এরকুল পোয়ারো এবার ফিরে এলো বাস্তব পরিস্থিতিতে কথাটা মনে আসতেই।
সে বলল ডঃ স্টীলিং ক্লীটের দিকে তাকিয়ে, এইভাবেই কি জানালাটা ভোলা ছিল? ডঃ মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো। ওই পথে তো কেউ ভেতরে ঢুকতে পারবে না। বলল ডঃ স্টীলিং ক্লীট। আচ্ছা তাই নাকি? নিজেই যাচাই করে নিতে চায় পোয়ারো তার কথাটা। পরের কথা শুনে তার বিশ্বাস হয় না, এটাই তার স্বভাব। সব কিছুই সে নিজে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যবেক্ষণ করে নেবে, তার জন্য যদি তাকে অপ্রিয় হতেও হয় সে গ্রাহ্য করে না।
সেজন্য সে মাথা ঝোকালো জানালা দিয়ে, কার্ণিশ বা ওই জাতীয় কোনো কিছুর বালাই নেই জানালার, নীচে। সরাসরি নীচের দিকে নেমে গেছে সিমেন্ট বাঁধানো মসৃণ দেওয়াল। এমন পাইপ যার সাহায্যে ওপরে উঠে আসা যায়, জানালার সংলগ্ন বা কাছাকাছি তেমন পাইপ তার নজরে পড়ল না। পোয়ারো দেখল মানুষ তো দূরের কথা একটা বেড়ালও ওই মসৃণ দেওয়াল বেয়ে উঠতে পারবে না। কারখানার নিরেট দেওয়াল জানালার ঠিক বিপরীত দিকে, সমগ্র দৃষ্টিপথ রুদ্ধ করে খাড়া ওপরের দিকে উঠে গেছে। কোনো ফাঁক ফোকর নেই তার মধ্যে।
তৎক্ষণাৎ শোয়ারো তার পর্যবেক্ষণ শেষ করে ফিরে তাকাল, তখনই বিস্ময়ের সুর ধ্বনিত হল ডঃ স্টীলিং ক্লীট এর কণ্ঠ থেকে এটাই বিশেষ আশ্চর্যের ব্যাপার যে মিঃ কার্লের মত একজন ক্রোড়পতি নিজের ব্যবহারের জন্য এরকম একটা অফিস ঘর পছন্দ করতে পারেন, তাই না মঁসিয়ে পোয়ারো। জেলের কম্পাউন্ড থেকে যেন দূরের আকাশ দেখছি, দেখুন আপনি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালে তাই মনে হয় না?
সারাদিন পোয়ারো তার কথা, হ্যাঁ বাস্তবিক সেটাই। তারপর সে তাকাল হাত কয়েক দূরে জানালার বাইরে নীরেট ইটের দেওয়ালটার দিকে।
এই দেওয়ালটার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা আমার মনে হচ্ছে, ডঃ সীলিং ক্লীট।
দুচোখে একরাশ কৌতূহল নিয়ে নিমেষে পোয়ারোর দিকে ফিরে তাকাল ডঃ স্টীলিং ক্লীট। আপনি কি বলতে চাইছেন, এটা মনের উপরে প্রভাব পড়ার কথা, বললেন ডঃ স্টীলিং ক্লীট। পোয়ারো তৎক্ষণাৎ উত্তরটা দিল না। ধীরে ধীরে অলস ভঙ্গীতে এগিয়ে গেলো সে টেবিলটার দিকে। একটা লম্বা লোহার চিমটে তুলে নিল সে টেবিলের উপর থেকে। সেই চিমটের সাহায্যে কার্পেটের উপর থেকে একটি পোড়া দেশলাই এর কাঠি অতি সতর্কতার সঙ্গে তুলে নিলো সে, তারপর সেটা বাজে কাগজের বাক্সের মধ্যে ফেলে দিল। ডঃ স্টীলিং ক্লীট এর পছন্দ হলো না পোয়ারোর কাজের পদ্ধতি। ঈষৎ বিরক্তির ভাব ফুটে উঠল তার কথায়-কখন সে আপনার এই খুঁটিনাটি কাজ শেষ হবে। কোনো গুরুত্ব দিল না পোয়ারো তার এই অসহিষ্ণুতায়। পোয়ারো এমন ভাব দেখালো যেন তার কথাটা শুনতে পায়নি যে এবং আপন মনে অস্ফুটভাবে বলে উঠল সে, খুবই অভূত পূর্ব পরিকল্পনাটি এটা মেনে নিতেই হবে, হাতে ধরা চিমটেটা রেখে দিল টেবিলের উপর তারপর সে তাকাল স্টীলিং ক্লীটের দিকে। হাজার হাজার প্রশ্ন জমা আছে এখন পোয়ারোর চোখে।
ডঃ স্টীলিং ক্লীট পোয়ারোর মনোভাব বুঝতে পেরে জিজ্ঞাসা করল, আপনার মনে কোনো প্রশ্ন জেগেছে এটা আমার মনে হচ্ছে। পোয়ারো উত্তর দিল, একটা নয় হাজারটা প্রশ্ন। তবে আমার এই মুহূর্তে একান্ত জানা দরকার যে প্রশ্নটা সেটা হল
বলুন পোয়ারো সেটা কি? ডঃ বললেন।
মিঃ এবং মিসেস কার্লে কোথায় ছিলেন, মিঃ কার্লের মৃত্যুর সময় বলতে পারেন?
