পোয়ারো মেয়েটিকে জানাল, সে দুজন লোককে সন্দেহ করছে তবে তারা বহিরাগত।
পোয়ারোর প্রশংসায় খুশি হয়েছিল মেয়েটি। এবারে সানন্দে ধন্যবাদ জানিয়ে ছুটে চলে গেল।
মার্থার চলে যাওয়াটাও ছিল মাধুর্যময়। আমি তার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে রইলাম। চমক ভাঙ্গল পোয়ারোর ডাকে।
আমি জানি, হেস্টিংস, তুমি সৌন্দর্যের পূজারী। কিন্তু বন্ধু ভুল করে যেন মার্থা ডওব্রেয়ুইলকে তোমার হৃদয় দিয়ে বসো না। ও মেয়ে তোমার জন্য নয়।
–এমন নিখুঁত সুন্দর মেয়ে
হেসে উঠলো পোয়ারো। উল্লাসের সঙ্গে বলতে লাগল, সুন্দর মুখ দেখলেই পুরুষের মাথা ঘুরে যায়। কিন্তু এমন অনেক ভয়ঙ্কর অপরাধীদের আমি জানি যাদের মুখ দেখতে ছিল দেবদূতের মতো।
–তাই বলে এমন নিষ্পাপ একটি মেয়েকেও–তুমি সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখতে পার না।
-ওকে সন্দেহ করি এমন কথা বলিনি, বলল পোয়ারো, কিন্তু তার কেস সম্পর্কে এমন কৌতূহল খুবই অস্বাভাবিক, তাই না?
-মায়ের জন্য মেয়ের দুশ্চিন্তা ছাড়া আর কি।
–হ্যাঁ, মা, চিন্তিতভাবে বলল পোয়ারো, কিন্তু বন্ধু, এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না, কিন্তু ওই মুখটা মনে হয় পরিচিত–কোথায় দেখেছি। তাই বলছি, হৃদয়ের দুর্বলতা সংযত কর। এটা বন্ধু হিসেবে তোমাকে আমার পরামর্শ।
–মেয়েটির মায়ের মুখ তোমার চেনা বলছ? আমি থমকে গেলাম পোয়ারোর কথা শুনে।
–অনেকদিন আগে যখন বেলজিয়াম পুলিসে কাজ করতাম-হ্যাঁ-একটা কেসের ব্যাপারে আমার মনে হয় ওই মুখের ছবি আমি দেখেছিলাম। একটা খুনের কেস
.
০৫.
পরদিন সকালে ভিলা জেনেভিয়েভে উপস্থিত হলাম আমরা। পরিচারিকা লিওনি ওপরতলা থেকে নেমে আসছিল।
পোয়ারো তার কাছে মাদাম রেনাল্ডের স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নিল। মেয়েটা যেন ক্ষোভে টগবগ করে ফুটছিল।
ঝাঁঝের সঙ্গে বলে উঠল, যে স্বামী অন্য মেয়েমানুষের জন্য স্ত্রীকে ঠকায় তার জন্য আমি হলে একফেঁটা চোখের জল ফেলতাম না।
একটা দুটো খোঁচা দিতেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, প্যারিস যাবার দিন বাপ ছেলেতে তুমুল ঝগড়া হয়ে গেছে। তবে ঝগড়ার কারণটা সে বলতে পারল না।
খবর নিয়ে জানা গেল খুনের দিন কোনো গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা ম্যাজিস্ট্রেট সেই তদন্তের জন্য গ্যারাজে গেছেন।
পোয়ারো তার জন্য অপেক্ষা করবে জানাল। আমি বললাম, তাহলে ততক্ষণে আমি একবার জিরয়েডের সঙ্গে কথা বলে আসি, দেখি কতদূর এগোলেন তিনি।
পোয়ারো হেসে সম্মতি জানাল।
.
বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের মনে ঘুরতে ঘুরতে গলফ খেলার মাঠের কাছে এলাম। সহসা চোখে পড়ল, পাশে ফুলের বাগানের কাছে একটি যুবতী দাঁড়িয়ে। তাকে চিনতে পেরে সবিস্ময়ে বলে উঠলাম, সিনডেরেলা…তুমি?
