ইতিমধ্যে কুড়ি বছরে পার হয়ে গেলেও মহিলাকে চিনতে তার ভুল হয়নি।
হেস্টিংস, আমি সম্ভাবনাগুলো খতিয়ে দেখে ঘটনা পর পর সাজিয়ে যাচ্ছি বটে, আমি কতটা সঠিক কতটা ভুল বুঝতে পারছি না।
যাই হোক, মারলিনভিলে মহিলাটির অন্য নাম, অন্য পরিচয়। লোকটি দেখতে পায় এখানে একজন ইংরেজ প্রেমিকও মহিলার জুটেছে।
জর্জেস যথারীতি রেনাল্ডের মুখোমুখি হয়। দুজনের মধ্যে ঝগড়া বেঁধে যায়। রাগের মাথায় সে রেনাল্ডের পিঠে ছুরি বসিয়ে দেয়।
খুন করার পর নিজের অবস্থাটা উপলব্ধি করতে পারে সে। আতঙ্কে কবর খুঁড়তে শুরু করে দেয়।
অনুমান করতে পারছি, মাদাম ডওব্রেয়ুইল ঠিক সেই সময়েই এসেছিল তার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে।
কিন্তু তার জন্য অপেক্ষা করছিল এক ভয়াবহ দৃশ্য। জর্জেস আর মাদাম ডওব্রেইল দুজনেই এই দৃশ্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
জর্জেস তৎপর হয়ে ওঠে। প্রবল উত্তেজনায় সে তাকে টেনে শেডে নিয়ে যায়। আর তখনই দুর্ঘটনা ঘটে–সে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেয় লুটিয়ে পড়ে।
-এরপর কি হতে পারে পোয়ারো? ধরা যাক আকস্মিকভাবেই জ্যাক রেনাল্ড ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। মাদাম ডওব্রেয়ুইল তাকে কজা করে ফেলে মাদাম রেনাল্ড আর জর্জেসের কল্পিত অবৈধ সম্পর্কের কথা বলে।
এই কুৎসা প্রচারিত হয়ে পড়লে তার মেয়ের পক্ষেও যে তা হানিকর হবে সেকথাও জানায়। তারপর পরামর্শ দেয়, তার বাবার খুনী যখন মৃত, তখন ব্যাপারটা জানাজানি হবার আগে মৃতদেহ সরিয়ে ফেলাই ভালো।
জ্যাক রাজি হয়ে যায়। পোয়ারো, সব ঠিক আছে? কি মনে হয় তোমার?
পোয়ারো হেসে বলল, বন্ধু, এটা জমাটি সিনেমার গল্প হয়ে গেল। বাস্তবের সঙ্গে এই ঘটনার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। দুটি অদ্ভুতভাবে ঘটা ঘটনার সূক্ষ্ম দিকগুলো বিবেচনা করতে পারনি।
যেমন ধর, কনিউ আর মঁসিয়ে রেনান্ডের পোশাকের কথা। প্রতিপক্ষকে ছুরিবিদ্ধ করার পর জর্জেস নিশ্চয়ই মৃতদেহের সঙ্গে তার পোশাক বদল করে ফেলেনি? ছুরিটাও কি বদল করে ফেলেছ বলবে?
জর্জেস হয়তো আগের দিন মাদাম ডওব্রেয়ুইলকে ভয় দেখিয়ে টাকা আর পোশাক সংগ্রহ করেছিল। তার মেয়ের বিয়ের বিষয়টা টোপ করেই কাজটা সহজে করে থাকতে পারে সে।
-না হেস্টিংস, এ যুক্তি আমি মানতে পারছি না। জর্জেস নিজেই ছিল খুনের অপরাধী, এই অবস্থায় ভয় দেখিয়ে মাদাম ডওব্রেইলকে কজা করা তার পক্ষে অসম্ভব। কেন না সে জানত, মাদাম ডওব্রেয়ুইল ইচ্ছে করলেই তাকে যে কোনো মুহূর্তে ফাঁসিকাঠে ঝোলার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে দিতে পারে।
–হ্যাঁ। তোমার কথায় যুক্তি আছে। স্বীকার করে নিরস্ত হলাম আমি, তাহলে তোমার সিদ্ধান্ত কি?
