পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল, বুঝতে পারছেন না আপনি? উত্তর দিল হুগো কর্নওয়ার্দি, সত্যি তাই আমাদের ব্যাপারটা যেন অদ্ভুত মনে হচ্ছে। এবার মিসেস কার্লে মুখ খুললেন, ওদের দুজনের বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত হচ্ছি।
মিস জোয়ানো কার্লে শুধু ব্যতিক্রম। এবার সে বলল, অবশ্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে লণ্ড্রী কর্তৃপক্ষের ঐ চিঠিটার, মঁসিয়ে পোয়ারো আমিও সেটাই মনে করি। এরকুল পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে সে অনুরোধ জানালো যাতে তিনি সেটা ব্যাখ্যা করে বলেন।
আপনার অনুমান নির্ভুল, ম্যাডাম, তার কথায় সম্মতি জানিয়ে পোয়ারো বলল, এ ব্যাপারে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে লণ্ড্রী কর্তৃপক্ষের চিঠিটার। এক অদ্ভুত রহস্যময় হাসি ফুটে উঠল পোয়ারোর ওষ্ঠা ধারে। লণ্ড্রী কর্তৃপক্ষ আমার টাই এর রঙ জ্বালিয়ে দিয়ে জীবনে এই একটি বার উপকার করেছিলো। এটাই খুব আশ্চর্যের ঘটনা যে আপনারা এমন একটা সহজ ব্যাপার কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। তিনি একপলকেই বুঝতে পারতেন যে আমি তাকে ভুল চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি ভ্রূক্ষেপও করেননি। তবে কেন? এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। তাহলে কি তিনি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না তখন? সত্যিই কি তিনি অন্ধ?
হঠাৎ প্রশ্ন করলেন ইনসপেক্টর বার্নেট, কেন, তখন কি চশমা ছিল না তার চোখে?
মাথা নেড়ে হেসে পোয়ারো বলল, তিনি অবশ্য চশমা পরেই ছিলেন। আর ব্যাপারটা আমার কাছে সেজন্যই আশ্চর্য মনে হয়েছিলো। অন্যমনস্ক ভাবে ঝুঁকে পড়লেন তিনি আমাদের দিকে এবং বললেন, মিঃ কালের স্বপ্নের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী। লক্ষ্য করে দেখুন এই স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবে কত মিল। তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন আত্মহত্যা করছেন বাস্তবেও তাই হলো। তাকে মৃত অবস্থায় একলা ঘরের মধ্যে পাওয়া গেল। একটা রিভলবার পড়েছিল তার মৃতদেহের পাশে ঠিক সেই সময় তার ঘর থেকে কাউকে বেরিয়ে আসতে বা ঢুকতেও দেখা যায়নি, অর্থাৎ যে সময় তিনি মারা গেছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে অতএব এখানে অতি সহজেই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে অবশ্যই ঘটনাট আত্মহত্যা।
ড. স্ট্রীলিং ক্লীট পূর্ণ সমর্থন জানালেন, হ্যাঁ নিশ্চয়ই এটা ধরে নেওয়া যায়।
ধ্যানমগ্ন যোগীর মতো চারিদিক দেখে নেওয়ার পোয়ারো ভালো করে নিল, তার কণ্ঠে মেঘ মেদুর রহস্যময় ভাব ফুটে উঠল। ঘটনাটা প্রকৃতপক্ষে কি জানেন। এটা একটা খুনের মামলা, আর অপরাধ জগতে এটা একটা অভুতপূর্ব নজির যে এর পশ্চাতে যে অভিনব পরিকল্পনা রয়েছে। পেয়ারো বলল, আসলে সেটাই মনে হয়।
