বাঃ খুব পরিষ্কার, মঁসিয়ে কুক মাথা নাড়ালেন।
আপনার কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়ছে না?
না। সবই তো ঠিক পর পর সাজানো আছে, বোঝাই যাচ্ছে খুনটা হয়েছিল রাত সোয়া এগারোটা নাগাদ আন্দাজ। ভাঙা ঘড়িটা, শ্ৰীমতী হাবাডের কথা সবই মিলে যাচ্ছে। আমার কিন্তু মনে হচ্ছে ঐ হুমদো ইতালিয়ানটাই খুনী কেননা ওরা খুব রাগচটা হয় এবং কথায় কথায় ছুরি চালায়। এবং ও শিকাগোয় থাকত।
তা ঠিক।
রাশেট এবং ও একই দলের। ইতালীয় ঘেষা কাসেট্টি নামটাও। দুষ্কর্মগুলো ওরা মিলেমিশে করত। কোনো কারণে মনকষাকষির সময় ইতালিয়ানটা পিছু নিয়ে ঠিক রাশেটকে মেরে ফেলেছে।
পোয়ারো মাথা নেড়ে বললেন অত সহজে বলা যায় না বন্ধু।
কেন নয়? আমি তো নিশ্চিত।
আর রাশেটের পরিচারক। তার কথামতো ইতালিয়ানটি তো দাঁতের ব্যথার ফলে একবারও কামরা ছেড়ে বেরোয়নি।
সেটাই তো মুশকিল হয়েছে।
পোয়ারো হাসলেন।
আপনার সত্যিই দুর্ভাগ্য। ভাগ্যিস ইতালিয়ানটির দাঁতের ব্যথা হয়েছিল। সেটাই তার পরম সৌভাগ্য।
যাকগে, পাপ কখনও চাপা থাকে না। একদিন না একদিন সব জানা যাবেই।
পোয়ারো মাথা নাড়াল।
মশাই সবকিছু অত জলবৎ তরলং নয়।
.
০৫.
রাজকুমারীর সাক্ষ্য
বোতামটার সম্পর্কে জানার জন্য মিশেলকে ডাকা হল।
মিশেল এসে দাঁড়ালো।
মিশেল এই বোতামটা সম্ভবত তোমার পোশাকের। ঐ আমেরিকান ভদ্রমহিলার কামরা তল্লাসীর সময় পড়ে গেছে।
মিশেল নিজের পোশাকে হাত রাখল।
না আমার জামার বোতাম তো হারায়নি।
অদ্ভুত তো।
আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
সে যে নির্দোষ তার দৃঢ়তায় প্রকাশ পেল।
কাল রাতে শ্রীমতী হাবাডের কামরা থেকে যে বোতামটা পাওয়া গেছে তাহলে নিশ্চয় যে কামরায় ঢুকেছিল তারই পড়ে গিয়ে থাকবে।
কুক বললেন, কিন্তু ওঁর কামরায় কেউ ঢোকেনি।
এ বোতামটা নিশ্চয় হত্যাকারীর, মিশেল কিছুটা বিচলিত হল।
আপনারা মিথ্যেই সন্দেহ করছেন। আমি এ ব্যপারে সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমি জীবনে যে ভদ্রলোককে প্রথম দেখলাম তাকে খুন করার আমার স্বার্থটা কি!
শ্ৰীমতী হার্বাডের ঘন্টা বাজানোর সময় তুমি কোথায় ছিলে?
আমি তো বলেছি পাশের কোচে সহকর্মীটির সঙ্গে কথা বলতে গেছিলাম
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
দয়া করে তাই করুন আঁসিয়ে।
পাশের কোচের কণ্ডাক্টরকে ডাকার পর সেও একই কথা বলল। এবং এও বলল যে বুখারেষ্ট কোচের কণ্ডাক্টর ও সে ওই সময় গল্প করছিল। সবাই বরফ পড়া নিয়েই কথা বলছিল। প্রায় মিনিট দশেক পর মিশেল বলে সে ঘন্টার আওয়াজ পাচ্ছে। সে যখন ক্যাল কোচের দিকে এগোয় তখন বাকি দুজনও আওয়াজ পেয়েছিল।
তাহলে এই বোতাম এল কোথা থেকে?