স্টীলিং ক্লীট সামান্য সময় মনে করার চেষ্টা করল তারপর বলল নিশ্চয়ই, যেন মনে পড়েছে এমন ভঙ্গী করে সে বলল : নিজের ঘরে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন মিসেস কার্লে, তার ঘরটা এই ঘরের ঠিক উপরে। ছাদের পাশে মিস কার্লের ঘর। সে আর্ট স্কুলের ছাত্রী। একটা স্টুডিও আছে তার ঘরের পাশেই। জোয়ানো তখন ব্যস্ত ছিলেন ছবি আঁকায় তার স্টুডিও ঘরে।
তবে, তাই নাকি? নীরব থাকল পোয়ারো দু-এক মিনিট, অলস ভঙ্গিমায় টেবিলের ওপর আঙ্গুল দিয়ে বিলি কাটলো, আবার সে মুখ খুলল, তারপর একসময়, মিস কার্লের সঙ্গে আমি একবার নিজে কথা বলতে চাই, তাকে কি দু এক মিনিটের জন্য এ ঘরে ডেকে আনা সম্ভব হবে আপনার কি মনে হয়?
আপনি যেটা ভালো বুঝবেন, উত্তর দিলেন ডঃ কৌতূহলের চিহ্ন ফুটে উঠল স্টীলিং ক্লীটের চোখে, তবে আর কথা না বলে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। ভেজানো দরজা ঠেলে মিনিট কয়েক বাদেই ঘরে এসে ঢুকল জোয়ানো কার্লে আমি আপনাকে অসময়ে ডেকে এনে কোনো অসুবিধায় ফেললাম নাতো ম্যাডাম?
না, না, মোটেই না, বলল জোয়ানো কার্লে।
ধন্যবাদ পোয়ারো বলল, মেয়েটির দিকে অল্প সময় তাকিয়ে রইল পোয়ারো। মনে হল অস্বস্তিবোধ করছে জোয়ানো। আর থাকতে না পেরে সে বলে উঠল। মঁসিয়ে পোয়ারো আপনি কেন আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন?
হ্যাঁ তাই তো, যেন সম্বিত ফিরে পেলো পোয়ারো বলল, মাদমোয়াজেল, আপনাকে আমি দু-একটা প্রশ্ন করতে চাই, আপনি কি তাতে বিরক্ত হবেন? সবিনয়ে সে বলল।
শান্ত শীতল ছায়া কাঁপতে লাগল জোয়ানোর চোখের তারায়। অবশ্যই না, বিরক্ত হবো কেন? ঠান্ডা গলায় বিনীত বাচন ভঙ্গীতে সে জানাল, আপনি আমাকে যে কোনো প্রশ্ন করতে পারেন প্রয়োজন মনে করলে। আর আমি সেজন্য একটুও বিরক্ত হবে না। আপনার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেব আমি বরং খুশী মনেই। অবশ্য যদি উত্তরগুলো আমার জানা থাকে তবেই