অস্থিরভাবে পোয়ারো টেবিলের ওপর আঙুল দিয়ে টোকা মারছিল। একটা সবুজ আভা বিচ্ছুরিত হচ্ছিল তাকালে আমাকে হাস, যে তখন সেই
জানেন সেদিন মিঃ কার্লে আমাকে তার ঘরে নিয়ে যেতে চাননি কেন? কে ছিল তখন সেই ঘরে? বলল পোয়ারো, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যে তখন সেই ঘরে স্বয়ং বেনেডিক্ট কালেই ছিলেন। রুদ্ধশ্বাসে যেন সবাই তার কথাগুলো শুনছিলো। সামান্য হাসলো পোয়ারো তাদের বিস্মিত চোখগুলোর দিকে তাকিয়ে। বলল, অবশ্যই আমার সঠিক উত্তর মিলছে ওই চিঠিটার জন্যেই। আমি হয়ত পাগলের মত প্রলাপ বকছি, এর পরেও আপনারা হয়ত সেটাই ভাবছেন। না, আমি সুস্থ মস্তিষ্কেই এই সিদ্ধান্তে এসেছি। আচ্ছা এবার তাহলে পরিষ্কার করেই বলি। আমি কথা বলেছিলাম মিঃ কার্লের সঙ্গে। কেন তিনি এই চিঠি দুটোর পার্থক্য করতে পারেন নি। জানেন কি আপনারা তার কারণ? কারণ তিনি ছিলেন একজন স্বাভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ।
চমকে উঠলেন ড. স্ট্রীলিং ক্লীট, স্বাভাবিক দৃষ্টি মানে, তিনি বললেন, ছেলেবেলা থেকেই ওর দৃষ্টি মানে, তিনি বললেন, ছেলেবেলা থেকেই ওর দৃষ্টি শক্তি খারাপ ছিলো, এটাই আমি জানি–তা সত্ত্বেও আপনি বলছেন যে
পরে সে প্রসঙ্গে আসছি পোয়ারো বলল, তখন উনি সত্যিই চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছিলেন না। কারণ তার চোখে সে সময় শক্তিশালী লেন্সের চশমা ছিলো। ডা. স্ট্রীলিং ক্লীট, আমি কি ঠিক বলছি যে, ওই লেন্সের চশমা পরলে স্বভাবিক দৃষ্টি সম্পন্ন লোকও কার্যতঃ অন্ধ হয়ে যায়?
অস্ফুট স্বরে বলতে লাগল স্ট্রীলিং ক্লীট, হাঁ এটা খুব সত্যি কথা। অবশ্যই তা হতে পারে–পোয়ারো তার কথায় যোগ টেনে বলতে থাকে। মিঃ বেনেডিক্ট কার্লের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই আমার জানি না কেন মনে হয়েছিল। আমি একজন অন্তসারশূন্য ব্যক্তির সামনে উপস্থিতি হয়েছি। আর কোনো অভিনেতা যেন তার নির্দিষ্ট ভূমিকাটুকু অভিনয় করে চলেছে। ভেবে দেখুন একবার পারিপার্শ্বিক পরিবেশটার কথা। ঘরটা সামান্য আলো যুক্ত ছায়াময়। সবুজ ঘেরাটোপা দেওয়া একটা জোরালো আলো জ্বলছে ঘরের মাঝখানে। আর একজন দীর্ঘকায় মানুষ বসে আছেন আরাম কেদারায় হেলান দিয়ে আলোর ঠিক পেছনেই। তার নাসিকা খড়গ এর মতো উন্নত, পরনে ঢিলেঢালা ড্রেসিং গাউন–অবশ্য এখন বোঝ যাচ্ছে নামটা তার নকল ছিলো। ধবধবে সাদা মাথা ভর্তি চুল। আর এক জোড়া চোখ লুকিয়ে চশমার পুরু লেন্সের আড়ালে।
অবশ্য সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ আছে কি। ডঃ বেনেডিক্ট কার্লে তার যে দুঃস্বপ্নের কথা নিজের মুখে আমার কাছে বলেছিলেন। মিসেস কার্লের উক্তি আর মিঃ কার্লের ব্যক্ত করা সেই অদ্ভুত স্বপ্নের কথা। এই দুটিই মাত্র প্রমাণ।