মিশেল ছাড়া বাকি দুজনও একই বলল যে তাদের বোম খোয়া যায়নি, কেননা তারা হার্বাডের কামরার ধারে কাছেই যায়নি।
শ্রীমতী হার্বাডের দরজার কাছে গিয়ে করিডোরে কি তোমার কারোর সঙ্গে দেখা হয়েছিল? ভালো করে ভেবে বল, কুক বললেন।
না মঁসিয়ে।
অদ্ভুত তো।
অদ্ভুত কিছুই নয় আসলে ব্যবধান হচ্ছে সময়ের। শ্রীমতী হার্বাড জেগে উঠে লোকটাকে দেখেন এক দু মিনিট নিথর হয়ে চোখ বুজে থাকেন। তখনই হয়তো লোকটা দরজা খুলে করিডোরে বেরিয়ে আসে। সঙ্গে সঙ্গেই উনি ডাক ঘন্টা বাজাতে শুরু করেন। ওই সময়ের মধ্যে লোকটা হয়ত কোথাও পালিয়ে….।
কিন্তু কোথায় যাবে? বাইরে তো তখন তুমুল বরফ ঝড় চলছে।
দুটো পথ আছে এক হয়তো সে বাথরুমে নতুবা অন্য কোনো কামরায় ঢুকে পড়ে ছিল।
কিন্তু সব কামরায় তো লোক ছিল?
হা…
তবে সে কি তার নিজের কামরাতেই ঢুকেছিল, পোয়ারো সম্মতি জানালেন।
কণ্ডাক্টরের অনুপস্থিতিতে লোকটি নিজের কামরা ছেড়ে এসে রাশেটকে হত্যা করে। হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তারপর করিডোরের দিকের দরজাটা বন্ধ করে দেয় এবং শ্রীমতী হার্বাডের কামরা দিয়ে নিজের কামরায় চলে যায়।
ব্যাপারটা এত সহজ নয় সেটা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলেই বুঝতে পারবেন, পোয়ারো বললেন।
এরপর মিশেলকে চলে যেতে বললেন।
পোয়ারো যাত্রী তালিকায় নজর দিলেন।
এখন আটজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলা বাকি। পাঁচজন ফাস্ট ক্লাসের– রাজকুমারী দ্রাগোমিরফ, কাউন্ট অফ কাউন্টেস, আন্দ্রেনী, কর্নেল আবাথনট, আর মিঃ হার্ডম্যান। তিনজন সেকেণ্ড ক্লাসের মিস্ ডেবেনহ্যাম, আন্তেলিও ফলকারেন্নি, আর রাজকুমারীর পরিচারিকা শ্ৰীমতী ইল্ডগ্রেদ স্মিট।
ইতালিয়ানটিকে বরং ডাকা যাক আগে।
আগে উপর থেকে শুরু করা যাক। রাজকুমারী যদি না আসতে চান তবে ওঁর কামরাতেই আমাদের যেতে হবে।
মিশেলকে খবর দিয়ে পাঠালেন ওঁনাকে আসার জন্য।
রাজকুমারী মাথা উঁচু করে দৃঢ় ভঙ্গী এক মুখের বিবর্ণ হলুদ কুৎসিত মুখ এবং চোখ দুটো চকচকে। ভেতরে অসীম মানসিক শক্তি এবং ক্ষুরধার বুদ্ধিমতী মহিলা।
পোয়ারোর সম্ভাষণ থামিয়ে দিয়ে বললেন, এই বিশ্রী হত্যাকাণ্ডের জন্য আপনাদের কর্তব্য এবং যথাসাধ্য সাহায্যের জন্য আমি প্রস্তুত। আপনাদের বিচলিত হবার কোনো কারণ নেই মঁসিয়ে।
আপনারা কি জানতে চান বলুন?
আপনার পুরো নাম এবং ঠিকানাটা লিখে দিন।
নাতালিয়া দ্রাগোমিরফ। সতেরো ফ্লেবার অ্যাভিনিউ, প্যারিস।
মাদাম আপনি বোধহয় কনস্তান্তিপোল থেকে বাড়ি ফিরছেন?
হা। আমি এবং আমার পরিচারিকা অষ্ট্রিয়ান দূতাবাসে ছিলাম।
আপনি গতরাত্রে ডিনারের পর কি করছিলেন?