রিভলবারটা নিশ্চয় তারই ছিল?
পোয়ারোর প্রশ্নের জবাব দিল এবার ইনসপেক্টর বার্নেট।
ডেস্কের নীচের ড্রয়ারে থাকত সবসময় তার রিভলবারটা। দৃশ্যটা হুবহু সেইরকম। স্বপ্নে তিনি যে রকম দেখতেন বলে আপনাকে বর্ণনা দিয়েছেন। বেশ জোরের সঙ্গেই মিসেস কার্লে স্বীকার করেছেন যে জিনিসটা তারই। এছাড়া একটাই মাত্র দরজা, তার ঘরে প্রবেশ করার। প্রেসের দুজন প্রতিনিধি অপেক্ষা করছিলেন।
ভেতর থেকে বন্ধ দরজা সংলগ্ন প্রশস্ত বারান্দায়। তাদের সামনে দিয়েই যেতে হবে যদি কাউকে ঘরের ভেতর প্রকোপ করতে হয়। মিঃ কর্নওয়ার্দি চিঠির তাড়া নিয়ে ঘরে ঢোকার আগে অন্য কেউ যে ঘরে ঢোকেনি সে বিষয়ে তারা নিঃসন্দেহ। অতএব তিনি আত্মহত্যা করেছেন, এটাই ধরে নিতে হবে। ইনসপেক্টর বানেট সামান্য একটু হাসল মনে হল চেষ্টাকৃত হাসি। এই মুহূর্তে যদি কেউ না আসে, অথবা অন্য কাউকে হাসাতে না পারে তবে জোর করে হাসতে হয়। তার বুকটা ফেটে যায় একটা অব্যক্ত যন্ত্রণায়। কিন্তু এখন সে কিইবা করতে পারে।
এতগুলো সাক্ষী যেখানে, দেখুন তাহলে সন্দেহের কোনো অবকাশ থাকে না। থাকার কথাও নয়। বার্নেট বলল। পোয়ারো তার কথার মাঝে বাধা দিয়ে বলল, এতগুলো সাক্ষী মানে?
মিঃ অ্যাডাম ও মিঃ ষ্টার্ডাট, সর্বোপরি তার ব্যক্তিগত সেক্রেটারী মিঃ কর্নওয়ার্দি অর্থাৎ প্রেসের দুজন প্রতিনিধি এবং কর্নওয়ার্দি এদের সাক্ষ্যই কি প্রমাণ করে না যে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
পোয়ারো বলল, সত্যি মিথ্যে যাচাই না করে আপনি কেউ কিছু বললেই তা মেনে নেবেন?
মঁসিয়ে পোয়ারো, আমি এর প্রতিবাদ করছি, সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল কর্ন ওয়ার্দি। যখন আমার কথায় আপনার আস্থা নেই, তখন আপনাদের আলোচনায় মাঝে আমার না থাকাই ভালো বলে আমার মনে হয়। তদন্তের কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে আমি থাকলে সেজন্য
মিঃ কর্নওয়ার্দি সেটা আপনার দেখার কথা নয় আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটল কিনা। আপনার এখানে উপস্থিতি যতক্ষণ আমাদের কাম্য বলে মনে হবে ততক্ষণই আপনাকে থাকতে বলব, তার এক সেকেন্ড বেশি বা কম সময় আপনাকে আমরা ধরে রাখতে যাবো না। সুতরাং আপনি বসতে পারেন পোয়ারো জানালেন।
হুগো কর্নওয়ার্দি ফিরে আবার তার চেয়ারে বসে পড়ল। তবে মুখটা তার এখন বেশি গম্ভীর দেখাচ্ছিল আগের থেকে। কিছুটা সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকাল মিস জোয়ানো কার্লে তার দিকে। তাদের যেন একপলকে চোখে কি কথা হয়ে গেল।
তরুণ বয়স্ক, সুপুরুষ দেখতে, হুগো কর্নওয়ার্দি। সেই কারণে একটু দুর্বলতা থাকতেই পারে জোয়ানোর মতো সুন্দরী যুবতীর। হয়তো এটা কোনো ব্যাপার নয়। আপাতত ওদের দুজনার প্রসঙ্গ থাক। পরে ভাবব পরের কথা, ভাবল এরকুল পোয়ারো। এবার ফিরে তাকাল পোয়ারো ইনসপেক্টর বার্নের্ট এর দিকে, এবং বলল, আচ্ছা আপনি যেন কি বলছিলেন মিষ্টার বার্নেট? এতগুলো সাক্ষী যেখানে…বলতে গিয়ে থেমে গেলেন আপনার হয়তো শেষ করা হয়নি কথাটা। এবার তাহলে বলুন।
যা বলছিলাম আমি–তবে একটা মাত্র কারণেই
বললেন মিঃ বার্নেট।
সেই কারণটা কি জানতে পারি? বললেন পোয়ারো ইনসপেক্টর বার্নেট এই কথা বলে হাসল–আপনাকে লেখা সেই চিঠিটা। মঁসিয়ে পোয়ারো, কেমন যেন গোলমাল পাকিয়ে ফেলছে সেই চিঠিটা আমার হিসাব ভুল করে দিচ্ছে।
হাসল পোয়ারোও। সে বলল, তাই নাকি?
