি করলেন?
নিজের কামরায় শুয়ে পড়লাম।
বিছানা পাতা ছিল?
হা।
পনেরো নম্বর কামরা।
তার মানে খানাকামরার দিক থেকে হিসেব করলে সব শেষের ঠিক আগেরটা।
হ্যাঁ।
কণ্ডাক্টর কোথায় ছিল আপনি যখন কামরায় গেলেন?
কোণের টেবিলে বসে কাজ করছিল। অবশ্য আমি বেরিয়ে আসবার পরই মিঃ ম্যাককুইন তাকে ডেকে পাঠান।
কেন?
নিশ্চয়ই বিছানা করবার জন্য।
মিঃ ম্যাককুইনের কামরায় আপনারা দুজন যখন গল্প করছিলেন তখন কাউকে কি করিডোর দিয়ে যাতায়াত করতে দেখেছিলেন একটু ভেবে বলুন তো?
তা বেশ কয়েকজন হবে। লক্ষ্য করিনি।
না মানে, আপনাদের আলাপ আলোচনার শেষ দেড় ঘন্টার মধ্যে। ভিনভোকিতে আপনারা তো নেমেছিলেন?
হা। মিনিট খানেকের জন্য তবে ঠান্ডায় চলে এসেছি।
ভালো করে ভেবে দেখুন ঠান্ডা ছিল বাইরে, আপনারা আবার কামরায় এসে বসলেন। আপনি ধূমপান করছিলেন সিগারেট বা পাইপ….
পাইপ, ওটাই আমার পছন্দ।
বেশ রাত তখন অনেক হয়েছে। ট্রেন চলতে শুরু করেছে। পৃথিবীর নানা সমস্যায় আপনারা আলোচনারত, বেশির ভাগই শুয়ে পড়েছে। সেই সময় কেউ কি করিডোর দিয়ে গেছিল?