আমি জানতে চাইলাম, কোন দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাটাকে আমরা বিচার করব–ব্ল্যাকমেল না নারীর প্রতি আসক্তি
-অবশ্যই ব্ল্যাকমেল, বলল পোয়ারো। কেননা, মহিলার সম্পর্কে বলতে গিয়ে স্টোনর কথাটা স্পষ্টই উচ্চারণ করেছিল।
–কিন্তু মাদাম রেনাল্ডের কথায় তো স্টোনরের কথার সমর্থন পাওয়া যায়নি, আমি বললাম, অবশ্য এটা ঠিক যে তিনি সব মিথ্যা কথা শুনিয়েছিলেন আমাদের।
যাই হোক, এই প্রসঙ্গে বেলা নামের মেয়েটির কথা আমরা আনতে পারি। তার সঙ্গে মঁসিয়ে রেনাল্ডের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা আমরা জানতে পেরেছি। এই সম্পর্ক সত্ত্বেও তিনি এখানে মাদাম ডওব্রেয়ুইলের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। এই সূত্রেই হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়েটি মঁসিয়ে রেনাল্ডকে চিঠি লিখেছিল।
–একটা প্রশ্ন এখানে হেস্টিংস, এই চিঠিতে প্রাপকের কোনো নাম ছিল না, আর সেটা পাওয়া গিয়েছিল মৃতদেহের পকেট থেকে। এই কারণে আমরা ধরে নিয়েছি যে চিঠিটা মঁসিয়ে রেনান্ডের উদ্দেশ্যেই লেখা হয়েছে। কিন্তু সত্যিই সেটা তাকে লেখা হয়েছিল কিনা এ সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত নই।
এই বিষয়ে প্রথম আমার মনে সন্দেহ দেখা দেয় তার গায়ের ওভারকোটটা দেখে। সেটা তার দেহের তুলনায় বড় মাপের ছিল। কাজেই এই কোটটা তার না-ও হতে পারে। এই বিষয়টাও বিবেচনা করা উচিত।
তুমি দেখেছ, আমি পরে, জ্যাক রেনাল্ডের ওভারকোটেরও মাপ নিয়ে দেখেছি। সেটা তার দেহের তুলনায় ছোটই ছিল। এই দুটো ব্যাপারের যোগৃসত্র হিসেবে তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি, সেদিন পিতা-পুত্রের ঝগড়ার মধ্যে প্যারিসে যাওয়ার ট্রেন ধরার সময় হয়ে গিয়েছিল বলে জ্যাক তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আশাকরি, ব্যাপারটা তোমার কাছে পরিষ্কার হয়েছে।
বুঝতে পেরেছি, আমি বললাম, চিঠিটা লেখা হয়েছিল জ্যাক রেনাল্ডকে, তার বাবাকে নয়। সেটা তার পকেটেই ছিল। উত্তেজনার মুখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জ্যাক ভুল ওভারকোট পরেছিল।
মাথা নেড়ে আমাকে সমর্থন জানাল পোয়ারো।
ওসব বিষয় নিয়ে পরে আমি আলোচনা করব। এখন ধরে নেওয়া যাক, ওই চিঠির সঙ্গে মঁসিয়ে রেনাল্ডের কোনো সম্পর্ক ছিল না। যাক এবারে তুমি এগিয়ে যেতে থাক।
পোয়ারোর পূর্ববর্তী নোট দেখে নিয়ে আমি বললাম, এর পর মার্থা ডওব্রেইলকে বিয়ে করার ব্যাপার নিয়ে পিতা-পুত্রের ঝগড়া, জ্যাকের প্যারিস যাত্রা, তারপর মঁসিয়ে রেনাল্ডের উইল পরিবর্তন–এসব নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। তারপরেই সেই ভয়ঙ্কর দিনের কথা–দেখা যাচ্ছে সেদিন সকালের সমস্ত ঘটনা পর পর সাজানো হয়েছে
