–এ সব পুরনো ইতিহাস মিঃ পোয়ারো। এখন এসব টেনে আনছেন কেন?
–অপ্রয়োজনে নয়, লর্ড মেফিল্ড। অতীতের সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন বলেই পুরনো শত্রু আপনাকে নতুন সঙ্কটে জড়িয়ে ফেলবার ছক কষেছে। আপনি যে জনসমর্থন হারাননি, এতেই তার শিরঃপীড়া।
এখন আপনি রাজনৈতিক জীবনে জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। সকলেই জানে দেশের ভাবী প্রধানমন্ত্রী আপনি।
-আমাকে অপদস্থ করার জন্যই নক্সাগুলো সরানো হয়েছে, আপনি বলছেন? অসম্ভব।
–আশ্চর্য হবার কি আছে লর্ড মেফিল্ড। একজন বিশেষ আকর্ষণীয়া লেডির উপস্থিতিতে আপনার স্টাডি থেকে ব্রিটেনের বোমারুবিমানের নক্সা চুরি হয়ে গেল, এই খবরটা ফঁস হয়ে গেলে আপনার পক্ষে ব্যাপারটা সম্মানজনক হবে না। তাছাড়া আপনি নিজেই সন্দেহভাজন হয়ে উঠবেন যখন খবরের কাগজে ভদ্রমহিলার সঙ্গে আপনার সম্পর্কের প্রতি ইঙ্গিত প্রকাশ করা হবে।
–এতদূর অবধি ঘটনাটা পৌঁছবে বলে মনে হয় না।
–লর্ড মেফিল্ড, ঘটনাটা তুচ্ছ হতে পারে, কিন্তু জনসাধারণের মনে নেতাদের সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্ট।
লর্ড মেফিল্ডকে চিন্তিত দেখাল। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনি ঠিক বলেছেন। ব্যাপারটা জটিল হয়ে উঠতে পারে।
-আপনার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ এমন কারুর কথা আপনার মনে পড়ে? জানতে চাইলেন পোয়ারো।
-এটা খুবই অবাস্তব চিন্তা
-যাইহোক, বুঝতে পারছেন নিশ্চয়, পার্টিতে উপস্থিত কার সঙ্গে আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কেমন জানতে চাওয়া অপ্রাসঙ্গিক ছিল না।
-ওহো, নিশ্চয়ই নয়। আপনি জুলিয়া ক্যারিংটন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাকে কখনো আমি তেমন গুরুত্ব দিইনি। খুবই চঞ্চল আর বেপরোয়া মহিলা। ব্রিজ খেলার ব্যাপারে একেবারে পাগল। মনে হয় না তিনি আমাকেও বিশেষ মূল্য দেন।
পোয়ারো বলল, এখানে আসার আগে আপনার পরিচয় লিপিতে চোখ বুলিয়েছিলাম। আপনি নিজে একজন। বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার; একসময় একটা প্রসিদ্ধ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানেরও প্রধান ছিলেন।
-হ্যাঁ, আমি হাতেকলমে কাজ শিখে একেবারে নিচে থেকে উঠে এসেছি। বললেন লর্ড মেফিল্ড।
-ওহো, কি বোকা আমি
পোয়ারো আচমকা স্বগতোক্তি করলেন। লর্ড মেফিল্ড জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালেন।
-মাফ করবেন, বললেন পোয়ারো, একটা ধাঁধার অংশ আওড়াচ্ছিলাম, এখন অবশ্য সেটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। তবে একটু যাচাই করে নিতে চাই।
উঠে দাঁড়ালেন পোয়ারো।
-তাহলে শুভরাত্রি লর্ড মেফিল্ড। আপনাকে শুধু জানিয়ে যাচ্ছি, নক্সাগুলো কোথায় আমি জানি।
-আপনি জানেন, চেঁচিয়ে উঠলেন লর্ড মেফিল্ড, তাহলে চলুন, এখুনি গিয়ে সেগুলো উদ্ধার করে আনি।
-নার্স এখন তা করা যাবে না, মাথা নাড়লেন পোয়ারো, লর্ড মেফিল্ড, ব্যাপারটা আপনি আমার ওপরেই ছেড়ে দিন বরং।
লর্ড মেফিল্ড অবজ্ঞাভরে তাকিয়ে রইলেন। পোয়ারো ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
.
