–হ্যাঁ। তুমি তো এঁর সম্পর্কে সবই জান।
–একজন ভদ্রমহিলা সম্পর্কে আমি এরকম ভাবতে পারছি না। যদিও এ ব্যাপারে তিনিই একমাত্র সন্দেহভাজন ব্যক্তি। কিন্তু সন্দেহ করার মতো কোনো প্রমাণ তো আমাদের হাতে নেই।
–ওসব চিন্তা এখন ভুলে যাও চার্লস।
–কিন্তু জর্জ, তুমি যাকে ডাকতে চাইছ, তিনি একজন চতুর ফরাসি, তার ওপর কি তুমি বিশ্বাস রাখতে পারছ?
-প্রিয় বন্ধু, তিনি ফরাসি নন। তিনি একজন বেলজিয়ান।
–তাহলে সেই ভদ্রলোককেই ডেকে পাঠাও। যদিও আমি মনে করি না, তিনি আমাদের থেকে বেশি কিছু করতে পারবেন।
স্যার জর্জ হাত বাড়িয়ে টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিলেন।
.
এরকুল পোয়ারো যখন ফোনে খবরটা পেলেন, তখন রাত আড়াইটে। সঙ্গে সঙ্গে অন্ধকার পথে তার রোলস চালিয়ে এসে উপস্থিত হয়েছেন লর্ড মেফিল্ডের বাড়িতে। ওদের দুজনের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ মন দিয়ে শুনলেন।
গোড়া থেকেই লর্ড মেফিল্ড পোয়ারোকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিলেন। সন্দেহ, কৌতূহল দুই মিলিয়ে ছিল তার চোখে।
সামনের দিকে ঝুঁকে বসেছিলেন পোয়ারো। হঠাৎ একটা ঝাঁকুনি দিয়ে মাথা তুলে তাকালেন। স্যার জর্জের দিকে। নির্দোষ অভিব্যক্তি তার মুখে।
–ঘটনা তাহলে এই। পরিচারিকার চিৎকার…তা শুনে সেক্রেটারির ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়া…কোনো ছায়ামূর্তির ঘরে প্রবেশ করা…ডেস্কের ওপরে রাখা নক্সাগুলো হাতিয়ে নিয়ে অলক্ষ্যে সরে পড়া…উপযোগী ঘটনামালার সমাবেশ বলা যায়।
লর্ড মেফিল্ডের এক চোখে চশমা লাগানো ছিল। সেই চশমার কাচের ভেতর দিয়ে তিনি পোয়ারোর গাঢ় সবুজ হয়ে যাওয়া চোখ দেখতে পেলেন।
নড়ে চড়ে বসে তিনি বললেন, মাপ করবেন মিঃ পোয়ারো, আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না। যদি
–লর্ড মেফিল্ড, পোয়ারো বললেন, আমি বলতে চেয়েছি, এখন যতগুলো ঘটনা নজরে আসছে, চুরির পক্ষে খুবই উপযোগী। একটা কথা, আপনি জানালার পাশে যাকে মিলিয়ে যেতে দেখেছিলেন সে কি পুরুষ ছিল?
-সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই মিঃ পোয়ারো। বললেন লর্ড মেফিল্ড।
–স্যার জর্জ, আপনি? এয়ার মার্শালের দিকে তাকালেন পোয়ারো, ছায়াটা কোনো নারীর কি পুরুষের ছিল, বলতে পারবেন?
–আমি তো আগেই বলেছি, গোটা টেরেস আমার চোখের ওপরেই ছিল, কিন্তু আমি কিছুই দেখতে পাইনি।
চিন্তিতভাবে মাথা নিচু করল পোয়ারো। কি চিন্তা করল। পরক্ষণে উঠে দাঁড়িয়ে ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেলেন।
-ওখানে আমরা সকলে মিলেই বারকয়েক ঘেঁটে দেখেছি, বললেন লর্ড মেফিল্ড, নক্সাগুলোর চিহ্ন দেখতে পাইনি।
-আপনারা সকলে বলতে সেক্রেটারিও ছিল?
