–ভিলার পরিবেশ খুবই বিশৃঙ্খল হয়ে আছে বলে আপনাকে কষ্ট দিতে হল। তাছাড়া আমার আবিষ্কারের খবর আমি জিরয়েডের জানার বাইরেই রাখার পক্ষপাতি। আমাদের দুজনের দৃষ্টিভঙ্গী ভিন্ন। বলল পোয়ারো।
–জিরয়েড লোকটিকে আমারও পছন্দ নয় মঁসিয়ে। খুবই সহানুভূতিহীন। বলল জ্যাক।
–আমাকে একটা সাহায্যের জন্য আপনাকে অনুরোধ করব মঁসিয়ে। পরবর্তী স্টেশনই হল আবালা, এখুনি একবার সেখানে গিয়ে ক্লোকরুমে খবর নিয়ে জেনে আসতে হবে ঘটনার দিন রাত্রে দুজন বিদেশী কোনো ব্যাগ জমা রেখেছিল কিনা। দয়া করে এই উপকারটুকু আপনি করুন।
নিশ্চয়ই করব, মঁসিয়ে, আমি এখুনি যাচ্ছি।
–মিনিট পনেরোর মধ্যেই ট্রেন পেয়ে যাবেন।
জিরয়েড আপনার গতিবিধি জানতে না পারলেই ভালো।
–খুব ভালো কথা। আমি তাহলে যাচ্ছি—
জ্যাক রেনাল্ড উঠে দাঁড়ালে, পোয়ারো তাকে বসতে ইঙ্গিত করল।
–এক মিনিট মঁসিয়ে রেনাল্ড, দুর্ঘটনার রাত্রে আপনি যে মারলিনভিলে উপস্থিত ছিলেন, আজ সকালে মঁসিয়ে হয়টেটকে তা না জানিয়ে ভুল করেছেন।
–কিন্তু আমি তো চেরবুর্গেই ছিলাম মঁসিয়ে পোয়ারো। সামান্য ইতস্ততঃ করে বলল সে।
স্টেশনের লোকেরা তাহলে আমাকে ভুল সংবাদ দিয়ে থাকবে। তারা বলেছে, সেদিন রাতে এগারোটা চল্লিশে আপনি পৌঁছেছেন।
–সে-রাতে যদি ফিরেও থাকি, তাতে কি?
–ফিরে আসার কারণটা জানাবেন?
–এর মধ্যে লুকোছাপার কিছু নেই। আমার প্রেমিকা মাদমোয়াজেল ডওব্রেয়ুইলকে আশ্বস্ত করা দরকার মনে হয়েছিল, কোনো না কবে ফিরতে পারব তা আমার জানা ছিল না।
-তারপরই ফিরে এসে ট্রেন ধরেছিলেন আপনি?
–না, শেষ ট্রেন ধরার সময় ছিল না। আমি হেঁটে সেন্ট বিউভেসে গিয়ে গ্যারেজ থেকে একটা গাড়ি নিয়ে চেরবুর্গে চলে যাই।
–বুঝতে পেরেছি, আচ্ছা আপনি রওনা হয়ে যান।
জ্যাক ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পোয়ারো লাফিয়ে উঠে বলল, চল হেস্টিংস, ভিলা জেনেভিয়েভে এখুনি যেতে হবে।
–একারণেই তুমি তাকে এখান থেকে সরিয়ে দিলে?
আমার দিকে তাকিয়ে সমর্থনসূচক হাসি হাসল পোয়ারো।
.
১০.
