আর মিঃ কর্নওয়ার্দি আপনি কিছু জানেন কি?
না, আমাকে তিনি কিছুই বলেননি, বলল কর্নওয়াদি। আমি চিঠিটা আপনাকে পাঠিয়ে ছিলাম তার নির্দেশ মতো। এ বিষয়ে আমার কোনো ধারণা নেই, তিনি কি বিষয়ে আপনার সঙ্গে পরামর্শ করবেন। তার ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো গণ্ডগোলের ব্যাপারে হয়ত আপনাকে ডেকেছেন। এটাই আমি ভেবেছিলাম তাহলে এবার মিঃ কালের মৃত্যুর প্রসঙ্গেই আলোচনা করা যাক, বললেন পোয়ারো।
উপস্থিত সকলে সম্মতি জানালো মাথা হেলিয়ে। পোয়ারো বলল, এবার শুরু করা যাক, আপনাদের মধ্যে যে কেউ প্রথমে বক্তব্য রাখতে পারেন। জিজ্ঞাসু নেত্রে ইনসপেক্টর বার্নেট একবার মিসেস কার্লে পরে ডঃ স্টীলিং ক্লীট এর দিকে ফিরে তাকাল। তাদের দুজনকে নীরব দেখে সে নিজেই বক্তার ভূমিকা নিল।
দোতলার নিজের ঘরে বসেই প্রত্যেক দিন বিকালে মিঃ কার্লে কাজকর্ম সারতেন। তার প্রাত্যহিক রুটিন মাফিক কাজ ছিল এটাই। খুব শীঘ্রই তিনি নাকি পারস্পরিক বোঝা পড়ার ভিত্তিতে অন্য একটা বড় কোম্পানির সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সমাধা করতে যাচ্ছিলেন। বার্নেট আবার একটু থেমে হুগো কর্নওয়ার্দির দিকে ফিরে তাকাল।
তার প্রশ্নটা অনুমান করে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হুগো বলল, কনসোলিডেটেড কোচলাইন্স (অফিস) সেই সূত্রে মিঃ কার্লে রাজি হয়ে যান খবরের কাগজের দুজন প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য, ইনসপেক্টর তার কথার জের টেনে বললেন। তিনি অবশ্য কদাচিত এ ধরনের সাক্ষাৎকারে রাজি হতেন। একবারও মুখ খুলতেন না পাঁচ বছরের মধ্যেও সম্ভবতঃ। নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগেই সেই প্রতিনিধি দুজন সাক্ষাৎকারের অনুমতি পেয়ে। নর্থওয়ে হাউসে এসে হাজির হয়েছিলেন। তখন মিঃ কার্লে নিজের কাজে ঘরে ব্যস্ত ছিলেন। অথচ তারা দুজন রীতি অনুযায়ী তার দোতলার ঘরের সামনে অপেক্ষা করছিল। কনসোলিডেটেড কোচলাইনস এর অফিস একজন দ্রুত কিছু কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয় তিনটে বেজে কুড়ি মিনিট তখন মনে হয় মিঃ কার্লেকে দিয়ে সেগুলো সই করাতো। মিঃ কার্লের ঘর দেখিয়ে দেওয়া হয় তাকে সে ঘরে গিয়ে তার হাতে কাগজগুলো তুলে দেয়। তাকে সঙ্গে নিয়ে মিঃ কালে তার ঘরের দরজা পর্যন্ত এসেছিলেন। সেখানেই তার সঙ্গে প্রেসের প্রতিনিধিদের দেখা হয়ে যায়। তখন তিনি তাদের বলেন : ভদ্রমহোদয়গণ আমি দুঃখিত যে আপনারা অপেক্ষা করে আছেন। আমার শেষ করতে হবে কিছু জরুরী কাজ, আপনাদের সঙ্গে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেখা করব।
