–আমি ড্রইংরুমে ছিলাম না। এই ঘরে বসেই সন্ধ্যার বেশি সময়টা আমি কাজ করেছি।
–লর্ড মেফিল্ড, ডিনারের পর কে আগে শুতে গিয়েছিলেন?
–আগে বলতে, আসলে তিনজন মহিলাই একসঙ্গে ড্রইংরুম থেকে বেরিয়ে যান।
–তারপর?
লর্ড মেফিল্ড বললেন, তখন মিঃ চার্লিল ড্রইংরুমে প্রবেশ করে, আমি তাকে কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতে বলি।
-তারপরেই বলেছিলেন, আপনারা দুজন টেরেসে গিয়ে পায়চারি করেন
–হ্যাঁ।
আপনারা স্টাডিরুমে গিয়ে কাজ করবেন, এ কথাটা মিসেস ভান্দারলিন শুনেছিলেন বলে মনে করেন?
-হ্যাঁ, শুনে থাকবার কথা।
কিন্তু, আপনি তো বলেছিলেন তিনজন মহিলা ঘর ছেড়ে যাবার পর আপনি কাগজপত্র গুছিয়ে রাখার কথা মিঃ চার্লিলকে বলেন। তিনি তো সেখানে ছিলেন না।
–হ্যাঁ, তিনি উপস্থিত ছিলেন না।
এই সময় মিঃ চার্লিল বলে ওঠে, মাফ করবেন লর্ড মেফিল্ড, আপনার কাছ থেকে কাগজপত্র গুছিয়ে রাখার নির্দেশ পাবার পর আমি স্টাডিরুমে ফিরে যাই। ঘর থেকে বেরুবার মুখেই দরজার সামনে মিসেস ভান্দারলিনের সঙ্গে আমার প্রায় ধাক্কা লাগার মতো অবস্থা হয়েছিল। তিনি একটা বই নেবার জন্য ড্রইংরুমে ফিরে এসেছিলেন।
–তাহলে কি তুমি মনে করছ, দরজার আড়াল থেকে তিনি আমাদের কথাবার্তা শুনে থাকতে পারেন?
–আমার অনুমান তাই।
লর্ড মেফিল্ডের দিকে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে পোয়ারো বললেন, বইটা কি তাকে দেওয়া হয়েছিল?
-হ্যাঁ, রেগি বইটা তার হাতে তুলে দিয়েছিল।
–সেই পুরনো কায়দা, নিজের মনে বলে উঠলেন পোয়ারো, মাফ করবেন, অপরাধীরা প্রায়ই তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য এই ধরনের অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে থাকে।
-বই খুঁজতে আসাটা ইচ্ছাকৃত বলেই আপনি মনে করছেন?
মৃদু হেসে মাথা ঝাঁকালেন পোয়ারো।
–তাহলে, পোয়ারো বললেন, এর পরেই আপনারা টেরেসে চলে আসেন, মিসেস ভান্দারলিন কি করছিলেন?
–বই নিয়ে তিনি ওপরে চলে যান।
–তরুণ রেগিও কি ওপরে চলে গিয়েছিলেন?
