হ্যাঁ, অবশ্যই। আপনারা আসুন আমার সঙ্গে।
.
ঘটনাস্থলে যাওয়ার পথে মঁসিয়ে রেনাল্ডের পড়ার ঘরে ঢুকল পোয়ারো। পরিপাটি সাজানো একটা ছোটঘর।
ঘরের মাঝখানে একটা গোল টেবিলের দুপাশে দুটো চামড়া মোড়ানো হাতলওয়ালা চেয়ার। কিছু বই ও ম্যাগাজিন রাখা আছে টেবিলে।
ঘরটা একপাক ঘুরে অনুসন্ধানী দৃষ্টি বুলিয়ে নিল।
–এটা কি বস্তু…দেখো তো হেস্টিংস
ফায়ারপ্লেসের সামনে পাতা মাদুরের কোণে পড়ে থাকা কয়েকটুকরো ফ্যাকাসে রঙের কাগজ তুলে নিল।
–একটা চেকের ছেঁড়া অংশ, নিজেই বলল পোয়ারো, দু ইঞ্চি পরিমাণ কাগজের টুকরোতে কালি দিয়ে লেখা রয়েছে ডুবিন।
কমিশনার রেক্স বিস্মিত কণ্ঠে বলে উঠলেন, ডুবিন নামে কোনো ব্যক্তিকে মনে হয় চেকটা দেওয়া হয়েছিল?
–আমারও তাই অনুমান, বলল পোয়ারো, হাতের লেখাটা মঁসিয়ে রেনাল্ডের, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
–অদ্ভুতভাবে জিনিসটা আমার চোখ এড়িয়ে গেছে
বলে উঠলেন কমিশনার।
-ঘর যারা সাফ করেছে তারাও লক্ষ্য করেনি, বলল পোয়ারো, সম্ভবতঃ গতকাল রাতে ডুবিন নামে কোনো লোক নিজের নামে চেকটা মঁসিয়ে রেনাল্ডের কাছ থেকে লিখিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সেটা টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে
গোল টেবিলের ড্রয়ারে সন্ধান করে কমিশনার মঁসিয়ে রেনাল্ডের চেকবই বার করেন। দেখা গেল শেষ চেকের কাউন্টার ফয়েল একেবারে ফাঁকা।
-মাদাম রেনাল্ড হয়তো ডুবিন নামের লোকটির সম্পর্কে কোনো ধারণা দিতে পারবেন; চলুন তার কাছেই যাওয়া যাক। বললেন কমিশনার।
ঘর থেকে বেরিয়ে আসার মুখে একটা লম্বা কালো চুল আঙুলে চেপে তুলে ধরল পোয়ারো।
–চামড়া মোড়ানো চেয়ারের পেছনে পাওয়া গেল মঁসিয়ে রেক্স সম্ভবতঃ এই ঘরেই গতকাল রাতে অতিথির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন গৃহস্বামী।
.
মঁসিয়ে রেনান্ডের মৃতদেহ নিয়ে এসে রাখা হয়েছিল বাড়ির পেছনে দেয়াল ঘেঁষে টিনের শেড দেওয়া একটা ঘরে। মঁসিয়ে রেক্স আমাদের সেখানে নিয়ে এলেন।
দেখা গেল মাঝারি উচ্চতার মানুষ ছিলেন আঁসিয়ে রেনাল্ড। তামাটে গায়ের রঙ। মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট।
পোয়ারো বলল, এ থেকেই বোঝা যায়, পেছন থেকে অতর্কিতে ছোরা মারা হয়েছে। মঁসিয়ে রেক্স, অস্ত্রটা কি ধরনের ছিল?
