কিন্তু কেন? পোয়ারো প্রশ্ন করলেন।
এটা আমার অভাস বলেও ধরে নিতে পারেন। আমি সবসময় এটাই করে আসছি। একথা ঠিক যে সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখাই শ্রেয়। জানতে পারি কি, এই প্রস্তুতি কিসের জন্য? কার্লে বিরক্ত হলেন এ ধরনের অবান্তর প্রশ্ন শুনে, প্রত্যেকেরই সতর্ক হওয়া উচিত-দেহরক্ষী রাখা উচিত আমার মত অবস্থায় পড়লে। এটা জানেন নিশ্চয়ই প্রতিটি বিত্তবান মানুষের অনেক শত্রু থাকতে পারে।
প্রসঙ্গটা আর দীর্ঘতর না করে, কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন পোয়ারো। ঠিক কি কারণে আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন বলুন তো?
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সব কথাই বলব, তার আগে আমি শুধুমাত্র তিনজন চিকিৎসকের পরামর্শ করেছি।
আচ্ছা তারপর? পোয়ারো জানতে চাইলেন। এসবই প্রাত্যহিক খাদ্যের ব্যাপারে প্রথম চিকিৎসক বলেন। খাবারের অনিয়মে এরকম হতে পারে। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক তিনি। দ্বিতীয় জন একজন আধুনিক স্কুলের যুবক। তিনি বিশ্বাসী, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে। তার মতে এই দুঃস্বপ্নের উৎস অল্পবয়সের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা। ঠিক তিনটে বেজে আঠাশ মিনিটেই সেই বিশেষ ঘটনাটাই ঘটে ছিল। আমি সেই অপ্রীতিকর ঘটনাকে ভুলে যেতে বদ্ধপরিকর হয়েছিলাম। এমনকি প্রয়োজন হলে নিজেকে আমি ধ্বংস করতেও প্রস্তুত, ব্যাখ্যাটা ঠিক হলো তো?
প্রশ্ন করলো পোয়ারো, আর সেই তৃতীয় ডাক্তারের কি বক্তব্য ছিল? বেনেডিক্ট কার্লের কণ্ঠস্বরে এবার রীতিমতো ক্রোধের আভাস পাওয়া গেল–এই ডাক্তারটিও যুবক। অদ্ভুত ছিল তার থিওরীটা–তার বক্তব্য অনুসারে বলা যায়–আমি নাকি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আমার জীবন সম্বন্ধে এবং অসহনীয় হয়ে উঠছে আমার কাছে আমার জীবন, সেজন্যই আমি নিজে ইতি টানতে চাইছি আমার জীবনের। যদি সেটা মেনে নিতে হয়, তবে নিজেকে ব্যর্থ স্বীকার করতে হবে। কখনই আমি সেটা মানতে পারলাম না জ্ঞানতঃ। মেনে নিলে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু যখন আমি ঘুমোই তখন আমার কোনো জ্ঞান থাকে না, অবচেতন, বা চেতনাই হোক তখন আমি যেন আমার মনের সব শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলি, প্রবলভাবে কাজ করে তখন আমার মনের সব কামনা বাসনা। সেটাই আমি তখন কাজে পরিণত করতে যাই যেটা আমি ইচ্ছা করি, অর্থাৎ নিজেই নিজের হত্যাকারী হতে চাই।
আপনি অবচেতন মনে নিজের মৃত্যু কামনা করে থাকেন। অথচ সজ্ঞানে কিছুই টের পান না। এটাই কি তার ধারণা। পোয়ারো মন্তব্য করল।