-হ্যাঁ। তবে প্রথম ঘটনাটা হবে, বাগানে জর্জেস আর মঁসিয়ে রেনান্ডের বিবাদ। সেই থেকেই তার বিপদের আশঙ্কা যার জন্য আমাকে চিঠি লেখেন, ছেলেকে তারবার্তা পাঠান আর সোফারকে ছুটি দেন।
-হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ। বললাম আমি।
–মঁসিয়ে রেনাল্ডের চিঠিতে কয়েকটা বিষয় পাওয়া যায়। যে কোনো মুহূর্তে তিনি বিপদের আশঙ্কা করেছেন, স্যান্টিয়াগোর নামও উল্লেখ করেছিলেন। সেখান থেকে যদি কোনো বিপদের আশঙ্কা তার থাকতো, তাহলে সে-নাম উল্লেখ করলেন কেন? আবার ছেলেকেও সেখানে পাঠালেন-ব্যাপারটা যে অদ্ভুত তা নিশ্চয় তুমিও স্বীকার করবে। আবার এই যে বিপদের আশঙ্কা–যে কোনো মুহূর্তে জীবনহানির ভয়–ভেবে দেখো এসবেরই যেন অভিব্যক্তি ঘটেছে মাদাম রেনাল্ডের বলা কাহিনীর মধ্যে।
–সমস্ত ব্যাপারটাই কেমন পরস্পরবিরোধী। যাইহোক, এগুলো নিয়ে পরে না হয় চিন্তা করা যাবে। এখন দুর্ঘটনার রাতে যে মহিলা অতিথিকে মঁসিয়ে রেনাল্ড বিদায় জানাতে এসে বিরক্তিসূচক মন্তব্য করেছিলেন, সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করা যাক।
ফ্রাঙ্কেইস বলেছে, সেই রহস্যময়ী মহিলা হলো মাদাম ডওব্রেয়ুইল। আবার ডেনিস বলেছে সে অন্য মহিলা।
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে পোয়ারো বলল, এবারে তাহলে সেই ছেঁড়া চেকটার কথা মনে করবার চেষ্টা কর। স্টোনর বেলা ডুবিন নামটা সনাক্ত করেছিল কিন্তু তার ধারণা স্পষ্ট ছিল না। তাহলে ভিলা জেনেভিয়েভে মেয়েটি এসেছিল কার কাছে? বাড়িতে পুরুষ বলতে দুজন, জ্যাক ও তার বাবা। এদের কার কাছে মেয়েটি এসেছিল আমরা এ বিষয়টা কেবল অনুমান করতে পারি।
এমন হতে পারে, মেয়েটি জ্যাকের কাছেই তার ভালোবাসার দাবি নিয়ে এসে থাকতে পারে। মঁসিয়ে রেনাল্ড হয়তো তাকে টাকা নিয়ে খুশি থেকে ফিরে যেতে বলে থাকবেন। মেয়েটি অপমানিত বোধ করে এবং চেকটা টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে।
যাইহোক, তাকে তাড়াতাড়ি বিদায় করার জন্য তিনি বলেছিলেন ঠিক আছে বিদেয় হও, তখন তিনি এরকম করেছিলেন কেন? তার হাতে কি কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল? তার সময়ের অপচয় হচ্ছিল? সেই কব্জিঘড়ির ক্ষেত্রেও দেখ দুঘণ্টার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ফারাক রাখা হয়েছে।
আমরা জানতে পেরেছি, মঁসিয়ে রেনাল্ড রাত বারোটার আগেই খুন হয়েছিলেন। অবশ্য ডাক্তারে অভিমত, মৃতদেহ পরীক্ষা করার সময় থেকে অন্ততঃ চব্বিশ ঘন্টা আগে তার মৃত্যু হয়ে থাকবে।
-তুমি আমার মাথা গুলিয়ে দিচ্ছ পোয়ারো, নতুন নতুন তথ্য এভাবে হাজির না করে মঁসিয়ে রেনাল্ডকে কে খুন করেছিল তাই বল। তুমি তো বলেছিলে খুনীর পরিচয় জানতে পেরেছ।