মাথা নাড়লো পোয়ারো নিজের মনে। মনে হল তার মুখের ভাব দেখে যেন একটা প্রলম্বিত নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো ফুসফুস থেকে এটাই মনে হল। পোয়ারো তার সহজাত ভঙ্গীতে সামনের দিকে সামান্য একটু ঝুঁকে পড়ে বলে উঠল, মনে হয় এখানেই মামলার নিষ্পত্তি ঘটলো, এটাই আমার বিশ্বাস। তাহলে সমাধানের একটি সূত্র খুঁজে পেয়েছেন আপনি?
হ্যাঁ পেয়েছি হয়তো কিন্তু
তবে কিন্তু কেন মঁসিয়ে পোয়ারো।
আমার এই সমাধানের সূত্র এখানে অনেকেরই যেমন, মিসেস কার্লে এবং হুগোর পছন্দ নাও হতে পারে। বলল পোয়ারো ওরাই বা কেন মেনে নেবেন না ওঁরা। আমরা অর্থাৎ পুলিশ কর্তৃপক্ষ যদি আপনার সমাধান সূত্রকে যথেষ্ট বলে মনে করি। বললেন মিঃ বানেট বিশেষত মিসেস কার্লে মিথ্যাবাদী হয়ে যাবেন মেনে নিলে, সে কারণেই মানতেন না। স্বামী আত্মহত্যা করে কেন? হয়তো তার স্ত্রীর সহযোগীতা ও ভালোবাসার অভাবে, তাই নয় কি? আর স্ত্রীই বা নিজেকে শেষ করে কখন? স্বামীর অত্যাচারে।
ইনসপেক্টর বার্নেট বললেন, মিঃ পোয়ারো এটাই ঠিক কথা। আপনি কি তবে নিশ্চিত যে আত্মহত্যা করেছেন মিঃ কার্লে?
আত্মহত্যা করবেন কেন তিনি, আত্মহত্যা করার মতো কি তার কোনো কারণ ঘটেছিল? পোয়ারো বলল।
সেই দুঃস্বপ্ন দেখতে দেখতে হয়তো তিনি একসময় পাগলামীর পর্যায়ে চলে গিয়েছিলেন, আর পাগলামীর একটা লক্ষণ আত্মহত্যা করা। এটা জানেন তো?
অবশ্যই জানি, স্বপ্নটা যদি সত্যি হয় সেই ক্ষেত্রে বলল পোয়ারো।
তাহলে কি স্বপ্নটা সত্যি নয়? জানতে চাইলেন বার্নেট। স্বপ্ন কি আর সত্যি হয়? উত্তর দিল পোয়ারো। পোয়ারোর কথার সারমর্মে যা বোঝাতে চাইছেন, ইনসপেক্টর বার্নেট বুঝতে পারল, সে যা জেনেছে দুঃস্বপ্নের কোনো সম্পর্ক নেই কার্লের আত্মহত্যার সঙ্গে। তাহলে কিসের সঙ্গে জড়িত মিঃ কার্লের আত্মহত্যা।
সারা ঘরে এখন বিরাজ করছে একটা, অস্বস্তিকর নীরবতা। সেই ছোটখাট মানুষটির মুখের ওপর এখন সকলের উদগ্রীব দৃষ্টি। কিন্তু সে দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিল না এরকুল পোয়ারোর। সে তখন ব্যস্ত তার পশমের মতো নরম গোঁফের প্রান্ত ভাগে হাত বুলাতে। এটাও একটা সহজাত অভ্যাসের অন্যতম। একটা বিব্রত হত বিহ্বল ভাব ইনসপেক্টর বার্নেটের মুখে। ডঃ স্টীলিং ক্লীট তাকিয়ে আছে, দুই ভুরুর মাঝখানে কুঞ্চন রেখে কুটীল চোখে, অবিশ্বাস আর বিভ্রান্তি মুখে চোখে মাখিয়ে চেয়ে আছে মিঃ হুগো কর্নওয়ার্দি। অব্যক্ত বিস্ময় মিসেস কার্লের দু চোখের কোণে আর অদ্ভুত চঞ্চলতা মিস জোয়ানোর চোখের তারায়।
মিসেস কার্লে শেষ পর্যন্ত ভঙ্গ করলেন সেই নীরবতা। ভীত সন্ত্রস্ত কণ্ঠস্বরে তিনি বলে উঠলেন মঁসিয়ে পোয়ারো, আমি এসবের, মানে কিছুই বুঝতে পারছি না, সেটা কি স্বপ্ন ছিল না দুঃস্বপ্ন? এ নিয়ে অবশ্যই ভাবনা চিন্তা করা উচিত।
