-হ্যাঁ। তার বিষয়ে আপনাদের আলোচনার কথা তিনি বলেছেন।
এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন লর্ড মেফিল্ড। পরে বললেন, আসলে আমার মাথায় একটা পরিকল্পনা ছিল। যদিও সেটা কার্যকরী করা সম্ভব হল না। নারী মাত্রই যে কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে, তাই প্রমাণ হল।
–কিন্তু লর্ড মেফিল্ড, সত্যি সত্যি তিনি এখনো পর্যন্ত বাড়তি কোনো সুবিধা আদায় করতে পারেনি।
–আপনি তাহলে বলছেন হারানো জিনিসগুলো ফিরে পাবার সম্ভাবনা রয়েছে? শুনে আশ্বস্ত হচ্ছি। আসলে এই মহিলাকে ফাঁদে ফেলার জন্য আমি যে কৌশলের আশ্রয় নেবার কথা ভেবেছিলাম তাতে আমি নিশ্চিত ছিলাম। অন্য দিকটা একবারও ভেবে দেখিনি।
–আপনার কৌশলটা কিরকম ছিল লর্ড মেফিল্ড? জানতে চাইলেন পোয়ারো।
লর্ড মেফিল্ড ইতস্ততঃ করে বললেন, ব্যাপারটা সম্পূর্ণভাবে আমার মাথাতেই ছিল।
–অন্য কারোর সঙ্গেই আলোচনা করেননি?
–না।
–আপনার সেক্রেটারি মিঃ চার্লিলের সঙ্গেও না?
–না।
–আপনি একাই দায়িত্বটা নেবেন ভেবেছিলেন? হাসলেন পোয়ারো।
–ওটাই নিরাপদ পন্থা বলে আমি মনে করি।
–আপনি নিঃসন্দেহে বিচক্ষণ ব্যক্তি, কাউকে বিশ্বাস করতে পারেন না। তবে স্যার জর্জ ক্যারিংটনের কাছে উল্লেখ করেছিলেন।
করেছিলাম, কারণ আমার প্রিয় বন্ধু ক্যারিংটন আমার সম্পর্কে খুবই সহানুভূতি সম্পন্ন।
–তিনি আপনার পুরনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তাই না?
–হ্যাঁ। দীর্ঘ কুড়ি বছরের সম্পর্ক আমাদের।
–আর তার স্ত্রী?
–তার স্ত্রীকেও সমান ভাবেই জানি বৈকি।
–কিন্তু, মাফ করবেন লর্ড মেফিল্ড, তার স্ত্রীর সঙ্গে আপনার তেমন অন্তরঙ্গতা নেই। লর্ড মেফিল্ড একটু থমকালেন।
মঁসিয়ে পোয়ারো, কারো সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক কি থাকতে পারে, এই ব্যাপারে সেই প্রসঙ্গ আসছে কেন বুঝতে পারছি না।
–বিশেষ কারণেই প্রসঙ্গটা আসছে লর্ড মেফিল্ড। ড্রইংরুমে কেউ থাকতে পারে, এই ব্যাপারে আপনি একমত হয়েছিলেন, তাই নয়?
-হ্যাঁ। এরকম হওয়া অসম্ভব নয়, আমরা ভেবেছিলাম।
–তাহলে আমি জানতে চাইছি, ড্রইংরুমে কে থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
–আমি মনে করি, মিসেস ভান্দারলিনই থাকতে পারেন। তিনি একটা বই-এর জন্য ফিরে এসেছিলেন। এর পরেও তিনি এসে থাকতে পারেন, কোনো বই কিংবা হাতব্যাগ বা রুমাল, এমনি কোনো না কোনো অজুহাত নিয়ে।
তাছাড়া, তার পরিচারিকা সিঁড়িতে আর্তচিৎকার করে উঠেছিল। পরিচারিকার সঙ্গে বন্দোবস্ত করেই তিনি এই কাণ্ডটা ঘটিয়েছিলেন যাতে সেই চিৎকার শুনে চার্লিল স্টাডি থেকে বেরিয়ে যায়। আর ঘটেছিল সেই ঘটনাই। চার্লিল বেরিয়ে গেলে তিনি স্টাডি থেকে নক্সাগুলি গাপ করে জানালা গলে পালিয়ে যান। আপনিও সেরকমই বলেছেন, তাই না?