–হ্যাঁ।
–আর এই ঘরে আসার পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই বাইরে নারীকণ্ঠের চিৎকার শুনতে পান? এরপর কি ঘটল বলে যান মিঃ চার্লিল
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে পোয়ারো ফের বলতে থাকেন, সেই চিৎকার শুনতে পেয়ে, আপনি হলের দিকে ছুটে যান–তাই তো? বিবরণটা আপনার নিজের মুখে শুনতে পারলেই ভালো হয়…তারপর কি হল বলুন।
চার্লিল কেমন অস্বস্তির সঙ্গে উঠে দাঁড়াল। সে আড়ষ্ট বোধ করছে বোঝা গেল। তাকে সাহায্য করার জন্য পোয়ারো বললেন, ব্যাপারটাকে ঠিক চোখের সামনে তুলে আনার কথা বলছি আমি…আপনি কিভাবে কি করলেন..আপনাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি আমি…মনে করুন চিৎকারটা আমি করছি
অভিনয়ের ভঙ্গিতে পোয়ারো আর্তচিৎকার করল।
পোয়ারোর কাণ্ড দেখে লর্ড মেফিল্ডকে মুখ ঘুরিয়ে হাসি চাপতে হল। স্যার জেমসও অস্বস্তিবোধ করতে লাগলেন।
-হ্যাঁ, আপনি যেভাবে ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন…আমার মতো করে দেখান…
মিঃ চার্লিল আগের চাইতে সহজ হলেও আড়ষ্টভাব সম্পূর্ণ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। শরীরে একটা শক্ত ভাব নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল, দরজা খুলল।
তাকে অনুসরণ করে পোয়ারো ঘরের বাইরে এলো। অপর দুজনও তার পেছনে এগিয়ে এলো।
ঘর থেকে বেরিয়ে আসার পর আপনি কি দরজা বন্ধ করে গিয়েছিলেন?
-ঠিক মনে করতে পারছি না, ইতস্তত করল মিঃ চার্লিল, মনে হয় বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলাম।
-বেশ, তারপর কি করলেন?
চার্লিল কাঠের পুতুলের মতো সিঁড়ির নিচে নেমে গেল। সেখান থেকে ওপর দিকে তাকাল।
–সেই পরিচারিকাটি বলেছিলেন সিঁড়ির ওপরে দাঁড়িয়েছিল। সে ঠিক কোথায় ছিল? বললেন পোয়ারো।
সিঁড়ির মাঝ বরাবর।
–তাকে কি খুবই উদ্বেগাকুল দেখাচ্ছিল? এই রকম কি
পোয়ারো সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যেতে যেতে মাঝপথে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। ঘুরে জিজ্ঞেস করলেন, এরকম জায়গায় কি?
–আর দু-এক ধাপ ওপরে হবে।
–এরকম ভাবে দাঁড়িয়ে ছিল? একরকম ভঙ্গিমা করে দেখালেন পোয়ারো।
–ঠিক ওভাবে নয়-দাঁড়ান বলছি–মাথার ওপরে দুই কানের পাশে হাত রাখা ছিল।
–তাই বলুন, এভাবে কি
পোয়ারো হাতদুটো তুলে দুই কানের কিছু ওপরে মাথায় রাখল।
-হ্যাঁ, ঠিক ওভাবে।
–এতক্ষণে বোঝা গেল। এবারে বলুন মিঃ চার্লিল, তরুণীটি দেখতে সুন্দর ছিল?
চার্লিল মনে হল হোঁচট খেল। নিচু স্বরে বলল, ঠিক লক্ষ্য করিনি–মানে–
–কিন্তু, তা কি করে হয়, একজন সুন্দরী তরুণী সামনে দাঁড়ালো…আর আপনি একজন যুবক…স্বভাবতই
-সত্যি বলছি মঁসিয়ে পোয়ারো, আমার মনে তখন সে-ভাব ছিল না–
যাইহোক, মানলাম আপনি সেখানে লক্ষ্য করেননি, আপনাকে দেখতে পেয়ে মেয়েটি তখন ভূত দেখার গল্প শোনাল, তাই তো?
-হ্যাঁ।
–একটা সাদামূর্তি চোখের সামনে অদৃশ্য হওয়ার সেই গল্প আপনি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেছিলেন? মানে, মেয়েটি যে সত্যিই ভূত দেখেছে, তাকে দেখে সেকথা আপনার মনে হয়েছিল?
–ভূত দেখার ভয়…তা ঠিক বলতে পারব না। তবে মনে হচ্ছিল সে খুব হাঁপাচ্ছিল, তাকে খুব উত্তেজিত দেখচ্ছিল। ভয়ে কেমন আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল যেন।
-এবারে বলুন, সেই সময় আপনি কাছাকাছি তার মনিবকে দেখেছিলেন, কিংবা কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলেন?
-হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। তার কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েছিলাম, দেখতেও পেয়েছিলাম। তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে লিওনি বলে ডেকে ওঠেন।