ভদ্রমহিলা লাফিয়ে উঠলেন উত্তেজনায়।
লোকটা সুবিধের নয় আগেই বুঝেছিলাম।
আচ্ছা আপনি আর্মস্ট্রং পরিবারের কাউকে চিনতেন?
না। ওরা কারোর সঙ্গেই মিশত না। তবে অসাধারণ রূপ এবং চমৎকার স্বভাবের ছিল ডেইজির মা। পুরো পরিবারটাই নষ্ট হয়ে গেল।
আপনার পুরো নাম আর ঠিকানাটা?
ক্যারোলিন মার্থা হার্বার্ড।
তিনি নাম ঠিকানা লিখে দিলেন।
লাল রঙের ড্রেসিং গাউন কি আছে আপনার?
না তো, একটা গোলাপী আর বেগুনি রঙের, ব্যস।
আসলে কাল রাতে যে মহিলা কে রাশেটের কামরায় ঢুকতে দেখা গিয়েছিল।
তবে এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই ওটা তো আমার কামরা নয় ওটা রাশেটের।
কোনো মহিলার গলার আওয়াজ তাহলে পাশের কামরায় পেয়েছিলেন?
হু।
কই আগে তো বলেননি?
ছিঃ, এসব আলোচনা কিন্তু খুব সুরুচির নয় যেহেতু আমি একজন ভদ্রমহিলা!
রাত কটার সময় আপনি মেয়েটির আওয়াজ শোনেন।
কে জানে। কারণ ঘুম ভাঙতে সাড়া পেয়েছিলাম। কি ঘেন্নার কথা রাশেটের চরিত্র জানতে আমার আর বাকি নেই।
সেটা আপনার কামরায় তোক ঢোকার আগে না পরে?
আচ্ছা গেরো দেখছি, রাশেট তো মরেই গেছে, পরে কি করে হবে?
ও হ্যাঁ, সত্যি খুব বিরক্ত করলাম আপনাকে।
শ্ৰীমতী হার্বাড ব্যাগটা গুছিয়ে খানাকামরার দরজা পর্যন্ত যেতে পোয়ারো বললেন, এই রুমালটাতো আপনার?
ও রুমাল আমার কেন হবে?
না মানে রুমালের কোণে এইচ অক্ষরটা তোলা দেখে ….
আমি প্রত্যেক রুমালে পি, এম. এইচ, এই প্রথম অক্ষরগুলো তুলে রাখি। একটা অক্ষরে কি হবে? তাছাড়া যা দামী রুমাল। বিবিয়ানা করবার বয়সও নেই। আর আমার নাকটা এমন কিছু হীরে জহরত দিয়ে বাঁধানো নয় যে রেশম বা মসলিন দিয়ে না মুছলে ক্ষয়ে যাবে। এই কথাগুলো বলে মহিলা বেরিয়ে গেলেন।
মঁসিয়ে কুক পিয়ের মিশেলের বোম নিয়ে দেখলো।
আমি বুঝতে পারছি না মঁসিয়ে পোয়ারো, মিশেল কি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত?
দাঁড়ান ওসব পরে ভাবব। আগে সুইডিস ভদ্রমহিলাকে ডাকা যাক এই যে ওঁর পাসপোর্ট। গ্রেটা অলসঁ। বয়স ঊনপঞ্চাশ।
ভদ্রমহিলাকে ডাকা হল।
ভালোমানুষ চেহারার বোকা বোকা ধূসর চুল চুড়ো করে বাঁধা, চোখে চশমা, ধীর শান্ত প্রকৃতির। মহিলাটি ফরাসী ভাষায় বুঝতে এবং বলতে পারেন কথাবার্তাও তাই ফরাসীতেই হচ্ছিল। প্রথমে নাম, ঠিকানা, বয়স জিজ্ঞাসা করলেন। যদিও এগুলো পোয়ারোর জানা। অবিবাহিতা, একটা মিশনারী স্কুলের মেট্রন ইস্তাম্বুল এবং ধাত্রীবিদ্যায় পাশ।
আচ্ছা মাদমোয়াজেল এই ট্রেনে একটা হত্যাকাণ্ড…..।
হা। খুনীটি নাকি ওঁর কামরাতেই লুকিয়ে ছিল আমেরিকান ভদ্রমহিলা বলেছিলেন।
মিঃ রাশেটকে শেষবারের মতো আপনিই জীবিত দেখেন খবর পেয়েছি।
ঠিক বলতে পারব না। তবে ভুল করে ওঁর কামরায় ঢুকে পড়াটা একটা লজ্জার ব্যাপার হয়েছিল।
ওঁর সঙ্গে কি দেখা হয়েছিল?
বই পড়ছিলেন ক্ষমা চেয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসি।
আপনাকে কিছু কি বলেছিলেন?