মিঃ অ্যাডাম আর মিঃ স্টার্ডাট, দুজনেই মিঃ কার্লেকে আশ্বস্ত করে বলল, আমরা অপেক্ষা করছি, আপনার সুবিধা মতো সময়ে দেখা করবেন। ঘরের ভিতর প্রবেশ করে মিঃ কার্লে ভেতর থেকে দরজা ভেজিয়ে দেন–তাকে আর তারপর জীবিত অবস্থায় দেখা যায়নি।
পোয়ারো বলল, বলে যান
ইনসপেক্টর আবার তার কথার জের টেনে শুরু করল। চারটের কিছু পরে মিঃ কর্নওয়ার্দি তাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন এবং মিঃ কার্লের ঘরের সামনে প্রেসের দুজন প্রতিনিধিকে তখনো সেখানে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়ে যান। মিঃ কার্লেকে দিয়ে কতকগুলো চিঠি সই করবার জন্য তিনি তার ঘরেই যাচ্ছিলেন। কর্নওয়ার্দি ভাবলেন, চিঠি সই করবার সময় প্রেসের দুজন প্রতিনিধির বসে থাকার কথা তাকে স্মরণ করিয়ে দেবেন। তিনি ঠিক সেই মতো মিঃ কার্লের ঘরে গিয়ে ঢোকেন। মিঃ কার্লেকে ঘরে ঢুকে প্রথমে তিনি দেখতে পেলেন না। তখন তার ঘরটা ফাঁকা মনে হয়েছিল। মিঃ কার্লের নির্দিষ্ট চেয়ারটাও ফাঁকা ছিল। কোনো সন্দেহ নেই যে এটা একটা আশ্চর্যের ব্যাপার! কারণ সহসা এসময় তিনি ঘর ছেড়ে কোথাও যান না। চওড়া টেবিলটার পিছনে হঠাৎ একটা বুটের ডগার দিকটা তার নজরে আসে। ঠিক জানালার পাশেই ছিল টেবিলটা। দ্রুতপায়ে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন ব্যাপারটা ভালো করে বোঝার জন্য। তখনই দেখলেন সেইখান থেকেই মিঃ কার্লের রক্তাপ্লুত দেহটা লম্বা ভাবে মেঝের উপর পড়ে রয়েছে। রিভলবারটাও রয়েছে তার দেহের পাশেই।
দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তখন মিঃ কর্নওয়ার্দি এবং খানসামাকে ডাকেন, নির্দেশ। দেন ও স্টীলি ক্লীটকে ফোন করার জন্য। পরে পুলিশকে খবর দেবার ব্যবস্থা করা হয় স্টীলিং ক্লীট-এর নির্দেশানুযায়ী।
পোয়ারো জানতে চাইল গুলির শব্দ কেউ শুনতে পায়নি? যেহেতু এদিকে যান চলাচল খুব বেশী। বাইরের দিকের জানালাও তখন বন্ধ ছিল। গুলির আওয়াজ শুনতে পাওয়া খুব অসম্ভব ব্যাপার মোটর আর লরির হর্নের অবিশ্রান্ত শব্দ ভেদ করে। মাথা দোলালো পোয়ারো চিন্তিতভাবে, তার মৃত্যু ঘটেছে ঠিক কটার সময় বলে মনে হয়?
আমি এখানে আসা মাত্র ওকে ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখি, স্টীলিং ক্লীট বলল–তখন চারটে বেজে বত্রিশ। হয়তো তার একঘণ্টা আগে মিঃ কার্লে মারা গিয়েছেন। অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠল পোয়ারোর মুখ। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে স্বপ্নে তিনি যে সময় এই ঘটনাটা দেখতেন বাস্তবের সঙ্গেও সেটার মিল থাকা বিচিত্র নয়। আমাকে তিনি সময় বলেছিলেন তিনটে বেজে আঠাশ মিনিট। ডঃ সীলিং ক্লীট বলল ঠিক তাই।
কোনো আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে, রিভলবার থেকে? পোয়ারো প্রশ্ন করলো।
সেটাতে ওর নিজের হাতের ছাপ ছিল।