-আমিও অবাক হয়েছি তোমাকে দেখে, আমার ট্রেনের বান্ধবীটি বলল, আমি পিসীর বাড়ি এসেছি, কিন্তু তুমি?
–আমার সেই গোয়েন্দা বন্ধুর কথা তোমাকে বলেছিলাম। ভিলা জেনেভিয়েভে একটা খুনের ঘটনা ঘটেছে
বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকালো ও।
-তোমরা তদন্তে এসেছো? ওহ, খুব ভালো, ক্রাইম আমার ভালো লাগে। কিন্তু ওসব নিজের চোখে কখনো দেখিনি। তুমি ঘটনাগুলো আমাকে দেখাও।
–কিন্তু প্রিয়, ঘটনাস্থল বাইরের কাউকে দেখানো নিষেধ।
–তুমি আমার বন্ধু। আমি দেখতে চাইলেও—
তোমার এতো আগ্রহ কেন? কি দেখবে বলতো?
–কোনো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হল, কোথায় খুনটা হল, মৃতদেহ, হাতের ছাপ কিংবা এমনি কিছু আবিষ্কার হয়ে থাকলে–এসবই আমি দেখতে চাই।
-কী সর্বনাশ। খুনের ঘটনার মুখোমুখি হতে তোমার ভয় করবে না?
–আমাকে যদি ঘটনাস্থল দেখার সুযোগ দাও তাহলে নিজেই দেখতে পাবে ভয় পাই কিনা। প্লিজ
বলতে বলতে সিনডেরেলা তার কোমল পেলব হাত আমার হাতের ওপরে রাখল।
কি যেন হয়ে গেল মুহূর্তে। আমার অধিকার বোধ সজাগ হয়ে উঠল। বলে উঠলাম, বেশ দেখি চেষ্টা করে।
সিনডেরেলাকে আমি ঘটনাস্থলে নিয়ে চললাম। যে লোকটি পাহারায় ছিল আমাকে স্যালুট করে সম্মান দেখাল; সঙ্গিনীর ব্যাপারে কোনো আপত্তি তুলল না।
ঘটনার বিবরণ শোনাতে শোনাতে তাকে নিয়ে আমি বাড়ির পেছনে শেডের সামনে উপস্থিত হলাম। এর ভেতরেই মঁসিয়ে রেনাল্ডের মৃতদেহ রাখা আছে।
শেডের চাবিটা ছিল সার্জেন্ট ডি. ভিলা মারকয়ডের কাছে। ভিলার ভেতরে গিয়ে তার কাছে চাবি চেয়ে নিয়ে এলাম।
–ওহ, তুমি আমার বন্ধু, প্রেমিক, চাবি দেখে উল্লসিত হয়ে বলে উঠল সিনডেরেলা, তোমার কথা আমি কোনোদিন ভুলব না।
বললাম, মৃতদেহ না দেখাই ভালো, ওই বীভৎস দৃশ্য সহ্য করতে পারবে না তুমি।
কিছু ভেবো না, আমার ওতে কিছু হবে না। চলো বাড়ি থেকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না তো?
নিঃশব্দে তালা খুলে শেডের ভেতরে ঢুকলাম আমরা। এগিয়ে গিয়ে মৃতদেহের মুখ থেকে চাদরটা সরিয়ে দিলাম।
আঁতকে ওঠার মতো শব্দ করে উঠল মেয়েটি। তাকিয়ে দেখি আতঙ্কে স্থির হয়ে গেছে তার চোখ। মুখ ফ্যাকাসে।
মৃতদেহটা আবার ঢেকে দিলাম।
–পেছন থেকে ছুরি মারা হয়েছিল। বললাম আমি।
–কোনো ছুরি দিয়ে? জানতে চাইল ও।
একটা কাচের ট্রেতে ছুরিটা রাখা ছিল। সেদিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম।
–ওহ!
অস্ফুট একটা শব্দ করে চোখ বন্ধ করল সে। টলতে লাগল দেহটা। আমি তাকে ধরে ফেললাম।
–অনেক হয়েছে। বাইরে চল।
জল। একটু জল নিয়ে এসো প্রিয়