ভিলায় প্রবেশ না করে পোয়ারো সরাসরি শেডের পাশ দিয়ে এগিয়ে গেল। আগের দিন ভিলা জেনেভিয়েভ এবং ভিলা মারগুয়েরিটের মধ্যবর্তী জায়গায় যে বেঞ্চিতে বসে জ্যাক রেনাল্ড ও মার্থাকে ঝোপের আড়ালে কথা বলতে দেখেছিলাম, সেখানে উপস্থিত হল।
-এখানেই আমাদের অপেক্ষা করতে হবে হেস্টিংস, বেঞ্চিতে বসে বলল পোয়ারো, মার্থাকে বাগানে দেখা পেয়ে যেতে পারি। আলোচনার দরকার
বলতে বলতেই দেখা গেল মাদমোয়াজেল মার্থা এদিকেই এগিয়ে আসছে। পোয়ারোর ডাক শুনে এগিয়ে এসে ঝোপের আড়ালে দাঁড়াল।
-আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই মাদমোয়াজেল। বলল পোয়ারো।
নিশ্চয়ই, মঁসিয়ে পোয়ারো।
সহজভাবে কথাটা বললেও তার চোখে প্রচ্ছন্ন উদ্বেগের ছায়া আমার চোখ এড়াল না।
–সেদিন আপনাদের বাড়ি থেকে ফেরার পথে আপনি জানতে চেয়েছিলেন খুনের ব্যাপারে আমরা কাউকে সন্দেহ করি কিনা।
-হ্যাঁ, আপনি বলেছিলেন সন্দেহভাজন লোক দুজন—
কিন্তু এখন বলতে হলে আমি বলব দুজন নয়, একজন।
–কে-কে সে? সাগ্রহে জানতে চাইল মার্থা।
–মঁসিয়ে জ্যাক রেনাল্ড।
–অসম্ভব। জেদের স্বরে বলে উঠল মার্থা, জ্যাককে কেউ সন্দেহ করতে পারে না।
–কিন্তু জিরয়েড তাই করে।
মার্থার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল। শুষ্ক স্বরে সে বলল, জিরয়েড লোকটি অতি নিষ্ঠুর।
বলতে বলতে তার চেহারা পাল্টে গেল। যেন মুহূর্তের মধ্যেই জিরয়েডকে আক্রমণ করার সাহস সঞ্চয় করে নিয়েছে।
গভীর দৃষ্টিতে মেয়েটিকে নিরীক্ষণ করল পোয়ারো। বলল, ঘটনার রাত্রে জ্যাক এখানেই ছিল, আপনি জানেন?
–হ্যাঁ, মৃদুকণ্ঠে বলল মার্থা, সে আমাকে বলেছে।
–আজ সকালে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এ কথাটা স্বীকার না করা ঠিক কাজ হয়নি।
–গোপন না করে উপায় ছিল না। জিরয়েড় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করত।
–কিন্তু এই ঘটনা তার বিরুদ্ধেই যাবে। আপনি নিশ্চয় তা বুঝতে পারছেন?
-সবরকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো মনোবল আমার আছে মঁসিয়ে পোয়ারো। আমি জানি জ্যাক নির্দোষ। তাকে বাঁচানোর জন্য আমাদের চেষ্টার ত্রুটি হবে না।
হঠাৎ অন্তরঙ্গ সুরে সামান্য ঝুঁকে পোয়ারো বলে উঠল, মাদমোয়াজেল, একটা কথা আপনাকে আমি বলি, আপনি যা গোপন করতে চাইছেন, আমাকে তা খুলে জানালে আপনার অহিত কিছু হবে না।
অবাক চোখে পোয়ারোকে লক্ষ্য করল মেয়েটি।
–হ্যাঁ, বলার আছে মঁসিয়ে, কিন্তু আপনার কাছে তা অবিশ্বাস্য মনে হবে।
–তবু আপনি আমাদের বলুন।
–দ্বিতীয় মৃতদেহটা সনাক্ত করার জন্য জিরয়েড আমাকে শেডে ডেকেছিলেন। আমি চিনতে পারিনি। কিন্তু শেড় থেকে বেরিয়ে আসার পরে আমার মনে পড়েছে ঘটনাটা। মঁসিয়ে রেনাল্ড যেদিন খুন হন সেদিন সকালে আমি বাগানে বেড়াবার সময় দুজন লোকের ঝগড়ার শব্দ শুনতে পাই। ঝোপের আড়াল থেকে আমার চোখে পড়ে মঁসিয়ে রেনাল্ড দাঁড়িয়ে আছেন আর অপর লোকটি ক্রুদ্ধস্বরে কথা বলছে। সে টাকা চাইছিল। কিন্তু তার পোশাক ভালো ছিল না। প্রবল রাগে ভীষণ হয়ে উঠেছিল সে।
-তারপর?
–ঠিক সেই সময়ই বাড়ির ভেতরে মা আমাকে ডাকতে থাকেন। তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে চলে যাই আমি। কিন্তু মঁসিয়ে, আমি নিশ্চিত, সেই লোকটিরই মৃতদেহ আমি শেডের ভেতরে দেখেছিলাম।