পড়েই যাচ্ছিলেন, পাশ থেকে হাত বাড়িয়ে ধরে ফেলল। মাদাম রেনাল্ডের চোখের পাতা পরীক্ষা করে পোয়ারো নিশ্চিত হল।
–মাদাম রেনাল্ডের কণ্ঠস্বরে কোনো কৃত্রিমতা ছিল না। আমার পাশে সরে এসে বলল পোয়ারো, আমার সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হল হেস্টিংস।
.
এরপর আমরা সকলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলাম। বাগান থেকে দোতলার শোবার ঘরের জানালা চোখে পড়েছিল।
জানালার পাশ দিয়েই উঠে গেছে একটা গাছ। পোয়ারো সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল, ওপরে যাবার সহজতম পথ ওই গাছটা।
গাছটার নিচে অনুসন্ধান করে ফুলের কেয়ারিতে অনেকগুলো পায়ের ছাপ আবিষ্কার হল।
–এগুলো বাগানের মালিরই হওয়া সম্ভব। বললেন কমিশনার রেক্স।
-আমি মনে করি পায়ের ছাপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বলল পোয়ারো, ঠিক আছে এগিয়ে চলুন।
কয়েক গজ এগিয়েই সামনে উন্মুক্ত মাঠ। সেদিকে দেখিয়ে কমিশনার বললেন, গলফ খেলার মাঠ তৈরি হচ্ছে, কাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
এখানকার কিছু কাজের লোকই আজ ভোরে সামনের একটা কবরের মতো গর্ত থেকে মৃতদেহটা আবিষ্কার করেছিল।
ডানপাশে মাটিতে পড়েছিল একটি লোক। আমাদের দেখে উঠে বসল।
-আরে মঁসিয়ে জিরয়েড আপনি এখানে? কমিশনার চিৎকার করে উঠলেন; এদিকে ম্যাজিস্ট্রেট বারবার আপনার খোঁজ নিচ্ছেন–
মঁসিয়ে জিরয়েড, প্যারিসের বিখ্যাত গোয়েন্দা। তাঁর নাম শোনা ছিল। এখন চাক্ষুষ করার সুযোগ হল।
দীর্ঘদেহ যুবা, বয়স তিরিশের বেশি হবে না। সৈনিকের মতো স্বাস্থ্য হাবভাব। চুল গোঁফ পিঙ্গল।
পারস্পরিক অভিবাদন বিনিময়ের পর গোয়েন্দাপ্রবর বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি পায়ের দাগের কথা বলছিলেন কানে এলো, ওগুলো এখানকার শ্রমিকদেরই হওয়া সম্ভব। তারাই মৃতদেহ আবিষ্কার করেছিল।
দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুই গোয়েন্দার মধ্যে পারস্পরিক রেষারেষির আবহাওয়া তৈরি হয়ে যেতে দেখে কিঞ্চিৎ কৌতুক অনুভব করলাম। সাগ্রহে লক্ষ্য করলাম, পোয়ারোর মুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুটে উঠেছে।
–সামনেই ঝোপঝাড়ে তিনজন লোকের পায়ের ছাপ আমার নজরে পড়েছে। দেখলে আপনিও বুঝতে পারবেন, মাঝখানের ছাপগুলো মঁসিয়ে রেনাল্ডের জুতোর। তার দুপাশের পায়ের ছাপগুলো শক্ত মাটিতে পড়েনি অথবা মুছে ফেলাও হতে পারে।
সামনেই একটা কোদাল পড়েছিল। পোয়ারো হাঁটুমুড়ে বসে কোদালের পাশে পড়ে থাকা। একটুকরো সীসের পাইপ সাবধানে তুলে আনল।
প্যারিসের গোয়েন্দা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে তাকালো পোয়ারোর দিকে। আমারও মনে হল নিতান্ত তুচ্ছ ব্যাপার নিয়েই পোয়ারো মাথা ঘামাচ্ছে।
–মঁসিয়ে রেক্স, কবরের গর্তটার চারপাশে মোটা সাদা চুনকামের মত লাইনটা কিসের? বলে উঠল পোয়ারো।
-ওটা গলফ কোর্সের লাইন মঁসিয়ে পোয়ারো।
তাহলে বাঙ্কারের মত গর্তটা এখানে কেন? কবর দেবার উপযুক্ত জায়গা তো এটা নয়।
.
০৪.
মঁসিয়ে জিরয়েড উপস্থিত হয়েছেন, এই খবরটা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাবার জন্য কমিশনার মঁসিয়ে রেক্স চলে গেলে আমি আর পোয়ারো ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে চলতে লাগলাম।
শেয়াল খেদানো কুকুর দেখেছো হেস্টিংস? ওই দেখো, ছোঁক ছোঁক করে ব্লু খুঁজে বেড়াচ্ছে।
কবরের মতো গর্তটার কাছে দাঁড়ানো জিরয়েডকে দেখিয়ে বলল পোয়ারো।
–কিছু একটা অবশ্যই করছেন, তোমাকে ওই তুচ্ছ সীসের টুকরো নিয়েই মনে হয় সন্তুষ্ট থাকতে হবে। এই খুনের সঙ্গে ওটার কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমার মনে হয় না। বললাম আমি।
–জিরয়েড আমল দেয়নি বলে একথা বলছো? ওকে ওর মতোই কাজ করতে দাও। কেসটা সরল মনে হলেও নিতান্তই সরল বলে আমি মনে করতে পারি না। ভেবে দেখেছো, ওই কাচভাঙা হাতঘড়িটা দুঘন্টা ফাস্ট হয়ে ছিল কেন?
তারপর খুনীদের যদি প্রতিশোধ নেওয়াই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে বিছানাতেই ঘুমন্ত অবস্থায় রেনাল্ডকে খুন করল না কেন তারা?
তারা গোপন কিছু খুঁজতে বা জানতে এসেছিল। মনে করিয়ে দিলাম আমি।
–তাহলে সেই গোপন জিনিসটা কি বাড়ির সীমানার মাত্র কয়েক গজের মধ্যেই ছিল? তাহলে তারা তাকে শোওয়ার পোশাক বদলে নিতে বলেছিল কেন? আবার, ওপরে ওঠার সময় তুমি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছো, চাকরবাকরদের কোনো শব্দ শোনা উচিত ছিল। কিন্তু তারা কিছু শুনতে পায়নি কেন? রাতে কি কোনো অতিথি এসেছিল? সামনের দরজা সেই কি ইচ্ছে . করে খোলা রেখেছিল? যদি তাই
কথা বলতে বলতে আমরা বাড়ির সামনে এসে গিয়েছিলাম। কথা বন্ধ করে পোয়ারো হঠাৎ ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ডানদিকের ফুলের কেয়ারি থেকে কিছু পায়ের ছাপ এখন আমি যাচাই করে নিতে চাই।
মঁসিয়ে রেক্স বলেছেন, ওগুলো বাগানের মালির পায়ের ছাপ।
ঠিক এমনি সময়ে দেখা গেল মালি এই দিকেই আসছে। পোয়ারো ডেকে তার সঙ্গে কথা বলল, তার বাগানের কাজের প্রশংসা করল।
বৃদ্ধ অগাস্টিন জানাল, সে গত চব্বিশ বছর এই বাগানে কাজ করছে।
জেরনিয়ামের কিছু নতুন চারা দেখিয়ে পোয়ারো জানাল, একটা কাটিং পেলে সে খুব খুশি হয়।
নিশ্চয় মঁসিয়ে। এখুনি দিচ্ছি।
বৃদ্ধ মালি ফুলের কেয়ারিতে পা ফেলে এগিয়ে গিয়ে একটা চারার ডগা নিয়ে এসে হাসিমুখে পোয়ারোর হাতে তুলে দিল।
বারবার করে ধন্যবাদ জানিয়ে পোয়ারো চমৎকার কাটিংটার প্রশংসা করল। মালি চলে গেল।
এবারে আগের পায়ের ছাপগুলোর সঙ্গে অগাস্টিনের পায়ের ছাপ মেলাতে গিয়ে আমি দেখলাম ফুলের কেয়ারির পুরনো সব ছাপই বুটের।