.
০৪.
আমেরিকান মহিলার সাক্ষ্য
শ্ৰীমতী হাবার্ড ব্যস্ততা এবং ভীতি প্রকাশ করে বললেন,আমার জানার আছে যে, কেউ কি এখানে কর্তৃপক্ষ স্থানীয় আছেন।
মহাশয়ার কিছু বলার থাকলে আমায় বলতে পারেন নির্দ্বিধায়, কিন্তু তার আগে দয়া করে একটু বসুন, বললেন পোয়ারো।
শ্রীমতি হাবার্ড বসে পড়লেন সামনের চেয়ারটিতে। এই ট্রেনে যে খুনটা হয়েছে কাল রাতে আমার কামরাতেই খুনিটা ছিল বললেন।
এই কথাগুলোর নাটকীয় প্রভাব লক্ষ্য করতে চাইলো শ্রীমতী হাবার্ড।
সত্যি।
তা নয়তো কি। কাল খাওয়া-দাওয়ার পর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ার পর হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে যাবার পর দেখলাম একটা লোক কামরায় ঢুকেছে। খুন জখম রাহাজানি তো ট্রেনে হয়ই অবশ্য গয়নাগাটির সম্বন্ধে ভয় নেই কারণ ওগুলো শোবার আগে মোজায় ভরে বালিশের নিচে রেখেছিলাম, প্রাণের ভয় তো আছে। যাই হোক কি বলছিলাম যেন?
ওই যে বললেন একজন লোক আপনার কামরায় ঢুকেছিল?
হা হা, আমি চুপটি করে মড়ার মত পড়ে থেকে কি করা যায় ভেবে ভগবানের নাম জপছি। ভাগ্যিস মেয়ে জানেনা এসব কাণ্ডের কথা নাহলে একেবারে কেঁদে ভাসিয়ে দিত। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি আসার ফলে ডাক ঘন্টিটা টিপে ধরতেও কোনোও লোক না আসতে ভাবলাম হয়ত বা সবাই খুন টুন হয়েছে। শেষে বাইরে আওয়াজ শোনার পর বুকে যেন বল এল। আমি চেঁচিয়ে কণ্ডাক্টরকে ভেতরে আসতে বলার পর দেখলাম আমি ও কণ্ডাক্টর ছাড়া কেউ নেই।
তারপর?
আমি কণ্ডাক্টরকে বলতে সে ব্যাটা বলল আমার নাকি ভুল হচ্ছে আমার কথা মেয়ে জামাই ও অক্ষরে অক্ষরে মানে ও বলে ভুল হচ্ছে। এই দেখুন আপনাদের সঙ্গে পরিচয়ই হয়নি আর আমি কখন থেকে বকে চলেছি।
আমি পোয়ারো, ইনি মঁসিয়ে কুক এই রেল কোম্পানির ডিরেক্টর আর ইনি ডাক্তার কনস্টানটাইন।
আপনাদের সঙ্গে আলাপ করে খুশী হলাম। বুঝলেন মঁসিয়ে পোয়ারো আমার ঠিক সুবিধের মনে হল না ব্যাপারটা, আমার কামরায় তো ঢুকেছিল তা সে পাশের কামরা থেকে আসেনি তো? কণ্ডাক্টরকে বললাম মাঝের দরজা আটা আছে কিনা দেখতে। ভেবেছি তাই, সেইজন্য ভালো করে ভারী সুটকেশ দিয়ে এঁটে রাখতে বলে নিশ্চিন্তে শুলাম।
তখন রাত কটা?
কেমন করে বলব আমার সে অবস্থাই তখন ছিল না ঘড়ি দেখার।
তা তো বটে।
আমার কামরায় যে লোকটা ঢুকেছিল সেই আসলে খুনী। বলে হাবার্ড চোখ বন্ধ করলেন।
আপনার তাহলে কি মনে হয় সে আবার পাশের কামরাতেই চলে গিয়েছিল?