মহাশয়া আপনি ঠিকই বলেছেন, পোয়ারো তাকে সমর্থন জানিয়ে বলল, সত্যই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্বপ্নটা।
কেঁপে উঠলেন মিসেস কার্লে, তিনি বললেন, এর আগে আমি কখনো অলৌকিক বা অতি অলৌকিক ব্যাপারটা বিশ্বাস করিনি। কাউকে যদি রাতের পর রাত এই দুঃস্বপ্নর শিকার হতে হয় সেরকম পরিস্থিতিতে
উঃ স্টীলিং ক্লীট বলল, সত্যিই ঘটনাটা আশ্চর্যজনক। অভূতপূর্ব, আপনার যদি না আপত্তি থাকে তাহলে মঁসিয়ে পোয়ারোকে আমাদের সরাসরি ব্যাপারটা বলতেন, যেহেতু আপনি সবিস্তারে খোদ মালিকের কাছ থেকে ব্যাপারটা শুনেছেন, আবার পেশাদারী ভঙ্গিমায় হালকা ভাবে একটু কেশে নিয়ে বলতে শুরু করল, মিসেস কার্লে, মাপ করবেন, মিঃ কার্লে যদি নিজের মুখে কথাটা না বলতেন। আমার বক্তব্য হচ্ছে যে
পোয়ারো বলল সত্যি তাইই, তারপরই তার আধবোজা চোখ দুটি খুলে গেল, সে যেন হঠাৎ জেগে উঠল পিঙ্গলস বুজ আলোর আভাস তার ধূসর চোখের মনিতে, যদি না শোনাতেন আমাকে এই কাহিনি বেনেডিক্ট কার্লে–নিঃশ্বাস নেবার জন্য একটু থামল সে। সবার মুখের উপর দিয়ে সে তার তীক্ষ্ণ উজ্জ্বল দৃষ্টি অর্ধবৃত্তাকারে একবার বুলিয়ে নিল।
তারপর সে এইভাবে বলতে শুরু করল
সেদিন সন্ধ্যায় এমন একটা কিছু ঘটেছিল, যার ব্যাখ্যা করতে আমি পারিনি, হয়তো আপনারা সকলেই সেটা বুঝতে পেরেছেন। প্রথম কথা হল, মিঃ কার্লে কেন আমার সঙ্গে তার সেই চিঠি আনতে বলেছিলেন?
কর্নওয়ার্দি অভিমত প্রকাশ করল হয়তো সনাক্তকরণের জন্য।
অত সোজা নয় বাছা আমার, অত্যন্ত বিস্ময়কর ব্যাপারটা। নিশ্চয়ই কোনো জোরালো কারণ আছে এর পশ্চাতে। কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে, সেটা শুধু আমাকে নিয়ে আসতেই বলা হয়নি, চিঠিটা আমাকে দিয়ে দিতেও বলেন। সেই চিঠিটা এমন কি তিনি নষ্ট করেও ফেলেননি, আমার চলে আমার পরও। তার সেই চিঠিটা আজ বিকেল পর্যন্ত তার অন্য কাগজের মধ্যে ছিলো। কেউ তিনি রেখে দিয়েছিলেন সেই চিঠিটা, স্বভাবতই এই প্রশ্ন আসে-কেন, কেন, কেন–এবার মুখ খুলল জোয়ানো কার্লে। এবার জোয়ানো কার্লে বলতে লাগল, সেই অদ্ভুত স্বপ্নের কথা সবাইকে জানাবার জন্য চিঠিটা তিনি রেখে দিয়েছিলেন, কারণ যদি তার জীবনে কোনো অঘটন ঘটে এটা আমার ধারণা। তার কথায় সম্মতি জানালো পোয়ারো মাথা নেড়ে। তারপর শান্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে সে ভাবল, মেয়েটা অসাধারণ। কেবলমাত্র তাই নয় সেজন্য মিসেস কার্লের থেকে অন্যরকম। তার মানসিকতা পৃথক, পরিচয়ও তার অন্যরকম। আর বিচার বুদ্ধি অনন্য। কিন্তু আবার ভাবল পোয়ারো, অভিনয় করছে না তো মেয়েটি? অনেক সময় চতুর মেয়েদের, ভেতরের রূপ বোঝা যায় না বাইরে থেকে দেখে। আবার জোয়ান কার্লের সম্বন্ধে বিরূপ কিছু ভাবাই যায় না। তাই সে ফিরে গেল মেয়েটির সম্বন্ধে পূর্ব ধারণায় এবং সে বলল :