তবেই মানে জিজ্ঞাসা করল পোয়ারো।
মৃদু হাসলো জোয়ানো এই কথা বলে, আমি অপরূপা বুঝতেই পারছেন।
কিন্তু আমার ধারণা, আমার প্রশ্নগুলো খুব কঠিন এবং আপনার অজানা নয়। আর তাছাড়া অজানা প্রশ্ন আপনাকে করবই বা কেন? জোয়ানোর চোখে চোখ রেখে বলল পোয়ারো। আমার কাজ নয় কাউকে ঠকানো বা বেকায়দায় ফেলা। সত্যকে সামনে আনা আমার কাজ।
জোয়ানো চোখে গভীর সংশয় নিয়ে প্রশ্ন করল। আপনি কি সত্যই এই কেসের সত্যকে উদ্ঘাটন করতে পারবেন?
পারব না কেন, তবে সব কিছু আপনার উপর নির্ভর করছে। অর্থাৎ আপনি কি বলেন তার ওপর।
জোয়ানো বলল, তাই নাকি?
এবার কোনো ভূমিকা না করেই পোয়ারো জিজ্ঞাসা করল, আপনি কি সে খবর জানতেন, যে আপনার বাবা তার টেবিলের ড্রয়ারে সবসময় একটা গুলি ভরা পিস্তল রেখে দেন?
ঘাড় নাড়লো জোয়ানো, না আমার জানা ছিল না বলল সে, এবার আপনার পরবর্তী প্রশ্ন বলুন।
হ্যাঁ অবশ্যই বলব, বলল পোয়ারো। এবার খুব মন দিয়ে আমার প্রশ্নটা শুনবেন তারপর বেশ চিন্তাভাবনা করে উত্তর দেবেন।
বেশ বলুন কি জানতে চান? জোয়ানো বলল।
আপনি এবং আপনার মা কোথায় ছিলেন, যখন আপনার বাবার মৃত্যু হয় পোয়ারো বলল, শুনেছি উনি আপনার বিমাতা, ঠিক বলছি তো?
উনি আমার সৎ মাই হন, লুইসি কার্লে ওর নাম। আমার বাবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী বলল জোয়ানো। আপনারা দুজনে কোথায় ছিলেন, গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাত্রে?
কি যেন চিন্তা করল জোয়ানো কিছুক্ষণ ভুরু কুঁচকে। বলল বৃহস্পতিবার…একটু চিন্তা করতে দিন, অপেক্ষা করুন, মনে করতে চেষ্টা করল সে গত বৃহস্পতিবার আমরা যেন কোথায় ছিলাম? চিন্তা করার পর জোয়ানো বলল, হ্যাঁ এবার মনে করতে পেরেছি। আমরা থিয়েটারে গিয়েছিলাম প্রত্যেকে। দ্য লিটল ডগ লাফড নাটকটা দেখতে।
আপনার বাবা কি আপনাদের সঙ্গে যাবার প্রস্তাব করেছিলেন?
না, না কখনই তিনি নাটক, থিয়েটার দেখতে যেতেন না।
তাহলে সন্ধ্যে বেলাটা তিনি কিভাবে কাটাতেন প্রশ্ন করল পোয়ারো?
তিনি তার কাজ নিয়ে থাকতেন বলল জোয়ানো, পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তিনি তার ঘরে।
কোথাও তিনি যেতেন না কখনও?
