–কিন্তু একথা তো আপনি ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাননি মাদমোয়াজেল?
–সেই মুহূর্তে আমি সন্দেহ কাটিয়ে উঠতে পারিনি। কেননা, শেডের মৃতদেহের গায়ে ছিল দামি পোশাক। দুজনের মুখ একরকম হলেও শেডের লোকটিকে আমার অভিজাত কেউ বলেই মনে হয়েছিল।
এই সময় বাড়ির ভেতর থেকে মায়ের ডাক শুনে, আমি যাচ্ছি মঁসিয়ে বলে বাড়ির দিকে ছুটল মার্থা।
আমরা অতঃপর ভিলা জেনেভিয়েভের দিকে চলতে লাগলাম।
চলতে চলতে পোয়ারোকে জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েটি যা বলল তা সত্যি বলে তুমি মনে করছ?
–আমার বিশ্বাস সে তার প্রেমিককে আড়াল করার উদ্দেশ্যে কোনো মিথ্যা গল্প শোনায়নি। আরও একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল। জ্যাক বলেছিল, মার্থা ডওব্রেযুইলকে আশ্বস্ত করবার জন্যই দুর্ঘটনার রাত্রে ফিরে এসেছিল। কথাটা যাচাই করার জন্যই তাকে সতর্ক করে দেবার সুযোগ না দিয়ে প্রকৃত সত্যটা আমি মেয়েটির কাছে জেনে নিলাম।
আমার প্রশ্নের উত্তরে মাথা কেবল বলল, সে আমাকে বলেছে, অর্থাৎ সে-রাতে জ্যাক এখানে ছিল একথা তার কাছে শুনেছে। হেস্টিংস, একটা ব্যাপার এখনো আমার কাছে পরিষ্কার হয়নি, দুর্ঘটনার রাতে জ্যাক ফিরে এসে কি করেছিল, কার সঙ্গে দেখা করেছিল–এসব কিছুই আমি জানি না।
–কিন্তু জ্যাক তার বাবাকে খুন করেছে বলে আমার মনে হয় না।
আবার তুমি বাস্তব ছেড়ে ভাবপ্রবণ হয়ে পড়ছ হেস্টিংস। ছেলে বাপকে খুন করেছে। একথা তোমার বিশ্বাস করতে বাধছে, কিন্তু আমি দেখেছি জীবনবীমার মোটা টাকা পাওয়ার লোভে মা তার ছেলেমেয়েদের নিজ হাতে খুন করেছে। এমন ঘটনার কথা কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে, বল?
–কিন্তু জ্যাকের কিসের লোভ ছিল?
–সে জানত, বাবার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির অর্ধেক সে পাবে।
–তাহলে শেডের ভেতরে মৃত অবস্থায় যে লোকটিকে পাওয়া গেল সে কে?
–জ্যাকের হিসেব বলবে, লোকটা জ্যাকের সহযোগী ছিল।
–তা যদি হয়, ছুরির হাতলে মেয়েদের চুল পাওয়া যাবে কেন?
স্বভাবসুলভ অধৈর্যের সঙ্গে পোয়ারো বলে উঠল, সেটা আদৌ কোনো স্ত্রীলোকের চুল নাও হতে পারে। আজকাল অনেক যুবককেই মেয়েদের মতো চুল রাখতে দেখা যায়। তবে এক্ষেত্রে চুলটা কোনো মহিলারই। সে কে আমি জানি না।
পোয়ারোর বক্তব্যের উদ্দেশ্য আমি ধরতে পারছিলাম না। সে চেষ্টা না করে আমি অগত্যা জানতে চাইলাম, এখন আমরা চলেছি কেন?
–যে জন্য মঁসিয়ে জ্যাককে কয়েক ঘণ্টার জন্য বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছি। তার ঘরটা খুঁজে দেখতে চাই।
.