এরকুল পোয়ারো যেখানেই থাকে, সেখানেই একটা খুনের সন্দেহ দেখা দেয় তাই না মিঃ বার্নেট?
এটাই প্রমাণিত হচ্ছে।
ইনসপেক্টর শুকনো গলায় বলল, কথাটা খুবই সত্যি, শুরু করল আবার–যাই হোক তাকে সব কিছু বুঝিয়ে দেবার পর
পোয়ারো বলে উঠল তার কথার মাঝখানে বাধা দিয়ে এক মিনিট দাঁড়ান। তারপর ফিরে তাকাল মিসেস কার্লের দিকে, এবং প্রশ্ন করল, আচ্ছা মিসেস কার্লে আপনার স্বামীকে কি কেউ কখনো হিপনোটাইজ করেছিল বলে মনে হয়? মিসেস কার্লে সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে বললেন না, কখনওই না। আমার স্বামী সেরকম বোকা মানুষ ছিলেন না। বেশ ভালো কথা, পোয়ারো বলল, এবার আমার আর একটি প্রশ্ন হল, হিপনোটিজম সম্বন্ধে কি মিঃ কার্লের কোনো পড়াশুনার অভ্যাস ছিলো? অথবা কোনো আগ্রহ ছিল তার এই বিষয়ে?
মাথা নেড়ে না জানালেন মিসেস্ কালে এবং বললেন, তা হলেও আমার এটা জানা নেই। ভদ্রমহিলার সযত্ন রক্ষিত আত্ম সংযমের সুদৃঢ় বাঁধটা প্রবল ভাবাবেগের বন্যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় গুঁড়িয়ে পড়ল অকস্মাৎ। অশ্রুর বন্যা নামল তার দুচোখে, তিনি বলতে শুরু করলেন কান্নাভেজা, ভাঙ্গা ভাঙ্গা করুণ গলায়, এই শোচনীয় পরিণতির জন্য দায়ী ওই অভিশপ্ত স্বপ্নটাই। যার ওপর অশুভ শক্তির প্রভাব চেপে বসে একমাত্র সেই বোঝে কি দুনিৰ্বার এই শক্তি। কি কঠিন যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল ওঁকে আপনারাই ভেবে দেখুন। প্রতিটি রাত ক্ষুধিত নেকড়ের মতো সেই ভয়াল বিধুর দুঃস্বপ্নটা ওর ঘুমের গুহায় হানা দিয়ে গেছে। ওর মানসিক অবস্থা কি হতে পারে এই পরিস্থিতিতে। একজন মানুষ, হয়তো তার অসুস্থতার জন্য রাতের পর রাত তাকে জেগে থাকতে হয়, তাহলে তার কি পরিণতি হতে পারে?
আমরা প্রায়ই এরকম ঘটনা শুনতে পাই। ক্রমশঃ রাত্রি জাগরণের ফলে পাগল হয়ে গেছে। বেচারা। মিঃ পোয়ারো সেজন্য আমার এক্ষেত্রে কি মনে হয় জানেন?