–বেশ, বেশ, তারপর?
–ডাক শুনেই পরিচারিকাটি ছুটে যায় আর আমিও স্টাডিরুমে ফিরে আসি।
–এখানে সিঁড়ির ওপর যখন দাঁড়িয়ে ছিলেন, তখন স্টাডিরুমের খোলা দরজা দিয়ে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেখেননি?
-না, না
–কেউ ঢুকে থাকলে বা বেরিয়ে এলে আপনার নজরে তো পড়া উচিত। স্টাডিরুমের দরজা তো প্যাসেজের একেবারে শেষ প্রান্তে।
জোরে জোরে মাথা নড়ল চার্লিল। বলল, আমার ভাগ্য ভালো যে জানালা টপকে যাওয়ার সময় চোরটাকে লর্ড মেফিল্ড দেখতে পেয়েছিলেন, তা না হলে এই বিশ্রী ব্যাপারটা আমার কাঁধেই চাপত।
–প্রিয় চার্লিল, তুমি একটা আকাট, বলে উঠলেন লর্ড মেফিল্ড, তোমাকে সন্দেহ করা হবে ভাবলে কি করে?
–সেটা আপনার অনুগ্রহ, লর্ড মেফিল্ড। যা বাস্তব তা কি আমিই অস্বীকার করতে পারছি। যাইহোক, আমাকে এবং আমার জিনিসপত্র তল্লাশি করলে আমি স্বস্তি পেতাম।
অধৈর্যের সঙ্গে ধমকে উঠলেন লর্ড মেফিল্ড, আবার বোকার মতো কথা বলছ তুমি।
-আপনাকে সার্চ করে দেখা হোক, এ কি আপনার আন্তরিক ইচ্ছা? বললেন পোয়ারো।
–হ্যাঁ মঁসিয়ে পোয়ারো, আন্তরিক ভাবেই আমি কামনা করছি, আমাকে সার্চ করে দেখা হোক। তার দিকে চিন্তিতভাবে মিনিটখানেক তাকিয়ে রইলেন পোয়ারো। বিড়বিড় করে কি বললেন। নীরব রইলেন এক মুহূর্ত। পরে বললেন, স্টাডিঘরের কাছাকাছিই নাকি মিসেস ভান্দারলিনের ঘর, ঘরটা কোথায়?
-স্টাডির ঠিক উল্টোদিকের ঘরটাই।
পোয়ারো নির্দেশ করে বললেন, টেরেসের ওপাশে যে জানালাটা দেখা যাচ্ছে, সেটাই কি?
-হ্যাঁ।
পোয়ারো মাথা ঝাঁকালেন। পরে বললেন, বেশ, এবারে চলুন ড্রইংরুমে যাওয়া যাক।
নিজের খেয়ালে এপাশ ওপাশ ঘুরে পোয়ারো ড্রইংরুমের সব কিছু দেখলেন। জানালার কাছে গিয়ে ছিটকিনিগুলো পরীক্ষা করলেন। অন্য সকলে কৌতূহল আর বিস্ময় নিয়ে তাকে দেখছে।
লর্ড মেফিল্ডের সামনে এসে পোয়ারো বললেন, ব্যাপারটা খুবই সরল মনে হয়েছিল প্রথমে, আসলে দেখছি, বেশ জটিল কেস। তবে একটা ব্যাপারে আমি নিশ্চিত, নক্সাগুলো বাইরে যায়নি, এখনো পর্যন্ত বাড়ির মধ্যেই রয়েছে।
লর্ড মেফিল্ড স্থির দৃষ্টিতে পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে থেকে তার বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করলেন। পরে চিন্তিতভাবে বললেন, কিন্তু প্রিয় পোয়ারো, লোকটাকে যে আমি স্পষ্ট দেখেছি,
স্টাডি থেকে বেরিয়ে ওপাশে মিলিয়ে গেল।
-ওখানে কোনো লোকই ছিল না।
অপেক্ষাকৃত দৃঢ় শোনাল পোয়ারোর কণ্ঠস্বর।
–আপনি বলছেন বটে, কিন্তু আমি তাকে দেখেছি।