নিজের ঘরে বিছানায় বসেছিলেন লেডি জুলিয়া। একটা খামের ওপর কিছু লিখছিলেন তিনি। এমন সময় বাইরে থেকে শব্দ করে ঘরে ঢুকল রেগি ক্যারিংটন।
–কি ব্যাপার রেগি?
–এসব কি শুনছি? গতকাল রাতে নাকি এ বাড়িতে চুরি হয়েছে?
–চুরি হয়েছে? কি চুরি হয়েছে? কার কাছে শুনলে?
-আমি কিছুই জানি না, নিচেই শুনে এলাম। তবে পুলিসে খবর দেওয়া হয়নি। বেসরকারী তদন্তের কাজ চলছে–একতলায় সবাইকে নাকি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
–কি অদ্ভুত কাণ্ড। অবাক হলেন লেডি জুলিয়া ব্যাপারটা কি হয়েছে শুনেছ কিছু?
–আমরা শুতে চলে যাবার পরেই নাকি চুরিটা হয়েছে, তবে কি চুরি হয়েছে বলতে পারব না।
–তাহলে তদন্তকারী ভদ্রলোক কি জানতে চাইছেন? গতরাতে কে কোথায় ছিল এসব?
–তাই হবে সম্ভবতঃ। আমি কিন্তু তোমাকে বলে রাখছি মা, বেশি কথা আমি বলতে পারব না। নিচে থেকে ওপরে উঠেই সোজা বিছানায় শুয়ে পড়েছি। ক্লান্ত ছিলাম খুব, সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
লেডি জুলিয়া ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
রেগি আবার নিজের থেকেই বলতে শুরু করল, তুমি তো আমার অবস্থা ভালোই জান, হাতে নগদ টাকা কিছু নেই। দেখেছ নিশ্চয়ই?
–তা আর দেখিনি, বললেন লেডি জুলিয়া, আমার নিজেরই তো হাতটান চলছে। তোমার বাবা জানতে পারলে কী বলবেন!
এই সময় দরজায় শব্দ করে ঘরে ঢুকলেন স্যার জর্জ।
রেগি, তুমি এখানেই আছ? একবার নিচে যাও। মঁসিয়ে এরকুল পোয়ারো তোমার সঙ্গে কথা বলতে চান।
নিচে ততক্ষণে জিজ্ঞাসাবাদের কাজ শুরু করেছেন পোয়ারো। শুরু থেকেই মিসেস ম্যাকাট্টাকে সন্দেহের আওতা থেকে সরিয়ে রেখেছিলেন। তবু ছোটাখাট কয়েকটা প্রশ্ন করলেন তিনি।
জানা গেল, ঠিক এগারোটার সময় তিনি শুতে চলে যান। সন্দেহ জাগার মতো কোনো শব্দ তিনি শুনতে পাননি।
পোয়ারো একসময়ে প্রসঙ্গ পাল্টে ব্যক্তিগত প্রসঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন। জানালেন তিনি নিজে লর্ড মেফিল্ডের একজন গুণমুগ্ধ। তিনি সত্যিকারের মহৎ ব্যক্তি।
-হ্যাঁ, সত্যিকারের উদ্যোগী মানুষ তিনি, বললেন মিসেস ম্যাকাট্টা, পরিবারের কোনো রকম সাহায্য ছাড়াই নিজের চেষ্টায় বড় হয়েছেন।
এরপরেই পোয়ারো মিসেস ভান্দারলিনের প্রসঙ্গ তোলেন।
–শুনেছি লর্ড মেফিল্ড তার খুব বন্ধু।
-মোটেই তা নয় মঁসিয়ে পোয়ারো, বললেন মিসেস ম্যাকাট্টা, সত্যিকথা বলতে কি, আমি তো তাকে এখানে গতকাল দেখতে পাব আশা করিনি।