পরমুহূর্তেই শঙ্কায় দুলে উঠল বুক। যদি সে খালাস না পায়? তাহলে? তাহলে অভিযুক্ত হবে বেলা? যেকোন মূল্যে আমি যাকে ভালোবাসতে চাই?
কি সিদ্ধান্ত আমি নেব? আমি কি বেলাকে বাঁচাবার চেষ্টা করব না?
সম্ভবতঃ বেলা এখনো জানে না, জ্যাক রেনাল্ড গ্রেপ্তার হয়েছে। আমি তাকে কিছুই প্রকাশ করিনি। কিন্তু যখন সে জানবে, তখন সে কি করবে? সে কি নিজের জীবনের বিনিময়ে তার প্রাক্তন প্রেমিককে বাঁচাবার চেষ্টা করবে?
এমনও তো হতে পারে, সব বাধা অতিক্রম করে জ্যাক রেনাল্ড খালাস পেয়ে যাবে। তা হলে তো সবদিকই রক্ষা হয়। যদি তা না হয়–সেই সঙ্কট মোচন করবে কে?
আমাকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে বেলাকে আড়ালে রাখা যায় এবং জ্যাককেও বাঁচানো যায়। যদিও জানি না, কি করে তা সম্ভবপর হবে।
পোয়ারো কোনো অন্যায় হতে দেবে না। যেকোনো ভাবেই হোক, নিরপরাধীকে সে মুক্ত করে আনবে। আমি জানি, যত কঠিনই হোক, সে কাজে সে ব্যর্থ হতে পারে না। যদি এমন হয়, বেলা সব সন্দেহের বাইরে আর জ্যাক রেনাল্ড অভিযোগমুক্ত–এমন সন্তোষজনক সমাধান কি সম্ভব হবে? কোনো পথে সম্ভব?
৪. ইংলন্ড থেকে ফিরে
১৬.
ইংলন্ড থেকে ফিরে পরদিন সকালে সেন্ট ওমরে ম্যাজিস্ট্রেট হয়টেটের ঘরে তার সঙ্গে দেখা করলাম আমরা। জ্যাক রেনাল্ডকেও সেখানে আনা হয়েছিল।
আমাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে মঁসিয়ে হয়টেট বললেন, আপনি আসাতে স্বস্তি ফিরে পেলাম। হতভাগা জিরয়েড যে কেলেঙ্কারি করেছে, এ মারাত্মক ভুল কি করে সংশোধন করা যাবে বুঝতে পারছি না। মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনি অন্য কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না?
সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট আছে। এখনো অনেক পয়েন্টই অস্পষ্ট রয়েছে। জ্যাক রেনাল্ডকে আমি অপরাধী ভাবতে পারছি না। কিন্তু তার সপক্ষে কি বলার আছে?
–আত্মপক্ষ সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছে সে, বললেন মঁসিয়ে হয়টেট, তার কাছ থেকে অপরাধের স্বীকারোক্তি ছাড়া কিছু পাওয়া মুশকিল। ভাবছি, আগামীকাল তাকে আমি আবার জিজ্ঞাসাবাদ করব। আপনিও উপস্থিত থাকবেন।
কথা শেষ করে সামনের কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে একটা চিঠি বার করে আনলেন মঁসিয়ে হয়টেট।
-মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার এই চিঠিটা আমার কাছে ছিল।
ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিটা হাতে নিল পোয়ারো। চিঠিটা তখুনি না খুলে পকেটে রেখে দিল পোয়ারো। তারপর যাওয়ার জন্য উঠল।
-তাহলে কাল আমাদের দেখা হচ্ছে মঁসিয়ে হয়টেট।
ঘর থেকে বেরিয়ে আসার মুহূর্তেই জিরয়েডের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
-ওহ, মঁসিয়ে পোয়ারো, বলল জিরয়েড, আপনাকে দেখে নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। আশা করতে পারি এ কেসের চূড়ান্ত রায় এবারে শিগগিরই ঘোষিত হবে।
–আমি আপনার সঙ্গে একমত মঁসিয়ে জিরয়েড।
–তরুণ রেনাল্ডকে শেষ পর্যন্ত যে আপনি দোষী সাব্যস্ত করে সন্তুষ্ট হয়েছেন, এটা খুবই আনন্দের সংবাদ।
-মাপ করবেন মঁসিয়ে, আমার মতে জ্যাক রেনা নির্দোষ।
–পাগল! তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে উঠল জিরয়েড।
-মঁসিয়ে জিরয়েড, তদন্তের শুরু থেকেই লক্ষ্য করেছি আপনি আমাকে নানাভাবে অপমান করার চেষ্টা করে গেছেন। আপনার জন্য উপযুক্ত জবাব আমি তৈরি করে রেখেছি। আপনার আগেই মঁসিয়ে রেনাল্ডের খুনীকে আমি খুঁজে পেয়েছি। আমি পাঁচশো ফ্রাঙ্ক বাজি রাখতে রাজি। আপনি প্রস্তুত?
