পেছনে ছোরার আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে।
–কতক্ষণ আগে তাকে হত্যা করা হয়েছিল? সঙ্কোচের সঙ্গে জানতে চাইল পোয়ারো।
ডঃ ডুরান্ড বললেন, আমার মতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে রাত তিনটের সময়। অবশ্য মাদাম রেনাল্ড জানিয়েছেন সময়টা রাত দুটো। আকস্মিক আঘাতের সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হয়েছিল তার। তাই কোনোভাবেই বাধা দিতে পারেননি।
-বুঝেছি। মাথা নাড়ল পোয়ারো।
–বাড়ির পরিচারকরা ছুটে এসে মাদামের বাঁধন খুলে দেয়। বলতে শুরু করলেন কমিশনার, বাড়ির চাকরবাকরদের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি দুজন মুখোশধারী লোক আচমকা শোবার ঘরে ঢুকে প্রথমে তাকে হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে তারা তার স্বামীকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। সেই সময়ই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তার সঙ্গে অবশ্য এখনো পর্যন্ত আমরা কথা বলিনি।
–মঁসিয়ে রেনাল্ড ও মাদাম বাদে বাড়িতে আর কে কে আছে? জানতে চাইল পোয়ারো।
–পরিচারিকাদের মধ্যে বৃদ্ধা ফ্রাঙ্কেইস, যুবতী দুই বোন ডেনিস ও লিওনি অও লমবার্ড। এছাড়া বাড়ির পুরনো মালিকের বহুবছরের পুরনো হাউসকিপার আর সোফার। তাকে মঁসিয়ে রেনাল্ড ইংলন্ড থেকে এনেছিলেন। মঁসিয়ে জ্যাক রেনাল্ড–সঁসিয়ে রেনাল্ডের পুত্রও এবাড়িতে থাকেন। বর্তমানে তিনি বাইরে আছেন।
কমিশনারের বিবরণ শেষ হলে মঁসিয়ে হয়টেট জিজ্ঞাসাবাদের কাজ শুরু করলেন। তার নির্দেশ পেয়ে সার্জেন্ট প্রথম হাজির করল বৃদ্ধা ফ্রাঙ্কেইসকে।
মঁসিয়ে হয়টেটের প্রশ্নের উত্তরে বৃদ্ধা কাঁপতে কাঁপতে জানাল, বাড়ির পূর্বতন মালকিন লা ভিকসটির-এর কাছে এগারো বছর ছিল। গত বসন্তে নতুন ইংরেজ মালিক বাড়িটা কিনে নিলে সে এখানেই থেকে যায়।
-খুব ভালো কথা। এবারে বলল, রাতে সদর বন্ধ করে কে? ম্যাজিস্ট্রেট জানতে চাইলেন।
প্রতিদিন আমিই দরজা বন্ধ করি মঁসিয়ে। গতকালও রাত সাড়ে দশটায় বন্ধ করেছিলাম।
–তখন বাড়ির অন্যান্যরা কে কোথায় ছিল বলতে পারবে?
-মঁসিয়ে রেনাল্ড তার পড়ার ঘরে ছিলেন। মাদাম কিছুক্ষণ আগেই শোবার ঘরে চলে যান। ডেনিস আর লিওনি আমার সঙ্গেই চলে আসে।
-তাহলে বোঝা যাচ্ছে মঁসিয়ে রেনাল্ডই রাতে দরজা খুলে থাকবেন।
-একাজ তিনি করতে পারেন না সিয়ে। প্রতিবাদ করে উঠল ফ্রাঙ্কেইস, চোর-ডাকাত সারাক্ষণ ঘুরে বেড়ায় বাড়ির বাইরে, তা তিনি ভালোই জানতেন। অত রাতে সেই লেডিকেও তিনি বাড়ির বাইরে যেতে দেননি
–কোনো লেডির কথা বলছ তুমি? তার নাম কি? তীব্র স্বরে জিজ্ঞেস করলেন ম্যাজিস্ট্রেট।
একটু ইতস্ততঃ করে বৃদ্ধা জানাল, প্রায় সন্ধ্যাতেই তো তিনি আসেন। তাঁর নাম মাদাম ডওব্রেইল।
–ওহো, পাশের ভিলা মারগুয়েরিটে যিনি থাকেন? ঠিক বলছ?