না মানে কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারিনি।
তারপর?
আমি অ্যাসপিরিনের জন্য আমেরিকান ভদ্রমহিলার কাছে গিয়েছিলাম।
উনি কি রাশেটের আর ওঁর কামরার দরজা বন্ধ আছে কিনা দেখতে বলেছিলেন।
হা।
বন্ধ ছিল?
হা।
তারপর?
আমি অ্যাসপিরিন খেয়ে শুয়ে পড়েছিলাম।
তখন কটা বাজে?
আমি ঘড়িতে দেখেছিলাম তখন বাজে এগারোটা বাজতে পাঁচ।
ঘুমিয়ে কি তাড়াতাড়ি পড়েছিলেন?
খুব তাড়াতাড়ি নয় মাথা ব্যথাটা কমে যাবার ফলে কিছুক্ষণ তো জেগেই ছিলাম।
তখন ট্রেন কি থেমেছিল?
মনে হয় না। কেননা আধ ঘুমে ভেবেছিলাম হয়ত কোনো স্টেশন এল।
ওটা ভিনভোকি স্টেশন। আপনার তো এইটা কামরা।
হা।
আপনার বার্থ আপার না লোয়ার?
নিচের দশ নম্বর।
কোনো সঙ্গী কি ঐ কামরায় আছে আপনার?
হা। বাগদাদ থেকে একটি ইংরাজ ভালো, ভদ্র, মার্জিত মেয়ে আছেন।
উনি কি ভিনভোকি ছাড়বার পর কামরার বাইরে এসেছিলেন?
না।
কি করে বুঝলেন? আপনি তো ঘুমিয়েছিলেন।
ওপরের বার্থ থেকে উনি নামলে আমি নিশ্চয় জেগে যেতাম কারণ আমার ঘুম খুব পাতলা।
আপনি নিজে কি বেরিয়েছিলেন?
আজ সকালের আগে নয়।
কোনো লাল রং-এর সিল্কের কিমোনো কি আছে আপনার?
নাতো? ড্রেসিং গাউন আছে তবে তার রং লাল।
আপনার সহযাত্রী ডেবেনহ্যামের?
হাল্কা বেগুনী রং-এর।
আপনি বুঝি ছুটিতে যাচ্ছেন?
হা, বাড়ি যাচ্ছি তবে ল্যাসনে আমার বোনের কাছে আগে যাব।
আপনার বোনের নাম ও ঠিকানাটা যদি একটু লিখে…..
কিন্তু কি আছে, দিন লিখে দিচ্ছি।
আপনি কোনোদিন আমেরিকায় গেছেন?
না। একজন পঙ্গুলোকের দেখাশোনার কাজের জন্য কথা হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। এমনিতে শুনেছি খুব দিলদরাজ হয় আমেরিকানরা।
আর্মষ্ট্রং মামলার কথা শুনেছেন?
না তো কি হয়েছিল?
পোয়ারো বলার পর গ্রেটা অঁলস-এর চোখ জলে ভরে গেল।
ওঃ মানুষ এতো নিষ্ঠুর হয়। ভাবুন তো, ডেইজির মায়ের কথা। বিদায় নিলেন সুইডিস মহিলাটি।
কি সব লিখছিলেন পোয়ারো।
কৌতূহল না চাপতে পেরে কুক বললেন, কি লিখছেন সব?
সমস্ত পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হয় বলে কাগজটা দেখালেন।
রাত নটা পনের : ট্রেন বেলগ্রেড ছাড়ল।
রাত নটা চল্লিশ : রাশেটের কামরা ছেড়ে পরিচারক ঘুমের ওষুধ গুছিয়ে বেরিয়ে আসা।
রাত দশটা : ম্যাককুইন রাশেটের কামরা ছেড়ে বেরিয়ে আসা।
রাত দশটা চল্লিশ: গ্রেটা অঁলস–এর ভুল করে রাশেটের কামরায় ঢোকা এবং শেষ জীবিত দেখেন। রাশেট বই পড়ছিলেন।
রাত বারোটা : ট্রেন ভিনভোকি ছাড়ে।
রাত সাড়ে বারোটা : ট্রেন বরফ ঝড়ের কবলে পড়ে।
রাত বারোটা সাইত্রিশ : রাশেটের কামরা থেকে ঘন্টায় আওয়াজ শুনে দরজায় কণ্ডাক্টর টোকা দিলে ফরাসী ভাষায় রাশেট বলেন স্য ন্য রিয়, জ্য মে সুই ঐ পেঁ।
আন্দাজ একটা সতেরো : লোক ঢুকেছে তার কামরায় ঘন্টি টিপে জানান শ্রীমতী হার্বার্ড।