লেডি জুলিয়ার মুখভাব খানিকটা সহজ হল। তিনি ধীরে ধীরে বললেন, হ্যাঁ, সেটা হওয়াই ভালো। একটু থেমে আবার বললেন তিনি, আমাকে আর কিছু জিজ্ঞাসা আছে মঁসিয়ে পোয়ারো।
–না, ম্যাডাম, আপনাকে আর কষ্ট দেব না। ধন্যবাদ।
চেয়ার ছেড়ে উঠে সরাসরি ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন লেডি জুলিয়া।
পোয়ারো ধীর পদক্ষেপে ফায়ারপ্লেসের দিকে এগিয়ে গেলেন। লেডি জুলিয়ার বলে যাওয়া কথাগুলো নিয়েই তিনি মনে মনে নাড়াচাড়া করছিলেন।
এমনি সময়ে জানালা পথে ঘরে ঢুকলেন লর্ড মেফিল্ড।
-কতদূর এগুলেন মঁসিয়ে পোয়ারো।
–খুবই আশাব্যঞ্জক লর্ড মেফিল্ড। আমার তদন্তের কাজ ভালো ভাবেই এগুচ্ছে।
পোয়ারোর উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না লর্ড মেফিল্ড। তিনি আরো বেশি কিছু যেন আশা করেছিলেন। পোয়াবোর মুখভাবও তার কাছে স্পষ্ট নয়। তার মনে হল পোয়ারোকে তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না।
লর্ড মেফিল্ডকে উদ্দেশ্য করে পোয়ারো আবার বললেন, ঠিক যেমনটি আশা করেছিলাম। অবিশ্বাসের ছোঁয়া লর্ড মেফিল্ডের গলায়।
–আপনার অতিথিদের আশু বিদায় জানাবার ব্যবস্থা করা যায়? বললেন পোয়ারো।
–তা করার অসুবিধা বিশেষ হবে না, মনে হয়। আমার লন্ডন যাবার একটা অজুহাত দেখানো যেতে পারে, তাহলে মনে হয় অতিথিরা এখান থেকে চলে যাওয়ার কথাই ভাববেন।
-তাহলে সেরকমই একটা ব্যবস্থা করন। এটা একটা ভালো ব্যবস্থাই মনে হয়, কেউ অসম্মানিত বোধ করবেন না।
লর্ড মেফিল্ড বললেন, আপনার উপদেশ মতো তাহলে সেই ব্যবস্থাই করা যাক।
একটু ইতস্ততঃ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
.
মধ্যাহ্নভোজের পরেই অতিথিরা বিদায় নিতে শুরু করলেন। বাড়ির সামনে দুটো গাড়ি দাঁড় করানো। ক্যারিংটনরা যাবেন তাদের নিজস্ব মরিস গাড়ি করে।
লর্ড মেফিল্ডের রোলস তৈরি রয়েছে, মিসেস ভান্দারলিন আর মিসেস ম্যাকাট্রার জন্য। তারা যাবেন ট্রেনে। গাড়ি তাদের স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসবে।
পোয়ারো হলের মধ্যে দাঁড়িয়ে অতিথিদের বিদায় পর্ব দেখছেন।
বিদায় নেবার সময় মিসেস ভান্দারলিন লর্ড মেফিল্ডকে বললেন, এমন একটা বিদঘুঁটে পরিস্থিতির মধ্যে আপনাকে রেখে যেতে হচ্ছে বলে খুবই খারাপ লাগছে। আশা করছি সব কিছুরই সুষ্ঠু সমাধান হয়ে যাবে।
লর্ড মেফিল্ডের হাতে মৃদু চাপ দিয়ে তিনি রোলস গাড়ির দিকে এগিয়ে গেলেন। মিসেস ম্যাকাট্টাও হল থেকে নেমে তাকে অনুসরণ করলেন।
লিওনি ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছিল। হঠাৎ সে দরজা খুলে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো হল ঘরে।
–ম্যাডামের ড্রেসিংকেসটা গাড়িতে নিতে ভুল হয়ে গেছে।
দ্রুত খোঁজাখুঁজির পালা শুরু হল। মিনিট খানেকের মধ্যেই অবশ্য লর্ড মেফিল্ড কেসটা খুঁজে পেলেন একটা পুরনো আলমারির আড়ালে। তুলে দিলেন লিওনির হাতে। খুশি হয়ে সে ছুটল গাড়ির দিকে।
খানিক পরেই গাড়ির জানালায় মাথা বাড়িয়ে মিসেস ভান্দারলিন চিৎকার করে ডাকলেন, লর্ড মেফিল্ড
গাড়ির কাছে এগিয়ে গেলেন লর্ড মেফিল্ড। মিসেস ভান্দারলিন জানালা গলিয়ে একটা খাম তার দিকে বাড়িয়ে দিলেন।
-কিছু মনে করবেন না, আমার এই চিঠিটা আপনার পোস্ট-ব্যাগে রেখে দিন। শহরে গিয়ে পোস্টবক্সে ফেলতে একদম ভুলে যাব। আমার চিঠি দিনের পর দিন ব্যাগে পড়ে থাকে।
ওপাশে স্যার জর্জ ক্যারিংটনও তাঁর গাড়িতে ওঠার জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। রেগি গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে আছে।
সহসা লেডি জুলিয়া পোয়ারোর দিকে এগিয়ে গেলেন। মৃদুস্বরে বললেন, মঁসিয়ে পোয়ারো, আপনার সঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই।
লেডি জুলিয়া তাকে হাতে ধরে টেনে নিয়ে এলেন একটা ছোট ঘরে। নিজেই ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন।
নিরাসক্ত ভঙ্গিতে সম্মোহিতের মত দাঁড়িয়ে ছিলেন পোয়ারো। লেডি জুলিয়া তার দিকে ফিরে বললেন, আপনি যা বললেন তা কি সত্যি, লর্ড মেফিল্ডের কাগজপত্রগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ?
-হ্যাঁ, ম্যাডাম, ওগুলো খুবই দরকারী।
–সেগুলো যদি তাকে দেবার জন্য আপনার হাতে তুলে দেওয়া হয়, তাহলে বলুন কোনো প্রশ্ন করবেন না, রাজি?
পোয়ারো কোনো জবাব দিলেন না। আরো কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করে রইলেন।
-একটাই শর্ত, বলুন আপনি রাজি, চোরের নাম পরিচয় কিছুই প্রকাশ করা চলবে না।
-বুঝতে পারলাম, শান্ত কণ্ঠে বললেন পোয়ারো, কিন্তু কাগজগুলো কখন ফেরত পাওয়া যেতে পারে; ম্যাডাম?
–বেলা বারোটার মধ্যে অবশ্যই। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। কিন্তু আপনাকেও প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, এ ব্যাপারে কেউ কিছু জানতে পারবে না।
-হ্যাঁ, ম্যাডাম, আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। সংযত কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন পোয়ারো।
–তাহলে সেই মতই ব্যবস্থা করা হবে।
কথা শেষ করেই লেডি জুলিয়া দ্রুত পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। একটু পরেই গর্জন তুলে মরিস গাড়িটা বেরিয়ে গেল।
পোয়ারো ধীর পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চলতে চলতে স্টাডিতে এসে ঢুকলেন। লর্ড মেফিল্ড সে ঘরেই ছিলেন। মুখ তুলে পোয়ারোর দিকে তাকালেন।
পোয়ারো এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দিলেন।
-আপনার জন্য একটা সুখবর নিয়ে এলাম লর্ড মেফিল্ড। আমার কেস শেষ হবার মুখে।
–যথার্থ সুখবর। কিন্তু
পোয়ারো মুখ খুললেন। একটু আগে লেডি জুলিয়ার সঙ্গে তার যে কথাবার্তা হয়েছে, সব খুলে বললেন।