না…উত্তর দিল জোয়ানো।
তিনি সামাজিক মেলামেশা করতেন না? পোয়ারো প্রশ্ন করল, জোয়ানো এবার সোজাসুজি তাকান পোয়ারোর দিকে। বেশ কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে নিরীক্ষণ করল সে। মনে মনে তখন সে ভাবছিল পারিবারিক কথা এই ভদ্রলোককে বলা সম্ভব কি না, বা বলা উচিত কিনা। সে পূর্বেই শুনেছে এরকুল পোয়ারোর নাম। মনের কথা ওকে বলা যায়? ওঁকে বিশ্বাস করা যায়। অন্যের কাছে নিশ্চয়ই তিনি তাদের ঘরোয়া কথা প্রকাশ করবেন না। তাছাড়া জোয়ানোর মনে আর একটা কথাও জাগল। চিকিৎসক এর কাছে তেমন রোগীর রোগ সম্পর্কে কিছু গোপন করা উচিত নয়। কারণ রোগ নির্ণয় করা তাহলে সহজ হবে। যেমনি খুনের কেসে সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করে দিতে হবে। মিস কার্লে এইসব ভাবার পর আবার বলল :
মঁসিয়ে পোয়ারো, আমি আপানকে সমস্ত সত্য কথাই বলব। আমার বাবার ব্যক্তিত্ব ছিল কাঠিন্যতা পূর্ণ। আর কেউ তাকে হয়তো এজন্য সহ্য করতে পারতো না। তার অতি কাছের লোকেরাও তাকে কিছুতেই পছন্দ করত না।
পোয়ারো মন্তব্য করল, সত্যি ম্যাডাম, খুব গুছিয়ে আপনি বলতে পারেন মার কথাটা। আমি আপনার মূল্যবান সময় সংক্ষেপে করে দিচ্ছি মিঃ পোয়ারো। এছাড়া আমার অন্য উদ্দেশ্য নেই। আবার সে বলল, আপনার প্রশ্নের অন্তর্নিহিত অর্থটা যে কী, তা আমি ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। আমার সত্যার কথা যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে প্রথমেই বলি, তিনি আমার বাবাকে বিত্তবান জেনে সেই লোভেই বিয়ে করেছিলেন। এখানে আমিও কেন মুখ বুজে পড়ে আছি জানেন, আমি স্পষ্ট করেও বলছি, সেটাও আমার বাবার অর্থ ও সম্পত্তির লোভে। কারণ কোথায় চলে গিয়ে যে একা একা শান্তিতে থাকব তার উপায় নেই, কারণ আমার হাত একেবারে খালি। তার ওপর আমি ভালোবাসি একটি ছেলেকে, খুবই গরীব সে। আমার বাবা জানতেন আমাদের প্রেমের ব্যাপারটা, তিনি হয়তো মনে মনে চাইতেন যে আমি তাকে বিয়ে করি। আর যাহোক আমি তো বাবার সব বিষয় সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবো-কাজেই ব্যাপারটা খুব সহজ।
হা সাথে সাথে আপনার বাবার সৌভাগ্য আপনাতে বর্তাচ্ছে। ঠিক কথাই বলেছেন মিঃ পোয়ারো। তবে সিকি মিলিয়ন রেখে গেছেন সৎ মায়ের জন্য। এছাড়া আরও কিছু শর্ত ছিল তার উইল-এ। তবে বাদ বাকী সব আমার। মেয়েটি হঠাৎ হেসে উঠল তাহলে আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, বাবার মৃত্যু কামনা করা আমার পক্ষে খুবই যুক্তি যুক্ত তাই না?
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে পোয়ারো বলল। হ্যাঁ ম্যাডাম? আপনি দেখছি আপনার বাবার বিষয় সম্পত্তির সঙ্গে সঙ্গে তার বুদ্ধিরও উত্তরাধিকারিণী হয়েছেন।
মেয়েটি চিন্তিত মুখে বলল, আমার বাবা যে চতুর ছিলেন একথা স্বীকার করি এবং চিনি প্রখর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। লোকের কাছে তার পরিচয় এরকমই ছিলো। তার অন্যকে নিয়ন্ত্রিত করবার একটা ক্ষমতা ছিল অথচ কিই বা লাভ হলো? শুধুই তিক্ততা সবই ব্যর্থ হলো–বড়ই প্রকট ছিল তার মধ্যে সাধারণ মানবিক গুণাবলীর স্বভাব।