একটা বড় কাচের ট্রেতে অস্ত্রটা রাখা ছিল। কমিশনার সেটা দেখিয়ে বললেন, পেপার কাটার একটা–ছুরি মতো দেখতে। বাঁট সমেত ইঞ্চি দশেক হবে।
রক্তের দাগ শুকিয়ে ছিল গায়ে, ছুরিটা পরীক্ষা করল পোয়ারো। বলল, খুন করার পক্ষে যথেষ্ট।
-খুনী হাতে গ্লাভস ব্যবহার করেছিল, তাই কোনো হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি। বললেন কমিশনার।
–খুবই সতর্ক কাজ-ক্লু রাখতে চায়নি। বলল পোয়ারো, কিন্তু খুঁজে ঠিক বার করব। একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখছি, মঁসিয়ে রেনাল্ড তার ওভার কোটের তলায় শুধু আন্ডারওয়ার পরে ছিলেন।
-হ্যাঁ, ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাপারটাকে রহস্যজনক মনে করেছেন।
এই সময় দরজা ঠেলে ফ্রাঙ্কেইস ঘরে ঢুকল। জানাল, মাদাম সুস্থ বোধ করছেন, কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
–আমরা এখুনি আসছি, তুমি সঁসিয়ে হয়টেটকে খবরটা দাও।
ফ্রাঙ্কেইস বিদায় নিলে কমিশনার বললেন, চলুন যাওয়া যাক।
পোয়ারো নিবিষ্ট চোখে মৃতদেহের দিকে তাকিয়েছিল। আচমকা বিড়বিড় করে বলে উঠল, ওভারকোটটা বেমানান লম্বা।
.
ওপরতলায় সিঁড়ির শেষ ধাপে একটা প্যাসেজ, প্রশস্ত করিডর। একপাশে চাকরবাকরদের ঘর। করিডরের শেষ প্রান্তে একটা বড় ঘরে ফ্রাঙ্কেইস আমাদের নিয়ে এলো।
দীর্ঘাঙ্গী মাঝবয়সী মাদাম রেনাল্ড একটা খাটে শুয়েছিলেন। ডাঃ ডুরান্ড তাকে পরীক্ষা করছিলেন।
সম্মানসূচক অভিবাদন জানিয়ে মাদাম আমাদের আসন গ্রহণ করতে অনুরোধ করলেন। দু-চার কথার পর ম্যাজিস্ট্রেট হয়টেট তার কাজ শুরু করলেন।
-মাদাম, গতকাল রাতের ঘটনা বিশদভাবে আমাদের বলুন।
–সবই বলব মঁসিয়ে। আমি চাই অপরাধীর শাস্তি হোক। আমার যথাসাধ্য আমি করব।
গতকাল রাতে সাড়ে নটা নাগাদ আমি শুতে যাই। আমার স্বামী পড়ার ঘরে ছিলেন। মনে হয় ঘণ্টাখানেক পরে শুতে আসেন।
অনেক রাতে কেউ হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু চিৎকার করতে পারিনি। দুজন মুখোশপরা লোক ছিল ঘরের ভেতরে।
-তাদের চেহারা আপনার মনে আছে মাদাম?
–একজন অপরজনের বিপরীত একেবারে। ঢ্যাঙা লম্বা লোকটির মুখে কালো দাড়ি, অপরজন বেঁটে গঁট্টাগোট্টা, মুখে লাল দানি। দুজনেরই মাথার টুপি টেনে চোখ আড়াল করা।
বেঁটে লোকটি আমার মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলে। অন্য লোকটি আমার স্বামীর বুকের ওপর চেপে কাগজকাটা ছুরিটা উঁচিয়ে ধরেছিল।
এরপর তারা আমার স্বামীকে জোর করে পাশের ড্রেসিংরুমে নিয়ে যায়। প্রচণ্ড ভয় পেলেও সংজ্ঞা হারাইনি তখনো।
পাশের ঘর থেকে অস্পষ্ট চাপা কথা আমি শুনতে পাচ্ছিলাম। একজন স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলছিল, দক্ষিণ আমেরিকার লোকেরা যেমন বলে থাকে। সে আমার স্বামীকে বলছিল, সেই গোপন জিনিসটা আমাদের চাই। কোথায় সেটা?
কথা কাটাকাটি করে ওরা আমার স্বামীর কাছ থেকে চাবি নিয়ে ড্রয়ার খোলে, দেয়াল আলমারি খোলে। পরে তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন, আলমারি হাতড়ে সমস্ত টাকা তারা নিয়ে গেছে।
সেই সময় বাইরে একটা আওয়াজ হয়। তখন ওরা আমার স্বামীকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।