অভ্যস্ত দ্রুততার সঙ্গেই পোয়ারো জ্যাক রেনাল্ডের ঘরের আলমারি, ড্রয়ার, কাগজপত্র সমস্ত কিছু আঁতিপাতি করে খুঁজল। যখন হাল ছেড়ে দিয়ে জায়গামতো সব রাখতে যাচ্ছে, তখনই একতাড়া কাগজের তলা থেকে বার করে আনল এটা ফটোগ্রাফ। সঙ্গে সঙ্গে সেটা পকেটে চালান করল।
ঠিক সেই মুহূর্তেই দেখতে পেলাম জিরয়েডের গাড়ি ভিলার সামনে এসে থামল। গাড়িতে বসে আছে জ্যাক রেনাল্ড।
দ্রুতপায়ে দুজনে নিচে এলাম।
–শুভ অপরাহু মঁসিয়ে জিরয়েড, স্বাভাবিক স্বরে বলল পোয়ারো, ব্যাপার কি?
চকিতে জ্যাক রেনাল্ডকে দেখে নিয়ে জিরয়েড বলল, ইনি জাল ছিঁড়ে পালাবার মতলব করেছিলেন। কিন্তু আমার শ্যেনদৃষ্টি এড়াতে পারেননি। মঁসিয়ে জ্যাক রেনাল্ডকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জ্যাক রেনাল্ডের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছিল। সে দেয়ালে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। পোয়ারো সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
এব্যাপারে আপনার বক্তব্য –
কিছুই নয়।
দৃঢ়স্বরে বলল জ্যাক। সে স্থির চোখে তাকিয়ে রইল পোয়ারার দিকে।
৩. ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ়
১১.
ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় হয়ে পড়েছিলাম আমি। জ্যাক রেনাল্ড তার বাবাকে খুন করেছে, মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না।
আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, জ্যাক রেনাল্ডের সমর্থনে সহসা তাকে সওয়াল করতে দেখে।
জিরয়েডের কাছে পোয়ারো জানতে চাইল জ্যাককে গ্রেপ্তার করার যুক্তিগুলো কি কি?
কিছুটা অপ্রস্তুত অবস্থাতেই সৌজন্যের খাতিরে জিরয়েড আমাদের অন্য একটা ঘরে নিয়ে এলো। জ্যাক রেনাল্ড রইল দুজন রক্ষীর হেফাজতে।
-দেখুন মঁসিয়ে পোয়ারো, আমাদের গোয়েন্দাদের কাজ যে কত আধুনিক আমার ব্যাখ্যা শুনলেই বুঝতে পারবেন।
–আমি শুনছি, আপনি বলে যান। ভাববেন না, আমি ঘুমিয়ে পড়ব না।
–প্রথমেই স্বীকার করে নিচ্ছি, দুজন বিদেশী লোকের কথাই আমি ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, তারা বিদেশী নয়।
খুবই প্রশংসনীয়, বলে উঠল পোয়ারো, আপনি সেই দেশলাই কাঠি আর পোড়া সিগারেটের চালাকিটা ভেদ করতে পেরেছেন।
জিরয়েড এক মুহূর্ত থমকাল। পরে বলতে লাগল, কবর খোঁড়ার ব্যাপারটা চিন্তা করলে বোঝা যায়, এমন একজন পুরুষই এই কেসে জড়িত, যার লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমি খবর নিয়ে জেনেছি জ্যাক রেনাল্ড আর তার বাবারমধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছে। খুনের মোটিভ এখানেই পাওয়া যাচ্ছে।
দ্বিতীয়তঃ খুনের রাতে জ্যাক রেনাল্ড মারলিনভিলেতেই ছিল। অথচ সে ঘুণাক্ষরেও আমাদের তা জানতে দেয়নি। এটা তার বিরুদ্ধে একটা বড় পয়েন্ট।
তারপর আসুন খুনের হাতিয়ারের কথায়। দেখা গেছে, দুটো খুনের ক্ষেত্রেই একই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। ছুরিটা চুরি যাওয়াতেই আমরা ব্যাপার জানতে পেরেছি। ক্যাপ্টেন হেস্টিংস ছুরিটা চুরি যাওয়ার সঠিক সময়টা জানেন। এই চুরির ব্যাপারটাও একই ব্যক্তির দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে।