অর্থাৎ?
এই আঘাতগুলো করা হয়েছিল রাশেটের মৃত্যুর পর।
কিন্তু সেটা সম্ভব কি?
পোয়ারো চিন্তান্বিতভাবে জবাব দিলেন, হত্যাকারী হয়তো নিশ্চিত ছিল না যে সে কাজটা করতে পেরেছে কিনা। সেই জন্যেই দ্বিতীয়বার ফিরে এসেছিল এটা একটা ব্যাপার হতে পারে। তবে এতে ঝুঁকি থেকে যায়। আপনার আর কিছু নজরে পড়ছে?
আর একটা কথা।
বলুন।
এই ক্ষতটা দেখুন। ডান কাঁধের কাছাকাছি ডান হাতের নিচে। এই পেন্সিলটা দিয়ে আপনি কি এই আঘাত করতে পারবেন?
উজ্জ্বল হয়ে উঠল পোয়ারোর মুখ।
একটু কষ্টসাধ্য ডান হাত দিয়ে আঘাত করাটা তবে বাঁ হাত দিয়ে করে থাকলে…
ঠিক তাই মঁসিয়ে পোয়ারো বাঁ হাত দিয়েই আঘাতটা করা হয়েছে। ডাক্তার বললেন।
অর্থাৎ আমাদের হত্যাকারী ন্যাটা। কাজটা কিন্তু তাহলে আমাদের আরও জটিল হয়ে গেল।
হা। ডান হাত দিয়েও কতকগুলো আঘাত নিশ্চিতভাবে করা হয়েছে। অর্থাৎ একজন সঙ্গী ছিল হত্যাকারীর। আচ্ছা কামরার আলো জ্বলছিল?
বলা শক্ত। কারণ সব কামরার আলো সকাল দশটায় কণ্ডাক্টর নিভিয়ে দেয়।
বোঝা যাবে সুইচগুলো দেখলে।
দুটো আলো কামরায়। বড় আলোটা কামরাটাকে পুরো আলোকিত করার জন্য, মাথার কাছে যে আলো সেটা বইপত্র পড়ার জন্য। দ্বিতীয় আলোটার মাথায় ঢাকনা আছে সেটা টানলে আড়াল পড়বে। সুইচ বন্ধ ছিল আলোটার আর ঢাকা দেওয়া ছিল দ্বিতীয় আলোটার।
প্রথম আততায়ী ফিরে যাবার সময় বড় আলোটা নিভিয়ে দিয়ে যায় তার কাজ শেষ হয়ে যাবার পর। দ্বিতীয় জন কয়েকবার মৃত দেহে আঘাত করে চুপি সারে চলে যায়। আমার মনে হয়, পোয়ারো বললেন।
চমৎকার, ডাক্তার বললেন।
খুব সন্তোষজনক ব্যাখ্যা এটাও কিন্তু আমার কাছে নয়।
পরিস্থিতিটা কিভাবে আর বোঝাতে পারবেন বলুন।
নিজের কাছে বারবার জিজ্ঞেস করছি সেই কথাই। আচ্ছা আসুন ভাবা যাক এর স্বপক্ষে আর কি কি যুক্তি খাড়া করা যায় যে হত্যাকারীরা কমপক্ষে দুজন।
সে কথা তো বোঝা যাচ্ছে ক্ষতগুলো পরীক্ষা করলেই।
সেগুলি হালকা আঁচড়ের মতো তার জন্য দৈহিক শক্তির প্রয়োজন হয়নি কিন্তু সেগুলি মাংসপেশী ভেদ করে গেছে। এমনই গভীর সেগুলোর ক্ষেত্রে দৈহিক শক্তির প্রয়োজন হয়েছে।
নিঃসন্দেহে একজন পুরুষ দায়ী গভীর ক্ষতগুলোর।
হা।
একেবারেই অক্ষম কি কোনো মহিলা এই ধরনের আঘাতের ক্ষেত্রে।
তা নয়। তবে দক্ষতা এবং তারুণ্য দরকার। আমি ডাক্তার হিসাবে বলতে পারি যে, এ কোনো মহিলার কাজ নয়। এবং এ যুক্তি সমর্থন যোগ্যও নয়।
পোয়ারো চুপ করে থাকলেন দু এক মুহূর্ত।
আপনি কি আমার কথাটা বুঝতে পারছেন? ডাক্তার উদ্বিগ্ন গলায় বললেন।