–হ্যাঁ, চার্লিলও ছিল।
–লর্ড মেফিল্ড, ঘরে ঢোকার পরে আপনি যখন ডেস্কের সামনে আসেন, মনে করতে পারবেন, কোনো কাগজটা সবার ওপরে ছিল?
লর্ড মেফিল্ডের ভ্রূ কুঞ্চিত হল। কয়েক মুহূর্ত তিনি চিন্তা করলেন।
-হ্যাঁ, মনে পড়েছে, সবার ওপরের কাগজটা ছিল একটা স্মারকলিপির খসড়া, আমাদের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থার বিষয়ে।
ডেস্কের ওপর থেকে সতর্কভাবে একটা কাগজ তুলে নিলেন পোয়ারো। এগিয়ে এসে লর্ড মেফিল্ডের দিকে এগিয়ে দিলেন।
-দেখুন তো এটা কিনা?
কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলেন লর্ড মেফিল্ড। পোয়ারোর দিকে তাকিয়ে বললেন, হ্যাঁ, এটাই ছিল সবার ওপরে।
কাগজটা এবারে স্যার জর্জের সামনে এগিয়ে ধরলেন পোয়ারো।
–ডেস্কের ওপরে এই কাগজটা আপনার চোখে পড়েছিল?
হাতে নিয়ে ভালো করে দেখলেন কাগজটা স্যার জর্জ, বললেন, হ্যাঁ। চার্লিল আর মেফিল্ডের পাশ থেকে আমি দেখেছিলাম, কাগজটা ওপরেই ছিল।
পোয়ারোর মুখে চিন্তার রেখা ফুটল। ধীর পায়ে গিয়ে কাগজটা ডেস্কের ওপর রেখে এলো।
দুই বন্ধু হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইল তার দিকে।
এবারে চার্লিলের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে–হ্যাঁ চার্লিল। বললেন পোয়ারো।
লর্ড মেফিল্ডের চোখের দৃষ্টি পাক্টাল। মুখ লাল হয়ে উঠল।
–মিঃ পোয়ারো, চার্লিল সম্পর্কে আমার মনোভাবের কথা জানানো উচিত মনে করি। আমার সেক্রেটারি হিসেবে অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে সে গত ন বছর ধরে কাজ করছে। আমার ব্যক্তিগত কাগজপত্র তার হেফাজতে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত বোধ করি। তাকে আমি সব সন্দেহের বাইরে বলেই মনে করি।
তাছাড়া, ওর যদি খারাপ মতলবই থাকতো, তাহলে সে নক্সাগুলোর নকল সহজেই করে নিতে পারত। কেউ জানতে পেত না আর আসল নক্সাগুলোও স্থানচ্যুত হত না।
-হ্যাঁ, খুব যুক্তিসঙ্গত। এরকম একটা চুরির নাটক না করেই সে অনায়াসে কাজ হাসিল করতে পারত।
-চার্লিলের ব্যাপার আমি আপনাকে প্রতিশ্রুতি দিতে পারি। বললেন লর্ড মেফিল্ড।
–চার্লিলের নির্দোষিতার ব্যাপারে এর পরে আর কথা থাকে না। স্যার জর্জ বলে উঠলেন।
–তাহলে সন্দেহভাজন মনে করছেন মিসেস ভান্দারলিন
–হ্যাঁ, তার চালচলন সন্দেহ উদ্রেক করারই মতো। বললেন স্যার জর্জ।
-হ্যাঁ, বলে উঠলেন লর্ড মেফিল্ড, তার আচরণে অস্বাভাবিকতা সহজেই চোখে পড়ে। প্রয়োজন হলে বিদেশ দপ্তরে তার সম্পর্কে বিস্তারিত খবর জানা যেতে পারে।
–আর তার ওই ফরাসি পরিচারিকাটি–
–মিসেস ভান্দারলিনের সাহায্যকারিণী বলে মনে করতে কোনো বাধা নেই। বললেন স্যার জর্জ।
মেয়েটিকে দিয়ে আর্তচিৎকার করানোটা তার একটা ফাঁদ হতে পারে। বললেন লর্ড মেফিল্ড।