ম্যাডাম আপনি খুবই বুদ্ধিমতী মহিলা। হ্যাঁ, এটাই একটা কারণ হতে পারে চিঠিটা রেখে যাওয়ার এবং ব্যাখ্যা করলে এটাই দেখা যায়। যেমন মনে করুন, সেই অদ্ভুত স্বপ্নের প্রসঙ্গ উঠবে মিঃ কার্লের মৃত্যুর পর পুলিসী তদন্তের সময়। হয়তো আমিও সে সময় জানাবো এই স্বপ্নের কথা, হয়তো আমার মতো মিসেস কালেও জানাবেন একই কথা। যেহেতু আমরা দুজন মৃত মিঃ বেনেডিক্ট কার্লের মুখ থেকে শুনেছি সেই স্বপ্নের কথা। ঘোড়ার মুখের কথার মতো যেন ব্যাপারটা। তবে অত্যন্ত জরুরী, সেই অদ্ভুত স্বপ্নটা। যতই ভয়াবহ স্বপ্ন হোক না কেন ম্যাডাম, অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সেটা। এবার আমি দ্বিতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাই। পোয়ারো বলল–আমি ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম মিঃ কার্লের কাছে তার স্বপ্ন কাহিনি শোনার পর, সে আমি তার ঘরে গিয়ে সেই টেবিল, টেবিল সংলগ্ন ড্রয়ার এবং রিভলবারটা স্বচক্ষে দেখব। প্রথমে তিনি আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে চেয়ার ছেড়ে যেন উঠে দাঁড়াবার ভঙ্গী করলেন, কিন্তু না, আমার অনুমান ভুল, সেটা তার ইচ্ছা ছিল না। তার মনের কথা হল তিনি তার ঘরে নিয়ে যেতে চান না। স্পষ্টভাবে বোঝা গেল কিছু একটা ভেবে নিয়ে তিনি মত পরিবর্তন করলেন। আমার প্রস্তাবটা তিনি সরাসরি বাতিল করে দিলেন। মানুষটা কি অদ্ভুত। রাজি হয়েও মত পরিবর্তন করলেন। তার এইরকম মানসিক পরিবর্তন কেন? কেন প্রত্যাখ্যান করলেন আমার সেই অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক প্রস্তাবটা? অনেক দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাপারটা ভেবেছি, তলিয়ে দেখার চেষ্টা করেছি। আপনাদের মতামতের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে চাই সেই গবেষণা লব্ধ উত্তরটা। আপনারা কি জানেন, এ সম্বন্ধে কিছু বলতে পারেন। চেষ্টা করে দেখুন না বলতে পারবেন। সবটা না পারলেও একটু কিছু বলুন। তারপর না হয় আমি বলব। হয়তো এসব ক্ষেত্রে আমরা নিজের চেয়ে অন্যদের মতামত বেশি কাজে লাগে। আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণ কি ছিল তার ক্ষেত্রে, সেজন্য আপনাদের বলছি, আপনারা কি কেউ জানেন? প্রত্যেকে প্রত্যেকের মুখের দিকে দেখতে লাগলো, তাদের অভিব্যক্তি এমন ছিল। যেন, তুমিই বলো। আমি শুনব, আমার ধারণাটা তোমার সঙ্গে মিলিয়ে নেব। আর চিৎকার করে বলে উঠব যদি মিলে যায়–ঠিক এই কথাটাই ভেবেছিলাম আমি। যদি না মেলে, সেজন্য চট করে বলার সাহস হচ্ছিল না। যদি রহস্য উদঘাটন না করতে পারি। কিছু মন্তব্য না করাই বুদ্ধিমানের কাজ ভেবে চিন্তে এটাই ঠিক করলাম। ভুল বর্ণনা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে মুখ বন্ধ করে থাকলে। পোয়ারো তাদের সম্বন্ধে এইসব চিন্তা করছিল। কেউই অগ্রসর হল না তার এই প্রশ্নের উত্তর দিতে। যেন সবাই পালন করছে এক অদ্ভুত নীরবতা।