নিশ্চয়ই। কোনো মহিলার দ্বারা হালকা আঁচড়গুলো সৃষ্ট আর একজন শক্তিশালী পুরুষ রাশেটকে আঘাত করেছে ব্যাপারটা হল এই। আর একজন নিশ্চয় ন্যাটা। কি আক্কেল দেখুন মিঃ রাশেটও দিব্যি শান্তভাবে খুন হয়েছে, কোনো ধস্তাধস্তির বিন্দুমাত্র চিহ্নই নেই।
ছোট্ট স্বয়ংক্রিয় পিস্তলটা বার করলেন পোয়ারো রাশেটের বালিশের নিচে থেকে।
পিস্তলে গুলি ভরা আছে, তার মনে বিপদের আশঙ্কা ছিল দেখুন ডাক্তার।
রাশেটের দিনের বেলায় পরবার স্যুট কামরার দেওয়ালে হুকে পরিপাটিভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাঁধানো দাঁতের পাটি একটি গ্লাসে ডোবানো। একটা খালি গ্লাস, ছাইদানী, জলের বোতল, ফ্লাক্স। ছাইদানীতে এক-একটা পোড়া সিগারেটের টুকরো। আর কয়েক টুকরো পোড়া কাগজ, দুটো ব্যবহার করা দেশলাই কাঠি। খালি গ্লাসটা নাকের কাছে আনলেন ডাক্তার।
হু এবার বোঝা যাচ্ছে কড়া ঘুমের ওষুধের জন্য রাশেট হত্যাকারীকে বাধা দেয়নি।
পোয়ারো পোড়া দেশলাই কাঠি দুটি পরীক্ষা করতে লাগলেন।
কি মশাই সূত্র মিললো? ডাক্তার উৎফুল্ল গলায় জিজ্ঞাসা করলেন।
একটা সাধারণ, অন্যটা চ্যাপ্টা, কাগজের তৈরি দুটো কাঠি দু রকমের।
সাধারণত ট্রেনে এই ধরনের কাগজের কাঠি বিক্রি হয়। পোয়ারো রাশেটের জামাকাপড়ের ভেতর থেকে একটা দেশলাই পেলেন।
এটা দেখুন সাধারণ মানের। চ্যাপ্টা দেশলাই কাঠিটা নিঃসন্দেহে ওঁর নয়। ওই রকম প্যাকেট কামরায় পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখি একটু।
কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না।
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সারা কামরা খোঁজার পর তিনি একটি মেয়েদের দামী রুমাল পেলেন, তাতে রঙিন সূততা দিয়ে এককোণে লেখা আছে ইংরেজীতে H অক্ষর।
রেলকর্মচারীর সন্দেহ তাহলে ঠিকই ছিল যে এ ব্যাপারে কোনো মহিলা নিশ্চয় জড়িত, ডাক্তার বললেন।
হতেও তো পারে সেই মহিলাটি চলচ্চিত্রের গোয়েন্দা গল্পের মতো তার রুমালটা সূত্র হিসাবে ফেলে রেখে গেছেন।
তাই নাকি?
ঈষৎ ব্যাঙ্গের সুর যেন শোনাল পোয়ারোর কথায় ডাক্তারের মনে হল।
আরও একটা পাইপ ক্লিনার খুঁজে পেলেন পোয়ারো। এটা হয়তো রাশেটের সম্পত্তি, ডাক্তার বললেন।
না, রাশেটের সম্পত্তির মধ্যে পাইপ, পাউচ, বা তামাক কিছুই নেই।
এটাও একটা রহস্যের সূত্র তাহলে।
নিশ্চয়ই, সূত্রের এই আধিক্যটাই আমাকে বেশি ভাবচ্ছে। যে জিনিস পুরুষ মানুষের তিনিও কি ভুল করে ফেলে গেছেন? আচ্ছা গেল কোথায় ছোরাটা?
সেটা নিশ্চয়ই হত্যাকারী সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।
কিন্তু কেন?
রাশেটের জামার বুক পকেটে এই সোনার ঘড়িটা ছিল এটা নজরে পড়েনি এই দেখুন। ডাক্তার, মঁসিয়ে পোয়ারোকে বললেন।