- বইয়ের নামঃ দি মার্ডার ইন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস
- লেখকের নামঃ আগাথা ক্রিস্টি
- প্রকাশনাঃ নালন্দা
- বিভাগসমূহঃ অনুবাদ বই, রোমাঞ্চকর,গোয়েন্দা কাহিনী
দি মার্ডার ইন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস
১. প্রথম পর্ব : ঘটনাপ্রবাহ
মার্ডার ইন ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেস (এরকুল পোয়ারো সিরিজ) – আগাথা ক্রিস্টি
প্রথম পর্ব : ঘটনাপ্রবাহ
০১.
টরাস এক্সপ্রেসে একজন বিশিষ্ট আগন্তুক
সবেমাত্র ভোর পাঁচটা শীতের সকাল সিরিয়ায়। ঘুমের আমেজই কাটেনি ভালো করে। টরাস এক্সপ্রেস দাঁড়িয়ে আলেপ্লার প্ল্যাটফর্মের ধারে। তাতে রাজকীয় বন্দোবস্ত রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য। রান্নার ব্যবস্থা, খাবার জায়গা, শোয়ার জন্য বগি-কামরা আর দুটো কোচ।
ফরাসী সেনাবাহিনীর একজন লেফটন্যান্ট দাঁড়িয়ে ঠিক শোয়ার কামরার দরজার মুখে। একজন ছোটখাটো গুফেঁ মানুষেরর সঙ্গে ব্যস্তভাবে কথা বলছেন। শুধু গোলাপী নাকের ডগাটুকু ছাড়া মানুষের আপাদমস্তক গরম জামাকাপড়ে ঢাকা।
হাত পা যেন জমে যায়। আঃ, কি ঠান্ডা! যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বেরোতে আপত্তি জানাতে পারে কিন্তু নিজের কর্তব্য পালনে অতিমাত্রায় সচেতন ও তৎপর লেফটন্যান্ট দুবো। তিনি ব্যস্ত ছিলেন অতিথিটির মনোরঞ্জনে মার্জিত ফরাসীভাষায়। কি যেন এক অজ্ঞাত কারণে জেনারেল সাহেব তার উপরওয়ালা দুবো তা জানেন। এই বেলজিয়ান ভদ্রলোককে তলব পাঠান আতঙ্কিত হয়ে। একজন হোমরাচোমড়া অফিসার আশ্চর্যজনক ভাবে মাত্র সাতদিন পরেই আত্মহত্যা করেন। আর একজন পদত্যাগ করেন। কি যেন এক অদৃশ্য মন্ত্রবলে সামরিক পরিস্থিতি একেবারে ঠান্ডা হয়ে যায়। অমন ছুঁদে জেনারেলেরর মুখেও হাসি ফুটে ওঠে–আহা দশবছর আয়ু যেন কমে গেছে।
সুদূর ইংল্যান্ড থেকে ছুটে আসা জেনারেল এই বেলজিয়ান ভদ্রলোকটিকে বলছেন, আপনি আমাদের বাঁচিয়েছেন বন্ধু, ফরাসী সেনাবাহিনীর মান রেখেছেন, আপনি রক্তপাত বন্ধ করেছেন অযথা। সব কাজ ফেলে আপনি যে আমাদের অনুরোধ রাখতে এগিয়ে আসবেন আমার স্বপ্নেরও অগোচর ছিল এই সৌভাগ্য। আপনি এত কষ্ট করে…। দুবোর কানে এসেছিল।
বেলজিয়ান ভদ্রলোকটি হাত পা নেড়ে তার কথা থামিয়ে দিয়ে (নাম এরকুল পোয়ারো) বললেন, একি বলছেন, ছি ছি, একসময় আপনি আমার জীবন রক্ষা করেছিলেন। আমার কি মনে নেই।
খানিকক্ষণ কথার মারপ্যাঁচে তারপর পরস্পরে মনোরঞ্জন চলল। অবশেষে জেনারেল পোয়ারোকে গাঢ় আলিঙ্গন করে বিদায় নিলেন।
প্রকৃত ঘটনাটা কি লেফটেন্যান্ট দুবো অবশ্য জানেন না। এই সম্মানিত অতিথিকে ট্রেন ছাড়বার আগে পর্যন্ত তার উপর দায়িত্ব দেওয়া আছে রক্ষণাবেক্ষণ করা। আর বলা যায় না তো, হয়তো কর্তৃপক্ষ খুশী হয়ে প্রমোশনই দিয়ে দিল।
আজ হল রোববার, দুবো বললেন, কাল সোমবার আপনি ইস্তাম্বুলে সন্ধ্যায় পৌঁছে যাবেন (দূর ছাই কথাবার্তা চালানোই দায়। কতক্ষণ আর শীতের মধ্যে দাঁড়িয়ে ঐ আধবুড়ো গুফে লোকটার সাথে বকবক করা যায়। তাই তো মনে হয়, মঁসিয়ে পোয়ারো বললেন। কটা দিন নিশ্চয়ই থাকবেন?
