তখন প্রায় সওয়া এগারোটা হবে, হুগো বললেন।
মিঃ কার্লের সঙ্গে সেদিন কি আপনার আর দেখা হয়েছিল?
না। বললেন কনওয়ার্দি।
তিনি কি পরের দিন সকালে আপনাকে এ বিষয়ে কিছু বলেছিলেন?
না তিনি কিছু বলেন নি, জানালো মিঃ কর্নওয়ার্দি আবার একটু থামলো পোয়ারো। শুরু করল আবার সে, যখন আমি এখানে এসে পৌঁছাই তখন আমাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি। না, আমাকে তিনি বলেছিলেন আমি যেন হোমসকে নির্দেশ দিই। আপনাকে যেন সোজাসুজি তার ঘরেই নিয়ে যাওয়া হয়। মিঃ কার্লে সেখানেই আপনার জন্য তিনি অপেক্ষা করবেন। কিছু জানেন কি আপনি এই ব্যবস্থা কি জন্য? পোয়ারো প্রশ্ন করলো।
মাথা নাড়লেন কর্নওয়ার্দি। কখনো আমি তার নির্দেশ সম্বন্ধে কোনো প্রশ্ন করতাম না, সেদিনও করিনি। তিনি খুব বিরক্ত হতেন তার মুখের ওপর কোনো কথা বললে। এই কারণে সব ব্যাপারেই আমি নীরব থাকতাম।
তিনি কি সবসময় তার নিজের ঘরেই আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলঃ হ্যাঁ, বেশির ভাগ সময়, তবে সবসময় নয়, আমার ঘরেও হয়তো কখনো আপনাদের বসানোর ব্যবস্থা হতো। বলল কর্নওয়ার্দি।
আচ্ছা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য ছিল কি এর পেছনে? কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করলো কর্নওয়ার্দি তারপর বলল, আমার তো সেটা মনে হয় না। অবশ্য এটা নিয়ে কোনোদিন বিশেষভাবে ভেবে দেখিনি।
এবার মিসেস কালের দিকে ফিরে তাকালেন পোয়ারো, ম্যাডাম, আপনাদের খানসামা হোমসকে একবার ডেকে দেবেন, আমি তার সঙ্গে কথা বলতে চাই।
অবশ্যই, মঁসিয়ে পোয়ারো তাকে আমি এক্ষুনি ডেকে পাঠাচ্ছি। তারপর বেল টিপলেন মিসেস কার্লে। হোমস সঙ্গে সঙ্গে পর্দা সরিয়ে উঁকি দিল অভিজ্ঞ খানসামার মতই।
আমাকে আপনি ডেকেছেন ম্যাডাম, সে জিজ্ঞাসা করল। পোয়ারোর দিকে ইঙ্গিত করে দেখিয়ে দিলেন মিসেস কার্লে। হোমস বিনীতভাবে পোয়ারোর দিকে ফিরে তাকাল। এবং বলল, বলুন স্যার কি জানতে চান? হোমস, বলতো তোমার প্রতি কি নির্দেশ দেওয়া ছিল, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যখন আমি এখানে আসি? বলল হোমস তার গলা পরিষ্কার করে মিঃ কর্নওয়ার্দি নৈশভোজের পর আমাকে বলেন। রাত সাড়ে নটা নাগাদ মিঃ এরকুল পোয়ারো নামে এক ভদ্রলোক মিঃ কার্লের সঙ্গে দেখা করতে আসবেন। ভদ্রলোককে একটা চিঠি দেওয়া হয়েছে, একথাও তিনি বলেন। তিনিই যে মিঃ এরকুল পোয়ারো তা জানার জন্য আমাকে চিঠিটা দেখতে বলা হয়েছিল। তারপর আমাকে নির্দেশ দেওয়া ছিল ভদ্রলোককে মিঃ কর্নওয়ার্দির ঘরে নিয়ে যাওয়ার। এমন কোনো নির্দেশ তোমাকে কি তোমার মনিব দিয়েছিলেন, যে আমাকে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করার আগে তোমাকে দরজায় নক করতে হবে? খানসামা একটু হতভম্ব হয়ে গেল পোয়ারোর প্রশ্নটা শুনে। একটু করুণ বিপন্নভাব ফুটে উঠল তার চোখে মুখে। বলল সে, অবশ্যই সেটা ছিল মিঃ কার্লের স্থায়ী নির্দেশ। সব সময়েই নক করা আমাদের কাছে একটা প্রথা হয়ে গিয়েছিল। কোনো অপরিচিত লোককে সেখানে নিয়ে যাবার আগে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের লোকই বেশি আসত, দেখা করতে। আসতেন তারা ব্যবসার বিষয়ে।
আমাকে অবাক করেছিল সেটাই, পোয়ারো বলল, আর কিছু নির্দেশ তিনি দিয়েছিলেন আমার সম্পর্কে? সে বলল, না স্যার। আমাকে কেবল এই কটি নির্দেশ দিয়ে যান কর্নওয়ার্দি বেরিয়ে যাবার সময়। তখন কটা বেজেছিল পোয়ারো জানতে চাইলেন, স্যার, নটা বাজতে দশ মিনিট বাকী ছিলো। উত্তর দিল খানসামা।
তুমি কোথায় ছিলে আমি আসার আগে? কিচেনে ছিলাম স্যার খানসামা বলল।
অবাক হয়ে পোয়ারো বলল কিচেনে? আর একটু আগে তুমি বলেছিলে, তোমার বাড়ির সবার নৈশভোজ সারা হয়ে গিয়েছিল আগেই। তুমি তাহলে কিচেনে কি কাজ করছিলে?
তখনো আমার নৈশভোজ সারা হয়নি খানসামাটি বলল। দোতলায়, না একতলায় তোমাদের কিচেনটা? পোয়ারো জানতে চাইল। দোতলায় স্যার, খানসামা বলল। কত দূরে সেটা মিঃ কালের ঘর থেকে? জানতে চাইল পোয়ারো। সে উত্তর দিল, দুখানা ঘরের পাশেই।
তাহলে ব্যাপারটা হচ্ছে, কর্নওয়ার্দি চলে যাবার পর দোতলায় তোমার মনিব কালের ঘরের সব থেকে কাছে ছিলে একমাত্র তুমিই। পোয়ারো মন্তব্য করল।
খানসামাটি বলল, হ্যাঁ স্যার।
তাহলে তুমি আজও কি কিচেনে ছিলে, তোমার মনিবের মৃত্যুর সময়?
হা স্যার, কিচেনেই ছিলাম আমি, সে জবাব দিল।
কোথায় ছিলেন তখন মিঃ কর্নওয়ার্দি?
পোয়ারো জানতে চাইলো।
খানসামা হোমস জোরে মাথা দুলিয়ে বলল তা, তো জানি না স্যার। আসলে আমি তখন ঠিক করে নজর দিইনি।
তুমি কি জানো তোমার ওপর নজর রাখা হয়েছিল? কি করে আমি জানব স্যার, আমার তো সেটা জানার কথা নয়।
তুমি কি করতে জানতে পারলে?
অবশ্যই একটু সতর্ক থাকতাম খানসামা বলল।
পোয়ারো জানতে চাইল কি ভাবে সতর্ক হতে?
তাহলে আমিও পাল্টে নজর রাখাতম।
হোমস চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে নিচুগলায় বলল, সব সময় সব কথা সবার সামনে বলা যায় না স্যার, কেউ শুনে ফেলতে পারে। এখানে দেওয়ালেরও কান আছে।
তোমার আশঙ্কার কথা নিরাপদ কোনো জায়গায় পরে না হয় শুনব, সেটাই ভালো হবে, পোয়ারো বলল। তোমার সঙ্গে কোথায় দেখা হতে পার?
বলল হোমস, আমার কিচেনে কিচেন খালি হয়ে যাবে একটু পরেই। আমার অনেক কথা বলার আছে স্যার। আপনার কাছে বলে হালকা হতে চাই। আমি কয়েকটি কথা বলতে চাই