একটু ইতস্ততঃ করে জিরয়েড বলল, বেশ, আমি প্রস্তুত।
-ধন্যবাদ মঁসিয়ে জিরয়েড। এসো হেস্টিংস যাওয়া যাক।
পোয়ারোর চ্যালেঞ্জকে জিরয়েড কিভাবে নিল বোঝা গেল না। কিন্তু পোয়ারো পরিষ্কার ঘোষণা করে ফেলেছে, মঁসিয়ে রেনাল্ডের খুনীকে সে খুঁজে বার করেছে। পোয়ারোর মনে কি আছে বোঝা যাচ্ছে না। বেলাকে নিয়েই চিন্তা হতে লাগল।
রাস্তায় চলতে চলতে এসব চিন্তাই মাথায় ঘুরতে লাগল। পোয়ারোর সঙ্গে কোনো কথা হল না।
হোটেলে ঢোকার মুখে গ্যাব্রিয়েল স্টোনরের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল। আমাদের সঙ্গে হোটেলে আসতে রাজি হয়ে গেল।
তারপর, বলুন মঁসিয়ে স্টোনর, বলল পোয়ারো, এদিকে কি মনে করে?
–একজন বন্ধুর ওপর যদি অন্যায় অবিচার হয়, তার পাশে সবারই দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি। বলল স্টোনর।
–আপনি বিশ্বাস করেন না যে জ্যাক রেনাল্ড তার বাবাকে খুন করেছে?
নিশ্চয়ই না। জ্যাক রেনাল্ডকে আমি জানি। সে খুন করেছে একথা আমি কখনো বিশ্বাস করব না।
জেনে খুশি হবেন যে, তার খালাস পাবার সম্ভাবনাই বেশি। তার বিরুদ্ধে এমন কোনো প্রমাণ জিরয়েড উপস্থিত করতে পারেনি।
-মঁসিয়ে পোয়ারো, জিজ্ঞেস করল স্টোনর, আপনি তাকে অপরাধী বলে বিশ্বাস করেন?
না। তবে তার নির্দোষিতা প্রমাণ করা খুবই কষ্টকর হবে। জিরয়েড তার ওপর যতই অবিচার করে থাক, মাদাম রেনাল্ডের শেষ জবানন্দীর ওপরই তার ভাগ্য নির্ভর করছে। তবে জ্যাকের আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা সন্তোষজনক নয়।
–সে রাতে জ্যাকের কাছে যে কোনো ছুরিই ছিল না, সেকথা মাদাম রেনাল্ড জানেন। বললাম আমি।
আমি জ্যাক রেনাল্ডের অফিসে গিয়েছিলাম, বলল পোয়ারো, আমি জানতে পারি কোম্পানির কারখানা থেকে তিনটি ছুরি তৈরি করিয়েছিল। তার একটা দিয়েছিল তার মাকে, একটা বেলা ডুবিনকে আর তৃতীয় ছুরিটা জ্যাক যে তার নিজের জন্য রেখেছিল, তা বলা যায়। অতএব ছুরির প্রশ্ন তুলে জ্যাককে নির্দোষ প্রমাণ করা যাবে না।