মিঃ রাশেটকে ছোরা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু আপনি এ বিষয়ে এত নিশ্চিত হলেন কি করে সেটাই অবাক লাগার এবং আপনার ধারণাটাই সঠিক। আমাকে একটুক্ষণ চুপ করে থেকে ম্যাককুইন বলল, আপনি কে? কেনই বা এত প্রশ্ন করা হচ্ছে?
আমি একজন গোয়েন্দা। আমার নাম এরকুল পোয়ারো। আমি এ বিষয়ে তদন্ত করছি রেল কর্তৃপক্ষের হয়ে।
পোয়ারো ম্যাককুইনের চোখে মুখে কোনো ভাবান্তর না দেখার ফলে একটু হতাশ হলেন। বললেন, আমার নামটার সঙ্গে আপনি হয়তো পরিচিত।
হা মানে কোনো মহিলা দর্জির দোকানে আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে-নামটা দেখেছি।
তাঁর নামের ওই রকম মাহাত্ম্য দেখে পোয়ারোর মুখটা কুঁচকে গেল।
যাকগে ওসব কথা। আপনি আপনার মনিব সম্পর্কে কতটুকু জানেন সেটাই হল আমার আসল বক্তব্য, ওঁর কি আপনি আত্মীয় ছিলেন?
না না নেহাতই সচিব।
ওঁর কাছে কাজ করছেন কতদিন হল?
এই বছর খানেক হবে।
ওঁর সম্পর্কে ঠিক কি কি জানেন?
পারস্যে ওঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয় বছর খানেক আগে।
ম্যাককুইনকে বাধা দিলেন পোয়ারো।
মাপ করবেন। আপনি ওখানে কি করছিলেন?
সে অনেক কথা। একটা তেল কোম্পানির কাজ নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে গিয়েছিলাম।
মিঃ রাশেটও একই হোটেলে আমার সঙ্গে ছিলেন। ওখানে রীতিমত আর্থিক কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়। সেই সময় ঝগড়াঝাটি চলছিল ওঁর সচিবের সঙ্গে তাই এই কাজটা উনি আমাকে নিতে বলেন। বেশ খারাপ অবস্থা থাকার দরুন আমার কাজটা নিতে অগত্যা রাজী হয়ে যাই। অবশ্য মাইনেপত্রও ভালোই ছিল।
তারপর?
মিঃ রাশেটের ভ্রমণের নেশা ছিল। কিন্তু বিদেশী ভাষা জানতেন না। দেশ বিদেশে ঘোরার ফলে আমার কিছুটা দো-ভাষীর কাজও করতে হত এবং কাজটা আমার মনের মতোই ছিল।
এইবার বলুন আপনার মনিব কেমন ছিলেন?
ম্যাককুইন কাঁধ ঝাঁকালো। তার চোখমুখ দেখলে মনে হয় বিব্রত বোধ করছে।
বেশ কঠিন সেটা বলা।
পুরো নাম কি ওঁর?
স্যামুয়েল এডওয়ার্ড রাশেট।
আমেকিান নাগরিক?
হা।
কোনো অঞ্চলের বাসিন্দা?
সঠিক বলতে পারব না।
আপনি তাহলে যতটুকু জানেন তাই বলুন।
মিঃ রাশেট সম্বন্ধে আমার তেমন কিছুই জানা নেই, সত্যি কথা বলতে নিজের কথা উনি সাতকাহন করে শোনাতেন না।
কেন বলুন তো?
কি করে জানব? কিছু কিছু মানুষের জীবনে তো এরকম ঘটে পুরানো দিনের কথা ভুলতে চাইতেন উনি। ওঁর অতীত কিঞ্চিৎ লজ্জাকর।
ব্যস। আপনি কি সন্তুষ্ট ছিলেন এইরকম কিছু ঘটেছে ধরে নিয়েই।
তা নয় ঠিক।
আত্মীয়স্বজন কি ছিল ওঁর?
তেমন কারো কথা বলতে শুনিনি কখনও।
ঈষৎ কাঠিন্য গলার স্বরে আনলেন পোয়ারো।
তবুও আপনার কিছু একটা অস্পষ্ট ধারণা নিশ্চয়ই গড়ে উঠেছে?