–একটা কথা আপনি ভুলে গেছেন লর্ড মেফিল্ড। চার্লিল যখন মেয়েটির সঙ্গে কথা বলছিল, চার্লিল বলেছে, তখন ওপরতলা থেকে মিসেস ভান্দারলিন তার পরিচারিকার নাম ধরে ডাকেন।
–ওঃ হো, হ্যাঁ, লজ্জিত হাসি হাসল লর্ড মেফিল্ড, কথাটা আমি একদম ভুলে গিয়েছিলাম।
-দেখুন লর্ড মেফিল্ড, দুটো বিষয় আমাদের বিবেচনা করতে হবে। তার প্রথমটা আমরা ব্যাখ্যা করেছি এভাবে, বাইরে থেকে চোর এসে নক্সাগুলো নিয়ে গেছে। অত্যন্ত উপযোগী এই সূত্রটা।
এরপর আমরা বিবেচনা করতে পারি, বিদেশী এজেন্টের প্রসঙ্গ। এই প্রসঙ্গেও একটা বিশেষ সূত্রে মিসেস ভান্দারলিনের নাম এসে যাচ্ছে। কাজেই অত্যন্ত সতর্কভাবে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
–তাহলে মিসেস ভান্দারলিনের বিষয়টা কিরকম দাঁড়াচ্ছে?
–মিসেস ভান্দারলিন আদৌ ড্রইংরুমে ছিলেন না। চুরিটা করেছে তার কোনো সহযোগী, যে ড্রইংরুম থেকে এসেছে। এটা অনুমান করা হচ্ছে। যদি তাই হয়, তাহলে এই চুরির উদ্দেশ্যটা কি? এটাই এখন আমাদের অনুসন্ধানের বিষয়।
-এটা কি অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে না?
–আমি মনে করি না। যাইহোক, নক্সাগুলো চুরি করার পেছনে উদ্দেশ্যটা কি হতে পারে, তাই আমাদের দেখতে হবে। এক হতে পারে, এগুলোর বিনিময়ে কিছু অর্থাগমের উদ্দেশ্য ছিল। সহজ এবং স্বাভাবিক উদ্দেশ্য এটা। তবে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকাও সম্ভব বলে মনে করছি আমি।
–কি রকম?
–ধরুন কারো সুনাম ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে, কাউকে অপদস্থ করার জন্য।
–কে সে?
–মিঃ চার্লিলের কথা ভাবা যেতে পারে। সন্দেহটা তার ওপরেই স্বাভাবিক ভাবে পড়ছে। আরো একটা কথা, দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাদের জনপ্রিয়তা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
–আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে, আমার জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যেই এই চুরি ঘটানো হয়েছে।
পোয়ারো হাসলেন, মাথা ঝাঁকালেন।
–আমার কথাগুলো এবারে মিলিয়ে নিন লর্ড মেফিল্ড। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে এমনি একটা সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল আপনাকে। একটি ইউরোপীয় শক্তির সঙ্গে আপনার ঘনিষ্ঠতা কেন্দ্র করে অনেক জল ঘোলা করা হয়েছিল। এর ফলে দেশের নির্বাচকদের সামনে আপনার ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়েছিল, গোটা দেশের সন্দেহভাজন হয়ে উঠেছিলেন আপনি।
-হ্যাঁ, মিঃ পোয়ারো, খুবই দুঃখজনক অবস্থার মধ্যে কাটাতে হয়েছিল আমাকে।
–অথচ দেশের স্বার্থে সুবিধাজনক নীতি নির্ধারণের জন্যই একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আপনাকে যোগাযোগের এই কঠিন কাজটা হাতে নিতে হয়েছিল। গুজব ছড়িয়েছিল, একটি বিতর্কিত দেশের সঙ্গে আপনি একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছিলেন। গোটা দেশ ছিল সেই চুক্তির বিরুদ্ধে। আজ আর গোপন নেই যে প্রধানমন্ত্রী ব্যাপারটা চেপে দিয়েছিলেন। আপনি তার সহানুভূতি অর্জন করেছিলেন।