–হ্যাঁ, মঁসিয়ে, তার কথাই বলছি। আপনি তাকে জানেন দেখছি। খুবই সুন্দরী তিনি।
–অদ্ভুত ব্যাপার, বিস্ময় প্রকাশ করলেন ম্যাজিস্ট্রেট, গত সন্ধ্যায় তাহলে তাঁরা দুজন একসঙ্গে ছিলেন–
কথা থামিয়ে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে তিনি তাকালেন বৃদ্ধার দিকে।
দেখা গেল খোঁচাটা ঠিক জায়গাতেই পড়েছে। ফ্রাঙ্কেইস গড়গড় করে বলতে শুরু করল, ওদের দুজনের মধ্যে কি সম্পর্ক তা আমি জানি না। সকলেই জানে মাদাম ডওব্রেয়ুইল অত্যন্ত গরীব, মেয়েকে নিয়ে থাকেন। অসাধারণ সুন্দরী তিনি যদিও এখন আর যুবতী নন। সম্প্রতি গ্রামে অনেক কথাই ঘুরে বেড়াচ্ছে, তিনি দেদার খরচপত্র করছেন। অত টাকা কোথা থেকে পাচ্ছেন সেটা সকলের কাছেই রহস্য।
–এঁদের এই বন্ধুত্বের কথা মাদাম রেনাল্ড জানতেন?
–জানতেন সবই মঁসিয়ে। কিন্তু অত্যন্ত নম্র ভদ্র মহিলা তিনি। তাই স্বামীর আচরণে বুক ভেঙ্গে গেলেও মুখ বুজে সয়ে থাকেন। মানসিক যন্ত্রণায় দিনে দিনে শুকিয়ে যাচ্ছেন তিনি, আমি লক্ষ্য করেছি।
মঁসিয়ে রেনাল্ডও বুঝতেন কিন্তু গ্রাহ্য করতেন না। তিনি নেশাগ্রস্তের মতো হয়ে পড়েছিলেন-সন্ধ্যা হলেই প্রতিদিন তিনি ছটফট করতে থাকতেন।
মঁসিয়ে, আমি জানি, মাদাম ডওব্রেয়ুইল খুবই খারাপ স্বভাবের মহিলা। সে গ্রাস করেছিল মঁসিয়েকে।
-তাহলে তুমি বলছ, কাল সন্ধ্যায় ভদ্রমহিলা যথারীতি এসেছিলেন। তিনি কি রাতে চলে গিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ মঁসিয়ে। পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে মঁসিয়ে তাঁকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়েছিলেন আর ভদ্রমহিলা শুভরাত্রি জানিয়েছিলেন। আমি শুনতে পেয়েছিলাম। এরপর মঁসিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন।
–তখন সময় কত হবে?
–তখন রাত দশটা পঁচিশ হবে।
–আচ্ছা, এ ব্যাপারে তোমার কাউকে সন্দেহ হয়?
–না মঁসিয়ে।
ম্যাজিস্ট্রেট এরপর বিদায় দিলেন বৃদ্ধাকে। তার ডাক পেয়ে ঘরে উপস্থিত হল লিওনি অও লমবার্ড। লিওনি হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতেই ঘরে ঢুকল।
এই যুবতী পরিচারিকাটিই প্রথম হাত-পা বাঁধা অবস্থায় মাদাম রেনাল্ডকে দেখতে পেয়েছিল। ম্যাজিস্ট্রেটের জিজ্ঞাসার উত্তরে সে পুনর্বার সেই বর্ণনা শোনালো। রাতেও কোনো অস্বাভাবিক শব্দ সে শুনতে পায়নি। তার বোন ডেনিসও জানাল তার মনিবের চালচলন ইদানীং কেমন বদলে গিয়েছিল।
ম্যাজিস্ট্রেট ডেনিসকে জিজ্ঞেস করলেন, গতকাল রাতে মাদাম ও ডওব্রেয়ুইলকে কি তুমিই দরজা খুলে দিয়েছিলে?
–গতরাতে নয় মঁসিয়ে, তার আগের দিন। গতরাতে তিনি আসেননি।
–ফ্রাঙ্কেইস যে বলল, তিনি গতকাল রাতেও এসেছিলেন?