হ্যাঁ, কিছুটা তা বলতে পারেন। এই যেমন ধরুন রাশেট ওঁর আসল নাম নয় আমার কেন জানি না মনে হয়। তিনি আমেরিকা ছাড়েন নির্ঘাত কোনো গোপন কারণে। কেননা তিনি দিব্যি খোশমেজাজে ছিলেন আর কয়েক সপ্তাহ আগে।
তারপর?
ভয় দেখানো উড়ো চিঠি আসতে শুরু করে ওঁর নামে।
স্বচক্ষে দেখেছেন আপনি?
হা। চিঠিপত্র লেনদেন ওঁর আমিই করতাম।
চাকরীর একটা অঙ্গ ছিল এটা। প্রথম চিঠিটা ধরুন দিন পনেরো আগে আসে।
এই চিঠিগুলি কি নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল?
না। বোধহয় আমার কাছেই খুঁজলে পাওয়া যাবে গোটা দুয়েক চিঠি। একটা ছিঁড়ে ফেলেছিলেন রাগের মাথায়। লাগবে চিঠিগুলো?
বড় উপকার হয়, যদি একটু কষ্ট করে খুঁজে দেখেন। কামরা ছেড়ে ম্যাককুইন বেরিয়ে গেল। খানিক পর ফিরে এসে পোয়ারোর টেবিলে দুটো নোংরা কাগজ রাখল।
এই রকম প্রথম চিঠিটা :
আমাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যদিও তুমি সফল হতে পারোনি। তোমাকে আমরা খুঁজে বার করবই এবং জীবন দিয়ে তোমাকে ঋণ শোধ করতে হবে। পৃথিবীর যেখানেই থাকো না কেন রাশেট নিস্তার তোমার নেই।
সাক্ষর নেই কোনো চিঠির নিচে।
দ্বিতীয় কাগজটা ভুরু কুঁচকে পোয়ারো হাতে নিলেন।
রাশেট তোমার এবার শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে। খুব শীগগিরই দেখা হবে। আমরা তোমায় ছাড়ব না।
ধীরে ধীরে চিঠিটা নামিয়ে রেখে পোয়ারো বললেন, মোটামুটি একই ধাঁচ চিঠি দুটোর। অবশ্য সম্পূর্ণ একই রকম নয় হাতের লেখাটা।
তার মুখের দিকে তাকিয়ে হাঁ করে রইল ম্যাককুইন। মিঃ ম্যাককুইন চিঠিটা একজন লোক লেখেনি। অবশ্য আপনার চোখে এত কিছু ধরা পড়বে না; এর জন্য চোখ চাই অভিজ্ঞ লোকের বললেন পোয়ারো। এক সঙ্গে দু তিনজনে মিলে লিখেছে। অনেকটা এই রকম একজন একটা লিখেছে–অন্যজন আরেকটা যাতে চট করে হাতের লেখা না চেনা যায়, সবই বড় বড় অক্ষরে একজন একটা শব্দ লিখেছে। আচ্ছা মিঃ রাশেট যে আমার সাহায্য চেয়েছিলেন তা জানেন?
আপনার সাহায্য?
এ বিষয়ে সে যে বিন্দুবিসর্গও জানেন না। ম্যাককুইনের গলার স্বরেই পরিষ্কার টের পাওয়া গেল।
পোয়ারো ঘাড় নাড়লেন।
হা ভয় পেয়েছিলেন উনি। আচ্ছা ওঁর কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল বলুন তো প্রথম চিঠিখানা পেয়ে।
সেভাবে সঠিক করে কিছু বলা মুস্কিল। কিছুটা দ্বিধার সুরে বলল ম্যাককুইন। একটু হেসেছিলেন প্রথমে। কিন্তু শঙ্কিত হয়েছিলেন বেশ মনে মনে। চেঁচামেচি করে বাইরে প্রকাশ করার মানসিকতা ওঁর ছিল না।
সায় দিলেন পোয়ারো। তারপর একটা সত্যি কথা বলবেন মিঃ ম্যাককুইন, আপনি কি ধারণা পোষণ করতেন আপনার মনিব সম্বন্ধে? আচমকা জিজ্ঞাসা করলেন।