তীক্ষ্ণস্বরে চীৎকার করে উঠলেন মিঃ কার্লে, অসম্ভব, সেটা একেবারেই অসম্ভব। আমি সম্পূর্ণভাবে সুখী। এতো সুখী আর কেউ নেই এ জগতে আমার চেয়ে। অনেক কিছুই আমি, পেয়েছি জীবনে যা চেয়েছি। সব কিছুই আমার হস্তগত অর্থের বিনিময় যা যা পাওয়া যায়। কতখানি অবাস্তব এবং অসম্ভব আমার সম্বন্ধে এইরূপ ধারণা করা। পোয়ারো আগ্রহ সহকারে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ভদ্রলোকের দিকে। সেটা মনের মধ্যে সহজেই সন্দেহের ভাব উদ্রেক করবে, কার্লের হাতনাড়ার ধরন বা বাচনভঙ্গীর মধ্যে এমন একটা সুদৃঢ় প্রতিবাদের ভাব ছিল। এবার সে সতর্ক হল তার প্রতিবাদের ঝড় তোলা এবং স্বীকার না করার প্রবণতা সম্পর্কে। আর সেটার প্রয়োজনই বা কি? সে তাই নস্বরে বলল, (পোয়ারো), মঁসিয়ে আমার আর এখানে আসার কি প্রয়োজন? কার্লে এবার হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলেন। টেবিলের ওপর কয়েকবার টোকা দিলেন পরক্ষণেই অধৈর্য ভঙ্গীতে।
সম্ভাবনা আছে আরও একটা, আর একমাত্র আপনিই সেটা জানতে পারবেন, যদি ব্যাপারটা সত্য হয়। বিশ্ববিখ্যাত একজন গোয়েন্দা আপনি অবিশ্বাস্য এবং অভূতপূর্ব ভাবে আপনি সব জটিল কেস সমাধান করে দিয়েছেন। কিসে কি হয় আপনিই দেখে থাকবেন, অন্য কেউ না জানতেও পারে।
পোয়ারো জানতে চাইলেন, বলুন তো আপনি কি জানার কথা বলছেন!
নীচু পর্দায় হঠাৎ কালের কণ্ঠস্বর নেমে এল, তিনি ফিসফিস করে বললেন, ধরুন কেউ আমাকে খুন করতে চায়–সে এই কাজটা কিভাবে করবে? সেকি আমাকে বাধ্য করাতে পারবে রাতের পর রাত এই স্বপ্ন দেখতে, সে হয়ত ভাবছে রাতের পর রাত এই স্বপ্ন দেখে জীবনের প্রতি ঘৃণায় হয়তো আমি নিজেকে শেষ করব। আমাকে তার হত্যার অভিপ্রায়টা কাজে পরিণত হবে, সেই অর্থে দেখলে। নিজের হাতে সে আমাকে হত্যা করল না। আমিই সেটা করলাম। রাতের পর রাত ধরে সে আমাকে হত্যা করার জন্য প্ররোচিত করল। সেটা কেউ জানতে পারল না। এমনকি পুলিশও নয়। সেই প্রবাদ বাক্যটার মতো, সাপও মরল না। আবার লাঠিও ভাঙ্গল না।
আপনি কি হিপনোটিজমের কথা বলতে চাইছেন? জিজ্ঞাসা করল পোয়ারো।
কার্লে বলল। হা কতকটা সেই রকমের বলতে পারেন। পোয়ারো বিষয়টা নিয়ে মনে মনে চিন্তা করল বেশ কিছু সময়। তার মনে কি উত্তর তৈরি হল কে জানে, তবে ধীরে ধীরে মাথা নেড়ে সে জানাল। হ্যাঁ সেটা সম্ভব আমার মনে হয়। আমি মনে করি এক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া সর্বাপেক্ষা উচিত। আচ্ছা আপনার জীবনের অভিজ্ঞতায় কি আপনি এ ধরনের কেস দেখেছেন?
না। আমি কখনও এরকম ঘটনার মুখোমুখি হইনি, জানালো পোয়ারো। নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পারছেন আমার বক্তব্যটা। একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে আমায় রাতের পর রাত জাগতে বাধ্য করা হচ্ছে। হয়তো একদিন আমি নিজেকে অবশেষে খতম করে ফেলবো এরকম মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে। বাধ্য হবো আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে।