ইনসপেক্টর বার্নেট তার কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বলে উঠল, মঁসিয়ে পোয়ারো, এর অন্তর্নিহিত কি মানে আপনি বলতে চাইছেন?
পোয়ারো কাধ ঝাঁকিয়ে বলতে শুরু করল, ষড়যন্ত্রটা এঁটেছিল দুজন মাত্র ব্যক্তি। তাদের দুজনের মধ্যে একজন হলেন মিসেস কার্লে আর অপরজন মিঃ হুগো কর্নওয়ার্দি। বেনেডিক্ট কার্লের জবানীতে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এই কর্নওয়াদি, আর আমার সঙ্গে কিরূপ আচরণ করতে হবে তিনিই সেটা নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি সিনেমা দেখতে চলে যান আমি এখানে এসে হাজির হবার আগেই। তবে প্রকৃত পক্ষে তিনি সিনেমা দেখতে যাননি। তিনি বাড়ী থেকে বের হবার পর আবার পেছনের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে এসেছিলেন। তার কাছে কাছে সবসময়ই থাকত সেই দরজার একটা চাবি। নিজের ঘরেই তিনি বসে রইলেন সবার অলক্ষ্যে ফিরে এসে আর তিনি তখন বেনেডিক্ট কার্ডের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন; আর আমরা সকলে আজ বিকেলে এখানে মিলিত হতে পেরেছি। কারণ হল এটাই।
দীর্ঘদিন ধরে যে সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। মিঃ কর্নওয়ার্দি, তিনি অবশেষে সেটা পেলেন।
আপনি কি বোঝাতে চাইছেন সুবর্ণ সুযোগের মানেটা কি? ইনসপেক্টর বার্নেট পোয়ারোকে বাধা দিয়ে প্রশ্ন করল। ব্যাপারটা হলো, দরজার বাইরে দুজন খবরের কাগজের প্রতিনিধি বসে থাকলে তারা যদি সাক্ষ্য দেয় নির্দ্বিধায় যে তারা কাউকে ঘরের ভেতরে ঢুকতে দেখনি। তার ওপর অবিরাম যানবাহন চলাচলের রাস্তাঘাট বিকেলের দিকে সবসময় কোলাহল মুখরিত থাকে। কর্নওয়ার্দি এই সুযোগে একটা লম্বা লোহার চিমটের ডগায় একটা বস্তু নিয়ে এসে তার ঘরের জানালার সামনে নাড়াতে থাকেন আড়াল থেকে। মিঃ কালে তখন ব্যাপারটা কি দেখবার জন্য জানালার সামনে এসে মুখ বাড়িয়ে দেখতে চেষ্টা করেন ঠিক সেই মুহূর্তে কর্নওয়াদি তার কপাল লক্ষ্য করে গুলি চালান।
এবার আবার প্রশ্ন করল ইনসপেক্টর, কিন্তু কেন কেউ দেখতে পেল না মিঃ কর্নওয়াদি যখন গুলি চালাচ্ছেন? হয়তো তার সৌভাগ্যের ব্যাপার এটা যখন তিনি গুলি চালালেন তখন কেউ দেখতে পায়নি বলল পোয়ারো।
সেটা কি করে সম্ভব হলো? বানেট জানতে চাইলেন। একটা উঁচু নিরেট দেওয়াল ছিল মিঃ কার্লের ঘরের জানালার সামনে তার ফলেই তার এই অপকর্মের কোনো সাক্ষী রইলো না। স্টীলিং ক্লীট দুচোখে কৌতূহল মাখিয়ে প্রশ্ন করল, তারপর? মিঃ কর্নওয়াদি তারপর তার নিজের ঘরে বসে কুড়ি পঁচিশ মিনিট অপেক্ষা করেন। এরপর সেই লোহার চিমটেটা আর রিভলবারটা একতাড়া চিঠি আর ফাইলপত্রের আড়ালে লুকিয়ে বেশ সতর্কভাবে মিঃ কার্লের ঘরে প্রবেশ করেন তিনি খবরের কাগজের দুই প্রতিনিধির সামনে দিয়ে। পোয়ারো এইভাবে ব্যাপারটার ব্যাখা দিল। প্রথমেই তিনি একটা কাজ করলেন ঘরে ঢুকে। রিভলবারের উপরে মিঃ কার্লের আঙুলের ছাপ লাগিয়ে সেটা তার মৃতদেহের পাশে ফেলে রাখলো সে। যথাস্থানে লোহার চিমটেটাও রেখে দিলেন। তারপর ঘর ছেড়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলেন এবং চোখে মুখে নকল উদ্বেগ ফুটিয়ে তিনি সবাইকে জানিয়ে দিলেন মিঃ কার্লের আত্মহত্যার খবরটা।
এমন ব্যবস্থাও তিনি করে রেখেছিলেন যাতে করে পুলিশ মিঃ কার্লের ঘরে ঢোকা মাত্রই আমার চিঠিটা, যেটা আমার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল, যাতে পুলিশের সেটা নজরে আসে। ফলে আমার এখানে ডাক পড়বে অনিবার্যভাবে। আর আমি যখন এখানে আসার পর আমার অনুরোধ মিঃ কালে তার স্বপ্নের অদ্ভুত যে বিবরণ শুনিয়েছিলেন সেটা সকলের কাছে খুলে বললো, তখন তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতার কথাও খুব সহজেই প্রমাণ হয়ে যাবে।
তবে–বলে থামলো পোয়ারো।
ইনসপেক্টর বার্নেট জানতে চাইল মিঃ পোয়ারো এই তবে–টার মানে?
চকিতের মধ্যে মিসেস কার্লের মুখের ওপর পোয়রোর দৃষ্টি নিবন্ধ হলো। ধূসর পার ছায়া এখন মহিলার মুখাবয়বে। গভীর একরাশ ভয় ও হতাশা তার সেই দুচোখে।
এরকুল পোয়ারো তার বক্তব্য শেষ করতে গিয়ে একটু থেমে বলল, এবং পরিবেশে এরপর এক অন্তবিহীন সুখের পরিণতি লাভ করা যাবে। কারণ মিঃ কার্লে তার যাবতীয় অর্থ সম্পত্তি আর অর্থ তার একমাত্র মেয়ের নামে উইল করে গেলেও, কর মুক্ত আড়াই লক্ষ পাউন্ড দিয়ে গিয়েছিলেন তার স্ত্রীর নামে। দুজনেই বেশ সুখেই দিন কেটে যেত সেই টাকায়? এরকুল পোয়ারো ড. জন স্টীলিং ক্লীটকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে এলেন নর্থওয়ে হাউস ছেড়ে। আকাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে তাদের ডানদিকে কারখানার বিরাট উঁচু পাঁচিল। লম্বা সরু একটা প্যাসেজ পাঁচিলের পাশ দিয়ে সোজা চলে গেছে। তারা এগিয়ে চলল দুজনে সেই রাস্তা ধরে। এরকুল পোয়ারো থেমে পড়ল মিঃ বেনেডিক্ট কালের ঘরের জানালার ঠিক নীচেই। সেখানে তার নজরে পড়ল কালো রঙ এর একটা বস্তু। পোয়ারো নীচু হয়ে সেটা কুড়িয়ে নিল। সেটা ছিল, একটা খেলনা বিড়াল, কালো কাপড় দিয়ে মোড়া।
পোয়ারো বলল, হায় ঈশ্বর, কর্নওয়ার্দি লম্বা চিমটে দিয়ে ধরে এই জিনিসটা মিঃ কার্লের জানালার সামনে নিয়ে এসে নাড়াচাড়া করছিল। অবশ্যই কর্নওয়ার্দি সে কথা জানত যে মিঃ কার্লে একেবারে বিড়ালদের সহ্য করতে পারেন না। আর জানালার ধারে ছুটে এসেছিলেন তিনি খেলনা বিড়ালটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে?