স্রিয়মাণ মুখে বলে উঠলো পোয়ারো, হায়। ভগবান। কি অসম্ভব বোকা আমি?
চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে জোয়ানো কার্লে ঘুরে দাঁড়াল দরজার দিকে। তারপর পোয়ারোর দিকে ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, আর কিছু জানতে চান আপনি?
আছে আরো ছোট দুটি প্রশ্ন, এই লোহার চিমটেটা, টেবিলের ওপর থেকে তুলে নিল এবং জিজ্ঞাসা করল পোয়ারো এটা কি টেবিলের ওপর সব সময়ই পড়ে থাকে?
জোয়ানো বলল, বাবা ওটা ব্যবহার করতেন কোনো জিনিসপত্র তোলার জন্য। ঘর নোংরা থাকা কোনোমতেই তিনি বরদাস্ত করতে পারতেন না। পোয়ারো বলল, আর একটা প্রশ্ন? স্বাভাবিক ছিল কি আপনার বাবার দৃষ্টিশক্তি?
পোয়ারোর দিকে নিশ্চল ভাবে তাকালো জোয়ানো। বলল সে, ঠিক কথা, না, তিনি চশমা ছাড়া একেবারেই কিছু দেখতে পেতেন না। সব কিছুই তার অস্পষ্ট মনে হত। তার দৃষ্টিশক্তি ছেলেবেলা থেকেই খারাপ ছিলো।
চশমা পরে তার কি দেখার অসুবিধা হতো পোয়ারো জানতে চাইল।
না, চশমা পরে দেখতে তার কোনো অসুবিধা হতো না, জানাল জোয়ানো।
খবরের কাগজের ছোট লেখা তিনি কি পড়তে পারতেন।
হ্যাঁ তা পারতেন অবশ্যই জোয়ানো উত্তর দিল। আচ্ছা ম্যাডাম এ পর্যন্ত থাক আমার আর কিছু জানার নেই। আপনি এখন যেতে পারেন। তবে আশাকরি প্রয়োজন হলে সহযোগীতা করবেন। পোয়ারো বলল তা অবশ্যই করবো। এই কথা বলে জোয়ানো আর দাঁড়াল না, মন্থর পায়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে।
ধ্যানমগ্ন যোগীর মতো পোয়ারো অনেকক্ষণ বসে রইল জোয়ানো যে পথ দিয়ে চলে গেল সে দিকে তাকিয়ে। নানা চিন্তা খেলা করছে তখন তার মাথায়। একটা চিন্তার সমাধান হতে না হতেই আরেকটা চিন্তা হাজির হয় আবার সেই চিন্তার জট খুলতেই, নতুন আর একটা চিন্তা। এমন সেই চিন্তা, যেটার সঙ্গে কোনো মিল নেই আগের চিন্তাগুলোের। এই লোকের সঙ্গে কোনো সামঞ্জস্য নেই। তবে পোয়ারো মনোযোগ দিলে বুঝতে পারত। একত্রিত করা যায় সব চিন্তাগুলিকে, সেগুলো দেখা যাবে একই সূত্রে বাঁধা। প্রতিটি চিন্তাই যেন এ ওর পরিপূরক। সবগুলোই অসমাপ্ত বলে মনে হবে একটি পদ বাদ দিলে। সেজন্য সে কোনো চিন্তাই নস্যাৎ করতে পারলো না। প্রতিটি চিন্তা এবং তার সমাধানের উপায়। অর্থাৎ লুকিয়ে রাখল সে তার স্নায়ুর নাগপাশে। তখনই সে তার স্মৃতির ভাণ্ডারে হানা দেবে যখনই তার ইচ্ছা হবে। বা প্রয়োজন মনে করবে। এবং সমাধানের সূত্র খুঁজে বার করবে। একটা সম্ভাবনার কথা মনে এল তার, সমাধানের সূত্রের কথা মনে করতেই। সে তার মাথার চুল ছিঁড়তে শুরু করল নিজের ওপর সে দোষারোপ করতে লাগল। সে বিড়বিড় করে নিজের মনেই বলতে লাগল, ওঃ কি নির্বোধ আমি। প্রকৃতপক্ষে আমি যেন জম্মের বোকা। একবারের জন্যও আমার সেদিকে দৃষ্টি পড়েনি অথচ সারাক্ষণ জিনিসটা আমার চোখের সামনে পড়ে রয়েছে। আমার তো বোঝা উচিত এত সামনেই পড়ে রয়েছে। তাদের কাছেই হয়তো নজরে আসেনি এত কাছে পড়ে আছে বলেই। আর একবার জানলা দিয়ে মাথা গলিয়ে পোয়ারো নীচের দিকে তাকালেন। কাছারি বিল্ডিং আর নর্থওয়ে হাউস এর মাঝ বরাবর একটি সরু প্যাসেজ এতক্ষণে তার নজরে পড়ল কালো একটা বস্তু প্যাসেজের মাঝখানে।
তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গীতে মাথা নাড়ালো পোয়ারো, একটা পরিপূর্ণ তৃপ্তির হাসি তার চোখে মুখে। সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে সে এবার নীচে নেমে এলো।
লাইব্রেরী ঘরে অন্য সকলে অপেক্ষা করছিল। পোয়ারো বেনেডিক্ট কার্লের সহকারী হুগো কর্নওয়ার্দিকে বলল : মিঃ কর্নওয়ার্দি, বিস্তারিতভাবে একটু বলুন আমাকে স্মরণ করে, যে। কখন, কি অবস্থায় মিঃ কার্লে আমার কাছে চিঠি পাঠাবার নির্দেশ দেন। কোনো ঘটনাই যেন দয়া করে বাদ দেবেন না। আচ্ছা চিঠির বয়ানটাও কি তিনি যথাযথভাবে আপনাকে বলে দিয়েছিলেন?
বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তিনি আমায় এই চিঠিটা টাইপ করার নির্দেশ দেন, আমার যতদূর মনে পড়ছে, বললেন মিঃ কর্নওয়ার্দি।
চিঠিটা তাকে দেওয়ার ব্যাপারে কি বিশেষ কোনো নির্দেশ ছিল? পোয়ারো জিজ্ঞাসা করলেন। আমাকে তিনি নিজে হাতে চিঠিটা তাকে দিতে বলেছিলেন।
তার নির্দেশ আপনিও ঠিক ভাবে পালন করেন?
হু বললেন কর্নওয়ার্দি।
খানসামাকে কি কোনোরকম ব্যক্তিগত নির্দেশ দেওয়া ছিল আমাকে তার কাছে নিয়ে আসার ব্যাপারে? কর্ণওয়ার্দি বললেন, হ্যাঁ, আমায় তিনি বলেছিলেন যেন খানসামা হোমসকে ডেকে দিই। এক ভদ্রলোক তার সঙ্গে দেখা করতে আসবেন আগামীকাল সন্ধ্যা সাড়ে নটায়, তিনি হোমসূকে তার নাম জিজ্ঞাসা করতে নির্দেশ দেন, আর যেন সে দেখতে চায় সেই চিঠিটা যেটা ওই ভদ্রলোককে পাঠানো হয়েছে।
খুবই আশ্চর্য ব্যাপার, এ ধরনের নির্দেশে সাবধানতার মন্ত্রটা অশোভন ভাবে বেশি আপনার কি মনে হয়। মিঃ কর্নওয়ার্দি?
কর্নওয়ার্দি গুরুত্ব না দিয়ে কাঁধ ঝাঁকালেন সতর্কতার সঙ্গে বলল সে, মিঃ কার্লে একটু অস্বাভাবিক ধরনের মানুষ।
মিঃ কালের আর কোনো নির্দেশ ছিলো, জানতে চাইলো পোয়ারো।
কর্নওয়ার্দি বললেন, তিনি আমাকে ছুটি নিতে বলেছিলেন ওই সন্ধে বেলাটার জন্য।
আপনিও সেই নির্দেশটা নিশ্চয়ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন?
কর্নওয়ার্দি বলল, সেদিন সন্ধ্যায় আমি সিনেমা দেখতে চলে যাই, নৈশভোজের পরই। কখন আপনি ফিরে এলেন, জানতে চাইলো পোয়ারো।