যখন আপনাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর পেলাম না। অতএব আমি প্রশ্নটা অন্যরকম ভাবে আপনাদের সামনে উপস্থিত করছি। এমন কিছু ছিল কি পাশের ঘরে যার জন্য মিঃ কার্লে রাজি হলেন না আমাকে সেখানে নিয়ে যেতে? যদি তাই হয় তবে সেটা কী? পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল। পূর্ববৎ নীরবতা বিরাজ করছিল ঘরের মধ্যে। কে যেন সবার মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছিল আর চাবি যেন হারিয়ে গেছে। পোয়ারো বলল, নিঃসন্দেহে প্রশ্নটা কঠিনই নয় শুধু, জটিলও বটে। সর্বোপরি এটাই সত্যি যে এমন কোনো কারণ ছিল যার জন্য মিঃ কালে তার সেক্রেটারীর ঘরেই বন্দোবস্ত করেছিলেন, আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার। আর নিজের ঘরে নিয়ে যেতে তিনি অস্বীকার করেন যে কোনো কারণেই হোক। তার ঘরে এমন কিছু ছিল, যা আমাকে তিনি দেখাতে চাননি এর থেকেই প্রমাণিত হয়। হয়তো তার কোনো উপায় ছিল না আমাকে দেখাবার এমনটাও হতে পারে।
এরপর একটু নীরবতা পালন করলো পোয়ারো, তারপর সবার মুখের উপর দিয়ে দৃষ্টি বুলিয়ে নিয়ে বলে উঠল, আমি এবার তৃতীয় ঘটনার প্রসঙ্গ উত্থাপন করবো এই নাটকের। সেটা ঘটনা হিসাবে বেশ চাঞ্চল্যকর এবং ওই সন্ধ্যায়ই ঘটেছিল। মনে আছে কি সেদিনের কথা, আমি যখন বেরিয়ে আসছিলাম ঘর থেকে মিঃ কার্লের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে, হঠাৎ তখন তিনি একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলেন। একটা প্রথা বর্হিভূত কাজ করলেন তিনি অর্থাৎ আমার কাছে ফেরৎ চাইলেন চিঠিটা। আমার অবশ্য আপত্তি ছিল না চিঠিটা ফেরৎ দিতে, তবে এই ভেবে অবাক হয়েছি যে কেউ কাউকে চিঠি দিলে সেটা ফেরৎ দিতে পারা যায়। আর আমি ভুল করে তাকে অন্য একটা চিঠি দিয়ে ফেলি, চিঠিটা ছিল আমার লণ্ড্রী কর্তৃপক্ষের লেখা। আমার ফেরৎ দেওয়ার পর চিঠিটা তিনি চোখ বুলিয়ে দেখলেন, তারপর যত্ন করে পাশের টেবিলে রেখে দিলেন। ফিরে যাচ্ছিলাম আমি, তারপর হঠাৎ আমার মনে পড়ল দরজার কাছে এসে, তবে তার কাছে গিয়ে চিঠিটা আবার পালটে নিয়েছিলাম। তবে সেদিন-এর সাক্ষাৎকারের পর আমি মনে মনে বেশ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম। একথা অস্বীকার করতে পারব না।
মনে মনে কোন সদুত্তর পাচ্ছিলাম না কতগুলো প্রশ্নের। শেষের ঘটনা তো বিশেষভাবে বিস্ময়কর।
বক্তব্য থামালো পোয়ারো। এবার সকলের মুখের দিকে দৃষ্টি বিনিময় করলো। কিছুই কি আন্দাজ করতে পারছেন না আপনারা?
উত্তর দিলো এবার প্রথমে ড. স্ট্রীলিং ক্লীট–মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার লণ্ড্রী কর্তৃপক্ষের চিঠির কি ভূমিকা থাকতে পারে এর মধ্যে সেটা আমার বুদ্ধির অগম্য।