–আমার সিদ্ধান্ত হল সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত এবং নির্ভুল। তোমার ব্যাখ্যা শোনা গেল, এবারে আমার কিছু পয়েন্ট তোমাকে শোনাচ্ছি।
নিশ্চয়ই। বল।
-তুমি জর্জেস কনিউ-এর ঘটনা থেকে শুরু করেছিলে। আমিও সেখান থেকেই শুরু করছি। এটা বোঝা গিয়েছিল যে মাদাম বেরোণ্ডি নিখুঁত একটি গল্প ফেঁদে আদালতকে ধোঁকা দিয়ে নিজের নির্দোষিতা প্রমাণ করেছিলেন। বর্তমান কেসের ক্ষেত্রেও একই কাহিনীর মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের।
সম্ভবতঃ জর্জেসের মাথা থেকেই বেরিয়েছিল কাহিনীটি। তাকে প্রেরণা জুগিয়েছিল মাদাম ডওব্রেয়ুইল আর সহযোগিতা করেছিলেন মাদাম রেনাল্ড। কিন্তু ঘটনাচক্রে কেবল তাকেই আমরা সামনে দেখতে পাচ্ছি।
যাইহোক, তুমি বরং তোমার নোটবুকে পয়েন্টগুলো টুকে নাও। আমি শুরু থেকেই আরম্ভ করছি।
–শুরু বলতে তোমাকে লেখা মঁসিয়ে রেনাল্ডের চিঠির কথা বলছ তো?
–আমরা প্রথমে এই চিঠি থেকেই কেসটা জানতে পারি বটে, কিন্তু আসলে এর শুরু আরো আগে থেকে–যখন থেকে মঁসিয়ে রেনাল্ড মারলিনভিলেয় এসে বসবাস শুরু করেন। মাদাম ডওব্রেয়ুইলের সঙ্গে তার সম্পর্কের সূত্রপাত…যার পরিণতি রেনাল্ডের কাছ থেকে মহিলার কয়েক দফায় মোটা অর্থলাভ।
এমনি কিছু টুকরো ঘটনার পর আমরা চলে আসব সরাসরি ২৩শে মে তারিখের ঘটনায়।
পোয়ারোর ইঙ্গিত পেয়ে আমি তার বক্তব্য লিখে নিতে লাগলাম।
২৩শে মে জ্যাক রেনাল্ড তার বাবার নির্দেশ পেয়ে প্যারিসের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। সেদিনই যাত্রার আগে মার্থা ডওব্রেয়ুইলকে বিয়ে করার প্রশ্ন নিয়ে জ্যাকের সঙ্গে মঁসিয়ে রেনাল্ডের তুমুল ঝগড়া হয়ে যায়।
২৪শে মে মঁসিয়ে রেনাল্ড তার আগের উইল পরিবর্তন করেন। নতুন উইলে জ্যাক রেনাল্ডের নামের উল্লেখ পর্যন্ত থাকে না। তিনি তাঁর মৃত্যুর পর সমস্ত বিষয়-সম্পত্তির মালিকানা দিয়ে যান স্ত্রীকে।
এরপর, ৭ই জুন, জর্জেস আর মঁসিয়ে রেনাল্ডের মধ্যে বাগানে ঝগড়া হয়। ঝোপের আড়াল থেকে মার্থা ডওব্রেয়ুইল এই ঘটনার সাক্ষী হয়।
এই ঘটনার পরেই মঁসিয়ে রেনাল্ড পোয়ারোকে চিঠি লেখেন তার সাহায্য চেয়ে। জ্যাক রেনাল্ডকে তারবার্তা পাঠিয়ে বুয়েনস এয়ার্স যাবার কথা জানানো হয়। তারপর সোফার মাস্টার্সকে ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেদিন রাতেই মঁসিয়ে রেনাল্ডের ভিলায় একজন মহিলার আগমন ঘটে। তাকে বিদায় জানাবার সময় মঁসিয়ে রেনাল্ডকে বলতে শোনা যায়, হ্যাঁ…হ্যাঁ…তুমি এখন বিদেয় হও…
এই পর্যন্ত বলে থামল পোয়ারো, পরে বলল, হেস্টিংস, মূল ব্যাপারগুলোই তুমি লিপিবদ্ধ করলে। চেষ্টা করে দেখো ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে নতুন কিছু আলোকপাত করতে পার কিনা।