ইস্তাম্বুলে যাইনি কখনও। ইচ্ছে তো আছে–শহরটা একটু ঘুরে দেখব ভাবছি।
খুব সুন্দর শুনেছি আমি এখনও দেখিনি অবশ্য। ঠান্ডা কনকনে বাতাস বয়ে গেল এক ঝলক প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে, দুজনেই কেঁপে উঠলেন। লেফটেন্যান্ট দুবো ঘড়ি দেখলেন আর পাঁচ মিনিট বাকি আছে পাঁচটা বাজতে।
নেহাত দায়ে না পড়লে তোক বেরোয় না। বছরের এই সময়টা এত ঠান্ডা থাকে বুঝলেন মঁসিয়ে পোয়ারো।
যা বলেছেন।
বরফ পড়া শুরু হবে না আশা করি।
এই সময়টা হয় নাকি?
তবে এ বছরে এখনো হয়নি, সাধারণত এই সময়ে হয়। ইউরোপের অবস্থা তো বেশ খাবপি শুনেছি। তাহলে বাবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাই যেন বরফ পড়া শুরু হয়, অন্ততঃ দপ্তর থেকে যা খবর পাঠাচ্ছে তাতে সেইরকমই মনে হয়। বলকান অঞ্চলে তো যথেষ্ট বরফ পড়ছে।
হা ওখানে অবস্থা খুবই খারাপ। একই অবস্থা জার্মানীতেও শুনলাম।
আপনি কনস্তান্তিনোপোলে মনে হয় সন্ধ্যে সাতটা চল্লিশ আন্দাজ আশা করি পৌঁছে যাবেন।
যা বলেছেন, হ্যাঁ দারুণ জায়গা শুনেছি।
অপূর্ব।
ট্রেনের স্লিপার কামরার একটা জানালা খুলে গেল ঠিক মাথার উপর। মাথা নাড়ালেন একজন তরুণী।
মেরী ডেবেনহ্যাম বাগদাদ ছেড়েছেন গত বৃহস্পতিবার। তারপর থেকে একটু ভালো করে ঘুমাতে পারেননি, কি হোটেলে কি ট্রেনে। জানালা খুলতে বাধ্য হলেন মেরী। ওঃ ট্রেনের ভেতরটা কি গরম।
কোনো স্টেশন এটা! আলেপ্পা নিশ্চয়ই। অবশ্য দেখবার কি-ই বা আছে? সারি সারি টিমটিমে বাতি জ্বলছে। লম্বাটে প্ল্যাটফর্ম, দুজন লোক ফরাসী ভাষায় কথা বলছে জানালার ঠিক নিচেই। একজন লোক তো ফরাসী সেনাবাহিনীর অন্যজন ছোটখাট গোঁফওয়ালা। কি কাণ্ড! আপনমনেই হাসলেন মেরী যত রাজ্যের গরম জামাকাপড় গায়ে চাপিয়েছেন আধ বুড়ো ছোট্ট ভদ্রলোকটি। বাইরে হয়তো দারুণ ঠান্ডা কে জানে, ইস জানালাটা আর একটু নামিয়ে দিতে পারলে ভালো হত।
ট্রেন ছাড়বার সময় হয়েছে, কণ্ডাক্টর গার্ড দুবোর দিকে এগিয়ে এল। টুপি খুললেন ছোটখাটো মানুষটি, এবার উঠে পড়ার দরকার। এমা কেমন ডিমের মতো মাথা। হেসে উঠলেন মেরী ডেবেনহ্যাম। কি অদ্ভুত দেখতে ভদ্রলোককে। দেখলেই মজা করতে ইচ্ছে করে।