–লর্ড মেফিল্ড, আপনার প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা স্বীকার করেই বলছি, স্টাডির জানালার পাশে আপনি একজনকে দেখেছেন, বাস্তবিক পক্ষে এ হল আপনার অনুমান। গাছের ডালপালা যখন দুলতে থাকে তার ছায়াকে মানুষ ভ্রম হওয়া অসম্ভব বা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আপনার এই দর্শনের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
আর প্রায় পাশাপাশি সময়ের মধ্যেই এখানে একটা চুরির ঘটনা ঘটে গেছে। ফলতঃ আপনার অনুমানটা এখন আর নিছক অনুমান বলে মনে করতে পারছেন না। সত্য বলেই আপনি বোধ করছেন।
–কিন্তু মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার কথা যদি মানতে হয় তাহলে আমার চোখ দুটোকেই অবিশ্বাস করতে হয়। আমি আবারো বলছি, আমার দেখাটা চোখের ভ্রান্তি বা কোনোরকমের ছায়াবাজি ছিল না–
এতক্ষণ পরে মুখ খুললেন স্যার জর্জ। বন্ধুর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, প্রিয় চার্লস, আমি আশা করছি, তোমার নয়, আমার চোখ দিয়েই তুমি একদিন সত্য উপলব্ধি করতে পারবে।
–আর একটা কথা লর্ড মেফিল্ড, যে বিষয়টা সম্পর্কে আমাদের নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন তা হল, তখন টেরেস পার হয়ে কে কে ঘাসের গালিচার নামেনি?
চার্লিলের মুখভাব মুহূর্তে পাল্টে গেল। ম্লান বিষণ্ণ স্বরে সে বলল, মঁসিয়ে পোয়ারো, যা অনুমান করতে চাইছেন, তাতে সব সন্দেহ আমার ওপরেই পড়বে-প্রমাণ হবে একমাত্র আমার পক্ষেই চুরি করার সুযোগ ছিল।
–আহাম্মক, আবার ঝাঁঝিয়ে উঠলেন লর্ড মেফিল্ড, মঁসিয়ে পোয়ারো যা-ই চিন্তা করুন না কেন, তোমাকে আমি কখনোই দোষী মনে করতে পারব না। তোমার নির্দোষিতা বিষয়ে আমার মন পরিষ্কার চার্লিল। সমস্ত দায়িত্ব সহকারেই একথা আমি ঘোষণা করতে পারি।
কিন্তু মঁসিয়ে চার্লিল, আমি কখনোই বলিনি যে আপনাকে সন্দেহ করি।
-না তা বলেননি, বলল চার্লিল, তবে বিষয়টা আপনি এমন ভাবে তুলে ধরেছেন যে আমি ছাড়া আর কেউ চুরি করতে পারে না তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
–আমি যা বলেছি তা আপনার বক্তব্যের সূত্র ধরেই
–আমি তো বারবারই বলছি, আমি কাউকে স্টাডিকে ঢুকতে দেখিনি।
–আপনাকে অতিক্রম করে কেউ স্টাডিতে ঢোকেনি, তা আমি স্বীকার করছি। তবে আমার সন্দেহ নেই যে জানালা টপকে কেউ নিশ্চয় স্টাডিতে ঢুকে থাকবে।
–কিন্তু আপনিই বলেছেন, তা ঘটেনি।
–আমি বলতে চেয়েছি, স্টাডিতে যদি কেউ ঢুকে থাকে তাহলে বেরিয়ে যাবার সময় লনের ঘাসে তার পায়ের ছাপ থেকে পারে না। সেটা সম্ভব, যদি কেউ বাড়ির ভেতর থেকে এসে থাকে। ড্রইংরুমের যে কোনো জানালা টপকে বাইরে গিয়ে টেরেস হয়ে আবার স্টাডির জানালা টপকে ঢুকে নক্সাগুলো হাতিয়ে নিয়ে আবার এখানে ফিরে আসা–এ কাজটা এমন কিছু অসম্ভব নয়। যে কেউ তা করতে পারে।
সম্পূর্ণ অসম্ভব, প্রতিবাদ করে উঠল চার্লিল, লর্ড মেফিল্ড এবং স্যার জর্জ সেই সময় টেরেসেই ছিলেন।