সে আমি বলতে পারব না। কারণ আমার তখন চোখ বন্ধ ছিল। আপনারা তো বিশ্বাস করছেন না। এই দেখুন, বলে নিজের হাতব্যাগটি টেবিলের উপরে উপুড় করলেন। ব্যাগ থেকে বেরুলো দুটো রুমাল, একটা চশমা, এক শিশি অ্যাসপিরিন, এক প্যাকেট হজমিগুলি, একটা কঁচি, পিপারমেন্ট এক গোছা, চাবি, চেকবই, একটা অতি সাধারণ চেহারার বাচ্চার ছবি। কয়েকটা চিঠি, এক ছড়া পাথরের মালা আর একটা ধাতুর তৈরি বোম।
শ্ৰীমতী হাবার্ড বোতামটা তুলে ধরলেন।
এই হচ্ছে প্রমাণ।
কি রকম?
এই বোতামটা! আমাদের মেয়েদের পোশাকে কি এই বোতাম থাকে? কি সব বুদ্ধি আপনাদের পুরুষদের।
মঁসিয়ে কুকু এবার সুযোগ পেলেন কিছু বলার। এতো রেলের কণ্ডাক্টর গার্ডের পোশাক। আপনার কামরায় তল্লাসী চালাবার সময় হয়তো পড়ে গিয়ে থাকবে।
নাও ঠেলা। এটা পেয়েছি কোথায় জানেন? কাল রাতে ঘুমানোর আগে একটা পত্রিকা পড়ছিলাম। ঘুম পেয়ে যাবার ফলে আলোটা নিভিয়ে শুয়ে পড়েছিলাম। সকালে এটা দেখি রয়েছে বই-এর উপর। কাল রাতে তো কণ্ডাক্টরকে জানালার কোথাও দেখিনি, আমার মেয়ে কিন্তু বলে যে আমার কাজের খুঁত ধরা খুব কঠিন। শ্রীমতী হাবার্ড কথাগুলো বলে নিজেকে গর্বিত অনুভব করলেন।
বেশ। রাশেট লোকটা সুবিধের নয় তো আগেই বলেছিলেন; তা হলে মাঝের দরজাটা বন্ধ করেননি কেন?
আমার কিন্তু ভুল হয়নি, মনে হয় কোনো ফাঁকে কেউ খুলে রেখেছিল। তবে শোবার আগে সুইডিস ভদ্রমহিলা এসেছিলেন তাকেও বলেছিলাম ছিটকিনিটা ভালো করে দেওয়া আছে কিনা দেখতে। উনি না লক্ষ্য করে বলেছিলেন বন্ধই আছে। আর তাছাড়া একটা ভোলো হুকে রাখা ছিল।
সেটা হয়ত চাপা পড়ে যাবার ফলে ওনার নজর এড়িয়ে গেছে। যখন ওনাকে দরজা দেখতে বলেছিলেন তখন কি নিজে শুয়ে পড়েছিলেন?
হা। বই পড়ছিলাম, উনি এসে অ্যাসপিরিন চেয়েছিলেন।
কাল আরও একটা কাণ্ড হয়েছে। আমার কামরায় আসতে গিয়ে উনি পাশের কামরায় গিয়ে পড়েছিলেন। এরকম তো মানুষ মাত্রেরই ভুল হয়।
ভদ্রমহিলা তাড়াতাড়ি মাপও নিয়েছিলেন।
কিন্তু রাশেট অভদ্র ভাষায় বললেন। দেবী, তুমি যে বড্ড বেশি বুড়ি লাভ নেই কিছু।
ডাক্তার হাসি চাপতে গিয়ে একটু কাশলেন।
গম্ভীর হল শ্রীমতী হাবাডের মুখ।
ছি ছি, কেউ এরকম ভাবে বলে নাকি আর সেটা নিয়ে হাসাহাসি করাটাও অভদ্রতা।
ডাক্তার তাড়াতাড়ি ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
কোনো আওয়াজ কি পেয়েছিলেন রাশেটের ঘর থেকে?
আওয়াজ।, নাকডাকার আওয়াজ ছাড়া কিছুই পাইনি।
লোকটা আপনাদের কামরা থেকে পালাবার পর আর কি নাক ডাকার আওয়াজ পেয়েছিলেন?
কি মুশকিল। রাশেট তো মরে গেছে আর কে নাক ডাকবে।
ওঃ হ্যাঁ। আচ্ছা আপনি ডেইজি মামলার কিছু জানেন?
জানি না আবার? সত্যিই কাজের নয় পুলিশগুলো, খুনিটাকে ধরতেই পারল না।
আপনি শুনে খুব খুশী হবেন রাশেটই সেই খুনী।